ডেস্ক রিপোর্ট : পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের চেয়ে  অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত, এমন ভাবনা ভেবে এখানে  বিনিয়োগ করে এর উল্টোচিত্র দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। এ খাতের ৪১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এখন ২৩ ফান্ডের ইউনিট এখন অভিহিত দরের চেয়ে নিচে রয়েছে। আর শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যের নিচে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণ হচ্ছে ৮০০ কোটি টাকা। বাজার মূল্যের হিসাবে তা ২০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সে কারণে পুঁজির নিরাপত্তা তো দূরের কথা এ খাতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের এখন চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।

জানা গেছে মূলত দুই কারণে এই ফান্ডগুলোর অগ্রগতি থমকে গেছে। যার একটি হচ্ছে ফান্ডগুলোতে বিনিয়োগ করে লোকসানে থাকায় ভুক্তভোগীদের অনাগ্রহ। অন্যটি বাজারের ভবিষ্যত্ কেমন হবে তা নিয়ে শঙ্কার কারণে ফান্ডগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করা। কিছুদিন আগে সার্বিক বাজার ভালো থাকায় কিছুটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মিউচুয়াল ফান্ড। কিন্তু তা অভিহিত মূল্য অতিক্রম করতে পারেনি। দেখা যাচ্ছে যে ফান্ডগুলোর ইউনিটের দর ৫ টাকা বা ৬ টাকা ছিল তা বড়জোর ৭ টাকা থেকে ৭ টাকা ৫০ পয়সায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানের এসব ইউনিটের দর আবারও নিম্নমুখী। অর্থাত্ ধসের আগে বিনিয়োগ করেছিল তাদের কোনো উপকার হচ্ছে না। অন্যদিকে যারা আইপিওর মাধ্যমে ফান্ডগুলো পেয়েছিল তাদের অবস্থাও করুণ। লাভের আশায় থেকে তারা এখন পুঁজি তুলতে হিমশিম খাচ্ছে। চড়াই-উতরায় পেরিয়ে পুঁজিবাজারে অন্যান্য খাতে মাঝে মধ্যে কিছুটা সুবাতাস এলেও যাদের মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ রয়েছে সেই সব বিনিয়োগকারীর দৈন্যদশা কাটছে না। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী তালিকাভুক্ত ৪১টি ফান্ডের মধ্যে এখনও ২৩টি ফান্ডের ইউনিটের দর অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডে সুদিন আসবে এমন ভেবে অভিহিত মূল্যের নিচে গেলে এই খাতে ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। এখন আমার পুঁজি রয়েছে ৯ লাখের মতো। তিনি বলেন এসব ইউনিটের দর এত নিচে নেমে যাবে ভাবিনি।
তথ্য মতে যেসব মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে সেগুলো হচ্ছে—
গ্রিন ডেল্টা লাইফ এই তালিকায় রয়েছে। একই তালিকায় রয়েছে এফবিএফআইবি, এক্সিম ব্যাংক প্রথম, ইবিএল ফার্স্ব, ডিবিএইচ ফার্স্ব, এআইবিএল ফার্স্ট এবং এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। তালিকায় থাকা অপর ফান্ডটি হচ্ছে প্রথম জনতা মিউচুয়াল ফান্ড। একইভাবে তালিকায় রয়েছে ট্রাস্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এসআইবএল, রিলায়েন্স প্রথম, পপুলার ফার্স্ট এবং প্রাইম ওয়ান আইসিবিএ মিউচুয়াল ফান্ড। তালিকায় আরও রয়েছে পিএইসপি-১, পিএইচ ফার্স্ব, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এমবিএল ফার্স্ব মিউচুয়াল ফান্ড। এছাড়া, এলআরজি গ্লোবাল, এইএফআইসি ইসলামী মিউচুয়াল ফান্ড, আইসিবি ইমপ্লয়ী ফার্স্ট, আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয়, আইসিবি তৃতীয় এনআরবি এসব মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর এখন ৫ টাকা থেকে ১০ টাকার নিচে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থেকে দূরে রয়েছে। ফান্ডগুলো তাদের বিনিয়োগ অন্য কোথায় সরিয়ে নিচ্ছে সন্দেহ করে তিনি বলেন এ কারণে ফান্ডগুলোর দৈন্যদশা কাটছে না।
একই প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের গুরুত্ব অনেক। কিন্তু বর্তমানে ফান্ডগুলোর অবস্থা তেমন ভালো নয়। তিনি বলেন, ফান্ডগুলোর উন্নয়ন নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেমন কাজ করতে হবে তেমনি এখানে যাদের বিনিযোগ রয়েছে তাদেরও ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
(ওএস/এইচআর/অক্টোবর ১০, ২০১৪)