বিশ্বজিৎ বসু, পার্থ থেকে : বাঙালির বার মাসে তের পার্বণ। ১লা বৈশাখ নববর্ষে তুলসী গাছ লাগিয়ে ঝড়া দিয়ে দিয়ে যে পার্বণ শুরু হয় তা শেষ হয় চৈত্র সংক্রান্তিতে বর্ষ বিদায়ে চড়ক পূজার  মধ্য দিয়ে। শহরায়ন, আধুনিক জীবনযাত্রা, প্রযুক্তি উৎকর্ষতা, বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন, ধর্মীয় বিধিনিষেধ প্রভৃতি কারণে সেই তের পার্বণের অনেকগুলোরই হারিয়ে ফেলেছে তার প্রায়োগিক আবেদন। আর কিছু আছে যেগুলো নানা ধরণের রূপ ও লক্ষ্য নিয়ে টিকে আছে। সেগুলোর মধ্যে একটি পৌষ পার্বণ। শহরায়নের কৌলিন্যে পৌষ পার্বণের নতুন নামকরণ পিঠা উৎসব। সেখানে হয়তো আবৃত্তি  হয়, "পৌষ পার্বণের পিঠা খেতে বসে খুলিতে বিষম খেয়ে আরো উল্লাস বাড়িয়াছে যেন মায়ের বকুনি খেয়ে।"

কিন্তু আয়োজন পিঠা উৎসব নামে। প্রাচীন কাল হতে পৌষ পার্বণ পৌষ সংক্রান্তি। এদিন পিঠা উৎসবের দিন।শহরায়নের ফলে পিঠা উৎসব আর এখন শুধু পৌষ সংক্রান্তিতে নেই। এখন শীত কালে সুবিধামত দিনে সুবিধা মত সময়ে আয়েজন হয় পিঠা উৎসবের। বাঙালির পিঠা উৎসব আর এখন দেশের সীমার মধ্যেও গন্ডিবন্ধ নয়। পৃথিবীর যেখানেই বাঙালি আছে সেখানেই পালিত হচ্ছে পিঠা উৎসব। উৎসবটি যেমন দেশের গন্ডির মধ্যে নেই তেমনই সেটা পৌষ মাসেও সীমাবদ্ধ নয়। যখন শীত তখনই পিঠা।

পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে এখন চলছে শীতকাল। তাই এখন এখানে পিঠা উৎসবের শ্রেষ্ঠ সময়। গত শনিবার ২৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পার্থের বাঙালি সেসাইটি ফর পূজা এন্ড কালচারের আয়োজনে পিঠা উৎসব। ঐদিন বাঙালি সেসাইটির সকলের বাড়িতে ছিল পিঠা বানানোর ধূম আর অপেক্ষা চলছিল কখন সন্ধ্যা হবে আর সকলে মিলে উল্লাস করে সে পিঠা খাওয়া হবে।

সন্ধ্যা লাগার সাথে সাথে একে একে সকলে আসতে থাকে ক্যানিংভেল কমিউনিটি সেন্টারে। কিছুক্ষণের মধ্যেই টেবিল ভরে যায় চিতই, ভাঁটা, পুলি, পাটিসাপটা, রসবড়া, পাকান, দুধ চিতই, চুষি নানা ধরণের পিঠাতে। উৎসবের সমন্বয়ক লাভলী দেবনাথ সবাইকে আহ্বান জানান পিঠার স্বাদ নিতে।

পিঠা খাওয়া শেষ হলে শুরু হয় ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সৃজা এবং প্রমিতির সঞ্চালনায় বাঙালি সেসাইটির শিশুশিল্পী অংকন, দিব্য, বেলা, নিমিশা, প্রাণেশ ও বিস্ময় সংগীত পরিবেশন করে। মিতুল দাসের কোরিওগ্রাফীতে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে ত্রয়ী, নিমিশা, রাজশ্রী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমণ্বয়ক ছিলেন প্রমা মজুমদার।

অনুষ্ঠান শেষে বাঙালি সেসাইটির সাধারণ সম্পাদক শর্মিষ্ঠা সাহা শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান ও নতুন সদস্যেদেরকে সকলের সামনে পরিচয় করিয়ে দেন। সব শেষে সভাপতি প্রবীর সরকারের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

(বিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২২)