স্টাফ রিপোর্টার : হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে সর্বস্ব হারিয়ে এখন নিঃস্ব ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তবে তার বিষয়ে সরকার ও দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে কাল-পরশু। আগামীকাল শনিবার সরকারি ছুটির দিনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ খোলা থাকছে। ওই দিনই মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে অপসারণের চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

রবিবার সরকারি দল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে কার্যনির্বাহী সংসদের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা হজ পালন শেষে আজ দেশে আসছেন। মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর হলেও আনু্ষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের উপস্থিতি প্রয়োজন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, সংবিধানের ৫৮(১-ক) ধারা অনুযায়ী, লতিফ সিদ্দিকী রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেই তা গৃহীত হবে। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার অফিস চলা পর্যন্ত লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী জানান, সরকার ও দলের বিপক্ষে প্রকাশ্যে এমন অবস্থানের পর তাঁর সঙ্গে কেউ আর যোগাযোগ করে তাঁকে পদত্যাগের সুযোগ দিতে চান না। সে ক্ষেত্রে সংবিধানের ৫৮(২) ধারা প্রয়োগ করে তাঁকে অপসারণ করা হতে পারে।

ওই ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী যেকোনো সময় তাঁকে পদত্যাগের অনুরোধ করতে পারেন এবং এই অনুরোধ পালনে অসমর্থ হলে তিনি রাষ্ট্রপতিকে ওই মন্ত্রীর নিয়োগের অবসান ঘটাতে পরামর্শ দেবেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, এ প্রক্রিয়ায় তাঁকে অপসারণের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব আজ দেশে ফিরলে তাঁর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

একাধিক মন্ত্রী জানান, আচার-ব্যবহারের কারণে মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রায় সবাই তাঁকে অপছন্দ করতেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও তটস্থ থাকতেন। তিনি যে কাউকে যেকোনো পরিবেশে অপমান করতেন, ধমক দিতেন। এ কারণে মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের নেতাদের কাছে তিনি অপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। এ পরিস্থিতিতে এখন কেউই তাঁর পক্ষে কথা বলছেন না বা সহানুভূতিও দেখাচ্ছেন না।

এদিকে তাঁর পদত্যাগ বা অপসারণের আগেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনানুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে। এ ছাড়া বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন, সেগুলো নিয়েও নড়াচড়া শুরু হয়েছে।

পবিত্র হজ ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে অযাচিত মন্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটূক্তি করায় লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ ও দল থেকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে। নিউইয়র্ক সফর শেষে প্রথমে সিলেটে ও পরে ঢাকায় ফিরে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে অপসারণের কথা বলেন। এ ছাড়া দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বলেই দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি দেশে ফেরার পরই লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক মন্ত্রী ও নেতার সঙ্গে কথা বলে আভাস পাওয়া গেছে, এ মুহূর্তে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নতুন কাউকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর হাতেই থাকছে এ দুটি মন্ত্রণালয়। সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।

একই সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন আছে, মন্ত্রিসভায় কিছু রদবদল হতে পারে। কাকে, কোথায় দেওয়া হবে বা কার মন্ত্রণালয় পরিবর্তন হবে, কেউ বাদ পড়বেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর বাইরে তেমন কেউ জানেন না।

(ওএস/এটিআর/অক্টোবর ১০, ২০১৪)