গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : মৎস্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত গোপালগঞ্জের বিভিন্ন বিল-বাওড় থেকে দেশীয় মাছ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছিল। হারিয়ে যেতে বসেছিল কই, শিং, সরপুঁটি, বোয়ালসহ নানা জাতীয় দেশীয় মাছ। মৎস্য অভয়াশ্রম করে সেখানে দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধি হওয়ায় এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে মৎস্য সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এতদিন জেলার বাজারগুলো দখল করে ছিল পুকুরের কার্প জাতীয় মাছ। অতি সম্প্রতি জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে দেশীয় জাতের নানা ধরনের মাছ। এতে এক দিকে যেমন জেলেরা দেশীয় মাছ বাজারে বিক্রি করে বেশী রোজগার করছেন। আর অন্যদিকে দেশীয় মাছ কিনতে পারছেন ক্রেতারা।

গোপালগঞ্জে ১১৪ টি বিল রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল ও পুকুর। যেখানে প্রাকৃতিক ভাবেই জন্ম নেয় দেশীয় মাছ। স্বাদের কারনে এখানকার উৎপাদিত দেশীয় মাছের সুনাম রয়েছে সর্বত্র। এ জেলায় উৎপাদিত মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়েও ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়ে থাকে। জেলার একটা বড় অংশ মৎস্যজীবী। জেলেরা বিগত কয়েক বছর দেশীয় মাছ তেমন একটা পাচ্ছিলেন না। মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলার কারনে এখন জেলেদের জালে ধরা পড়ছে দেশীয় জাতের বিলুপ্ত প্রায় মাছ। বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় মাছের প্রজনন এলাকা ও তাদের জন্য অভায়শ্রম গড়ে তোলার জন্য ৫ বছর আগে থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে মৎস্য অভায়শ্রম।

কোটালীপাড়ার গোপালপুর মৎস্য অভয়াশ্রমের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম খান জানান, দেশীয় জাতের মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। অভয়াশ্রম গড়ে তোলায় আমরা এখন দেশীয় জাতের বিভিন্ন প্রকার মাছ পাচ্ছি। তিনি জেলায় আরো বেশী করে মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

কোটালীপাড়ার জাঠিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী অনাদী বালা(৬৫), চঞ্চল জয়ধর (৩০) জানান, আমরা বিভিন্ন খাল ও নদী থেকে মাছ ধরে তা বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাই। বেশ কয়েক বছর ধরেই আমরা দেশীয় জাতের মাছ তেমন একটা না পেয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। সরকার আমাদেরকে একটি বেড় জাল দিয়েছে। তা দিয়ে এখন খাল বিলে দেশীয় মাছ ধরে আমরা ভালো আছি।

মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় ছাগল পালনের জন্য ছাগল পেয়েছেন গৌতমেরাবাদ গ্রামের দীপক রায় ও ভবেন রায়। যে সময়ে মাছ কম পাওয়া যায় সে সময়ে তারা ছাগল পালন করে থাকেন। তা থেকেও তাদের ভালো আয় হয় বলে তারা জানান।

মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলায় এখন এলাকায় দেশীয় মাছ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানালেন, কোটালীপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকার। তাছাড়া এলাকায় এখন স্বরপুটি, চিতল, কই,শিং, মাগুরসহ নানা জাতীয় দেশীয় মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। এতে একদিকে জেলার জেলেরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে, অন্যদিকে, যারা বাজার থেকে আগে কার্প জাতীয় মাছ কিনে খেতে বাধ্য থাকতেন, তারা এখন দেশীয় মাছ কিনে খেতে পারছেন।

গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামীম হায়দার জানিয়েছেন, অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাদপদ এলাকার জনগনের দারিদ্র বিমোচন ও জীবিকা নির্বাহ নিশ্চিতকরন প্রকল্পের আওতায় মৎস্য অধিদপ্তর এ প্রকল্পটি হাতে নেয়। এলাকার মানুষ এ প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছে বলেও তিনি জানালেন। তিনি জানান, জেলায় ১০ টি মৎস্য অভয়াশ্রম রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় মাছ ধরার জাল বিনিময়, মুক্তজলাশয়ে পোনামাছ মজুদ, জলাশয় পুনঃ খনন এবং বিকল্প আয় বর্ধক কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রশিক্ষন প্রদান ও মৎস্য চাষী ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে উপকরন সহায়তা বিতরন করা হযে থাকে।

এলাকায় দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে আরো বেশী পরিমান মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলার প্রতি জোর দিয়েছেন জেলার মৎস্যজীবি ও মৎস্য সংশ্লিষ্টরা।

(এমএইচএম/জেএ/অক্টোবর ১১, ২০১৪)