জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : কর্ণফুলীর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেলিম ওয়াহিদ, গত (১৮ সেপ্টেম্বর) নিজের বাইকে করে রওয়ানা হন চট্টগ্রাম নগরীর সাগরিকা মোড়ের উদ্দেশে। গন্তব্য পৌঁছে তিন কাষ্টমস একাডেমী সংলগ্ন ‘এম কর্পোরেশন’ নামক জাহাজ ও টলি গাড়ির পার্স বিক্রির দোকানে। ওই দোকান থেকে তিনি ক্যাশ মেমো করে ১৪ হাজার ১৭০ টাকার (গার্ডার ও চ্যানেল) জিনিসপত্র কিনলেন। পরে এ সমস্ত জিনিসগুলো তাঁর মোটর সাইকেলে নেওয়া সম্ভব নয় বলে মোড়ে দাঁড়ানো একটি সিএনজি ডাক দিলেন।

সিএনজিতে সদ্য ক্রয় করা মালামাল রেখে ড্রাইভারকে পতেঙ্গা আব্বাস পাড়া বেড়িবাঁধ যাওয়ার জন্য বলে পিছু পিছু বাইকে আসতে লাগলেন। কিন্তু কিছু দুর আসার পর বৃষ্টি ও জ্যামের কারণে সিএনজি হারিয়ে যায়। ভাগ্যক্রমে সিএনজিতে মালামাল গুলো তুলে দেওয়ার সময় সিএনজি গাড়ির নম্বর প্লেটের ছবি তুলে রেখেছিলেন সেলিম ওয়াহিদ।

এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর নির্দিষ্ট গন্তব্যেও সিএনজির দেখা না পেয়ে ট্রাফিক পুলিশের শরনাপন্ন হন তিনি। সিএমপি ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের টিআই (প্রশাসন) অনিল বিকাশ চাকমার সরকারি নম্বরে বিস্তারিত জানিয়ে হেল্প চাইলেন। সাথে সাথে টিআই সিএনজি গাড়ির নম্বর মেসেজ করতে বলেন। পাঠিয়ে দিলেন চট্টমেট্টো-থ ১৩-১৪১২।

ঘটনার দুই ঘন্টার মাথায় পাহাড়তলি সাগরিকা মোড়ের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে সিএনজিটি শনাক্ত করলেন ট্রাফিক পুলিশ। পরবর্তীতে ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ ডাটাবেজের মাধ্যমে সিএনজির মালিক এবং ড্রাইভারকে শনাক্ত করে হারানো মালামাল উদ্ধার করলেন। ভুক্তভোগীকে কল করলেন বিষয়টি জানিয়ে ট্রাফিক পুলিশ শাহীন হোসেন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ি সেলিম ওয়াহিদের স্বস্তি ফিরে। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে ট্রাফিক পুলিশ কোন লিখিত অভিযোগ কিংবা জিডি ছাড়া একটা ফোন কলেই হারানো জিনিস উদ্ধার করলেন। কিছুটা অবাক হলেন। মনে মনে ভাবলেন বিদেশের মতো দেশের পুলিশও অনেক উন্নত আজ।

জানতে চাইলে সিএমপি ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের টিআই (প্রশাসন) অনিল বিকাশ চাকমা বলেন, ‘গত রাত ৭টা ১৮ মিনিটের সময় একটা কল আসে সিএনজিতে কিছু টলি গাড়ির পার্স হারিয়েছে বলে। আমি শুধু সিএনজি নম্বরটি মেসেজ করে পাঠাতে বলি। পরবর্তীতে উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দি এর দিকনির্দেশনায় সার্জেন্ট হেপি এবং পুলিশ সদস্য শাহীন হোসেন উক্ত টলি গাড়ির পার্স উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের হাতে তুলে দিই।’ পরে জেনেছি গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ৭ টার দিকে জনৈক মোঃ সেলিম ওয়াহিদ সিএনজিতে তার টলি গাড়ির পার্স উঠিয়ে সিএনজির ড্রাইভারকে আব্বাস পাড়া বেড়িবাঁধ যাওয়ার জন্য বলেন। সিএনজির পিছনে মোটরসাইকেলে ছিল। ভুলক্রমে সিএনজি ড্রাইভার অন্য জায়গায় চলে যায়।’

মোহাম্মদ সেলিম ওয়াহিদ বলেন, ‘সিএমপি কর্তৃক ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ ডাটাবেজের সুফল পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ভুক্তভোগী মানুষেরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেয়ে যাচ্ছে তাদের হারানো প্রয়োজনীয় জিনিস। আমি মাত্র ২ ঘন্টায় ফেরত পেলাম। সিএমপি’র ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমের সুফল পেতে শুরু করেছে নগরবাসী।’

সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীরের বিশেষ উদ্যোগে ২০২১ সালে ডিসেম্বরের ৭ তারিখ থেকে শুরু হয় বিশেষ উদ্যোগ ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ যাত্রা। সিএনজিতে নারীসহ সব ধরনের যাত্রীদের নিরাপদের কথা চিন্তা করে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ।

(জেজে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২)