রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশীফে বাংলাদেশ নারী দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আনন্দের বন্যা বইছে সাবিনা-মাসুরার জেলা সাতক্ষীরায়। শহরে ও সবুজবাগে সাবিনাদের বাড়িতে সোমবার বিকেল থেকে খেলা দেখছেন সবাই। ফাইনালে গোল না পেলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার গৌরবে গৌরান্বিত সাবিনার পরিবারসহ ফুটবলের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই। 

সাবিনার মা মমতাজ বেগম বলেন,বাংলাদেশের সাফল্যে তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত। মেয়েটার ধ্যান-জ্ঞান ফুটবলকে নিয়ে। ৮ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় অপরিসীম আনন্দ উপভোগ করছেন তিনি। পিতাহীন সাবিনার বড় বোন সালমা খাতুন। পরিবারের তিনিই এখন কত্রী।

খেলা শেষ হওয়ার পরে সালমা খাতুন বলেন, সারাদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন জয়ের খবরটা কখন আসবে। অবশেষে সন্ধ্যার পরপরই টিভির পর্দায় যখন ভেসে আসল, বাংলাদেশ ৩-১ গোলে জয়ী, তখন মনে হয়েছিল, স্বপ্ন সার্থক হয়েছে আমার বোনটার। সাবিনার সাফল্যের পিছনে প্রয়াত ফুটবলার আকবর আলীর অবদানের কথা তারা কোন দিনও ভুলবেন না বলে জানান।

অপর বোন শিরিনা বলেন, মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে অনেকেরই আপত্তি থাকলেও পারিবারিক পারে সাবিনা পেয়েছে সবারই সহযোগিতা। বড় বোন তাকে সকল খেলায় সঙ্গে নিয়ে যেতো। তবে সফলতা পাওয়ার পর সাংবাদিকদের দৌড় ঝাপ দেখে তিনি বলেন, এর আগে যদি সাংবাদিকরা সাবিনা ও মাসুরার জীবনযুদ্ধ নিয়ে মাঝে মাঝে তুলে ধরতো তাহলে তারা আরো শক্তি পেতো।

প্রতিবেশী নিত্যানন্দ আমিন বলেন, সাবিনার নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ার সাব চ্যাম্পিয়ানশীপ ফুটবলে নেপালের কাঠমুণ্ডুতে দশরথ স্টেডিয়ামে ৩-১ গোলে নেপালকে হারিয়ে দীর্ঘদিন পরে যে জয় বিশ্ববাসি দেখলো তাতে বাংলাদেশ আরো একধাপ ফুটবলে এগিয়ে গেলো।

অপরদিকে, সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতায় নারী ফুটবল দলের অপর খেলোয়াড় মাসুরাদের বাড়িতেও চলছে জয়ের উৎসব। বাবা রজব আলী মাসুরাকে খেলতে দিতে চাইতেন না। কিন্তু স্থানীয় কোচ আকবার আলী ও মা ফাতেমা খাতুনের উৎসাহে নারী দলে শক্ত জায়গা করে নিয়েছেন মাসুরা।

মাসুরার মা ফাতেমা খাতুন জানান, আমরা গরীব মানুষ। ছোটবেলা থেকে মাসুরার খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ দেখে আমি তাকে খেলা চালিয়ে যেতে বলেছিলাম। কোচ আকবার আলীই আমার মেয়েকে এ পর্যন্ত পৌছে দিয়েছে। দূর্ভাগ্য হলো, এতবড় জয় আকবার আলী দেখে যেতে পারলেন না। গত ২ মাস আগে তিনি মারা গেছেন।

সাতক্ষীরা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আরিফ হোসেন প্রিন্স জানান, নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় গর্ব অনুভব করছি। সাবিনা ও মাসুরার মত খেলোয়াড়রা সাতক্ষীরার মাটি থেকে আজ জাতীয় দলে শক্ত জায়গা করে নিয়েছে। তাদের এ সফলতার ধারা অব্যাহত থাকুক।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২)