দীপক চক্রবর্তী


 

পুতুল পূজা করেনা হিন্দু
কাঠ মাটি দিয়ে গড়া,
মৃন্নময় মাঝে চিনম্ময় হেরে
হয়ে যায় আত্ম হারা ।।

হিন্দু বা সনাতন ধর্মালম্বীগন পুতুল পূজা করেনা। করে মূর্ত্তি পূজা। আর এই মূর্ত্তি হলেন এক একটি আরাধ্য দেব দেবীর প্রতিছবি। আর আরাধ্য দেবদেবী হলেন ঈশ্বরের এক একটি অঙ্গ। তাই সনাতন ধর্মালম্বীগন তাদের আরাধ্য দেব দেবতার মধ্যেই খুঁজে পেতে চান ঈশ্বরের প্রকৃত রূপ বা সান্নিধ্য। সনাতন ধর্মালম্বীগন মূর্ত্তি পূজার মধ্যেই পেতে চান আরাধ্য দেবতাকে।

গীতায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন-

যদা যদাহি ধর্মস্য গ্লানী ভর্বতিভারত
অভর্’থানম ধর্মস্য তদান্তনাং সৃজামহ্যম।।
পরিত্রানায় সাধুনাং বিনাশায় চ্ দুস্কৃতাম
ধর্ম সংস্থাপর্নাথায় সম্ভবামি যুগে- যুগে।।

অর্থাৎ- যখনই ধর্মের গ্লানী আর অর্ধম বেড়ে যায় তখনই আমি অবর্তীণ হই। আর অবর্তীণ হয়ে সাধুদের রক্ষা করি, পাপীদের বিনাশ করি আর ধর্মকে রক্ষা করি।

ঠিক তেমনি, মহা প্রলয়ের পর বিষ্ণু সারা বিশ্ব আর্কষণ করিয়া যখন মহাসমুদ্রের উপর মহামায়ার প্রভাবে নিদ্রামগ্ন ছিলেন, তখন তাহার নাভি হইতে একটি লাল সমেত পদ্মের আর্বিভাব হয়। তাহার উপর ব্রম্মা বসিয়া ছিলেন। তখন বিষ্ণুর কর্ণমল হইতে “মধু ও কৈটভ” নামে দুই দৈত্য বাহির হইয়া তাহাকে আক্রমন করিলে তিনি বিষ্ণুকে জাগ্রত করিবার জন্য মহামায়ার স্তব করেন। তখন মহামায়া বিষ্ণুর শরীর হইতে বাহির হইয়া তাঁহাকে বর দেন। ঠিক তখন অসুরদের বিনাশের জন্য চ-িকা দেবী মহামায়ার আর্বিভাব হয়। তিনি ব্রম্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বও এই তিন হইতে অভিন্না, যাঁহার চরণ কমল রতœখচিত নুপূও দ্বারা শোভিত, তিনি কোমরের কাঞ্চী এবং রতœময় বস্ত্র হার দ্বারা শোভাময়ী হইয়াছেন, শূল প্রভৃতি সহ¯্র অস্ত্রে যাঁহার বাহুগুলি শোভা পাইতেছে, যাঁহার বদন উন্নত এবং স্তনযুগল স্ফীত, যিনি মÍকে অমৃতরশ্মি-বিচ্ছুরণকারী রতœমুকুট ধারণ করিয়াছেন, যিনি তিনটি নয়ন দ্বারা উজ্জ্বলা, তিনি হলেন নীলবর্ণবিশিষ্ট্য, অভীষ্ট প্রদায়িনী, মহেশপ্রিয়া দেবী দূর্গা।

জয় ত্বং দেবী চামুন্ডে জয় ভ’তার্ত্তিহারিণি।
জয় সর্ব্বগতে দেবী কালরাত্রি নমোহস্তুতে।।
জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রাকালী কপালিনী।
দূর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোহস্তুতে।।

তিনি হলেন দেবি চামু-ে! যিনি জীবগনের দুঃখবিনাশিনী; সর্ব্বব্যাপিনী অর্থাৎ, সর্ব্বজীবে অবস্থিত, তিনি ( প্রলয় কালে) সৃষ্টিসংহারিনী, কালরাত্রি, জয়ন্তী, অর্থাৎ সর্ব্বোৎকৃষ্টা, তিনি মঙ্গলা অর্থাৎ মোক্ষ প্রদায়িনী, যিনি সর্ব্বসংহারিনী কালী, ভক্ত মঙ্গলদায়িনী , প্রলয়কালে ব্রম্মা প্রভৃতিকে নিহত করিয়া তাঁহাদের মাথার খুলি (কপাল) হাতে করিয়া নৃত্য করিয়াছিলেন বলিয়া তিনি কপালিনী। বহু কষ্টে তাঁহাকে লাভ করা যায় বলিয়া তিনি জগজ্জননী দেবী দূর্গা, তিনি আবার শিবা অর্থাৎ চৈতন্যময়ী, ক্ষমা অর্থাৎ দয়াময়ী। বিশ্বধারনকারিনী, স্বাহা ও স্বধা। তিনি হলেন চন্ডিকা দেবী মহামায়া ।

ওঁ সর্ব্ব মঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তুতে।।
ওঁ সৃষ্টি-স্থিতি-বিনাশানাং শক্তিভ’তে সনাতনি।
গুনাশ্রয়ে গুণময়ি নারায়ণি নমোহস্তুতে।।
ওঁ শরণাগতদীনার্ত্ত- পরিত্রাণায়-পরায়ণে।
সর্ব্বস্যার্ত্তি হরে দেবি নারায়ণি নমোহস্তুতে।।

সারা বাংলা যাঁর পূজার উৎসবে মেতে ওঠে, যাঁর কাছে সম্পদের জন্য চায় বর, শত্রু দমনের জন্য চায় শক্তি,বিপদে চায় অভয়, আর মরনে চায় মোক্ষ- সেই জগজ্জননী মহাদেবী চন্ডীর কাহিনী জানতে কার না সাধ হয় ? তাই জগজ্জননী চন্ডীকা দেবী মহামায়ার কাহিনী তুলে ধরছি--

পৃথিবীতে এমন এক যুগ ছিলো যখন পাপ বলতে কিছুই ছিলনা। ছিল শুধুই পূণ্য অর্থাৎ ধর্ম। সেই যুগের নাম ছিল সত্য যুগ। তারপর কিছু কিছু পাপ আসতে আরম্ভ করে এই সংসারে। যে সময়টার চার ভাগের তিন ভাগ ছিল ধর্ম, আর এক ভাগ ছিল অধৃম, সেই যুগের নাম ত্রেতা যুগ। তার পওে পাপ পূণ্য সমান , সেই যুগের নাম দ্বাপর যুগ। আর এখন কলিযুগ, এতে অর্ধমই বড়, অর্থাৎ তিন ভাগ অর্ধম,আর এক ভাগ ধর্ম। এই সত্য, ত্রেতা,দ্বাপর আর কলি যুগকে এক সঙ্গে বলে দিব্যযুগ। ৪৩ লক্ষ ২০ হাজার বছওে এক একটি দিব্যযুগ। আর এরকম ৭১টি দিব্য যুগ ধওে পৃথিবীতে রাজত্ব করেন এক একজন মনু।

প্রত্যেক মনু যতোকাল ধওে পৃথিবীতে রাজত্ব করেন, সেই সময়টার নাম এক এক মন্বন্তর। পর-পর ১৪ জন মনু এমনি ভাবে রাজত্ব করার পর সৃষ্টিকর্তা ব্রম্মার মাত্র একদিন যায়। লোপ পেয়ে মহাপ্রলয় হয়। ব্রম্মার এইরূপ প্রতিদিনকে এক একটি সৃষ্টি কল্প বলে ধরা হয়। ১৪জন মনুর নাম হলো - (১) স্বায়ম্ভুব, (২) স্বরোচিষ, (৩) ঔত্তম, (৪) তামস, (৫) চাক্ষুষ, (৬) বৈবস্বত, (৭) সাবর্ণি, (৮) দক্ষসাবর্নি, (৯) ব্রহ্ম সাবর্ণি, (১০) রুদ্রসাবর্ণি, (১১) ধর্ম্মসার্বণি, (১২) দেবসাবর্ণি বা রৌচ্য (১৩) ইন্দ্রসাবর্ণি বা ভোত্য ও (১৪) রৈবত।

আমাদের পৃথিবীতে এ পর্যন্তু রাজত্ব করেছেন ছয় জন মনু। আর এখন চলছে সপ্তম মনুর রাজত্ব অর্থাৎ বৈবস্বত মনুর রাজত্ব। আর অষ্টমবারে রাজা হবেন সূর্য পুত্র সাবর্ণি। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় মনুর রাজত্বেও সময়ে সুরথ নামের এক রাজা দেবী চন্ডীকে আরাধনা ও তপস্যায় তুষ্ট কওে দেবীর বওে ৭১ দিব্যযুগ ধরে পৃথিবী অধিকার কওে থাকবেন বৈবস্বত মনুর রাজত্বকাল শেষ হলে – এই ব্যবস্থা হয়ে আছে।

যে দেবী চন্ডিকার বওে সুরথের এমন ভাগ্য হলো সেই চন্ডিকার লীলাকাহিনীই বলা হলো-- দ্বিতীয় মনু স্বারোচিষ যখন ছিলেন সারা পৃথিবীর অধীশ্বর তখন তার বড় ছেলে চৈত্রের বংশে সুরথ নামের এক রাজা ছিলেন। সুরথ প্রজাদেরকে ভালোবাসতেন ছেলের মতো। কিন্তু তাহলে কি হয় ? ভালো মানুষের ও শত্রুর অভাব নেই। একদল যবন জোর করে সুরথের কোলা নামক শহরটি ভেঙ্গে চুরে বিধ্বস্ত কওে ফেললো। সুরথ খুব প্রবল রাজা ছিলেন। তবুও ভাগ্যেও কি নির্মম পরিহাস যুদ্বে যবনদের কাছে হেরে ফিওে আসতে হলো রাজধানীতে।

ভাগ্য তখন বিরূপ, তাই রাজধানীতেও শত্রু হয়ে দাঁড়ালো সব। মন্ত্রী, সেনাপতি সকলে মিলে রাজকোষের সব টাকাকড়ি লুট করে নিলো। রাজা তখন সব হারিয়ে মনের দুঃখে বনে চলে গেলেন। বনে-বনে ঘুরতে-ঘুরতে রাজা এক তপোবন দেখতে পেলেন। মেধা নামে এক মুনি তাঁর শিষ্যদের নিয়ে তপোবনে থাকেন। রাজাকে দেখে মুনি খুব আদর আপ্যায়ন করলেন্ । রাজা রয়ে গেলেন সেই তপোবনে মুনির আশ্রমে। মুনিও তাকে খুব খাতির করেন। কিন্তু কিছুতেই রাজার মন ভরে না। রাতদিন রাজা কত কথাই না ভাবেন্ । এমন সময় একদিন একটি অচেনা লোক এসে হাজির হলো মুনির আশ্রমে। লোকটি নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন তার স্ত্রী পুত্ররাই সমস্ত টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে বাড়ি থেকে। রাজা ভাবলেন ভগবান তার ব্যথীকে এনে দিয়েছেন। তখন রাজা মুনির নিকট গেলেন। সব ঘটনা খুলে বললেন্। রাজার কথা শুনে মুনি বললেন- সব দেবী মহামায়ার মায়া। দেবী মহামায়া যে এই সংসারের জীবদেরই বশে রেখেছেন তা নয়। স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবানও কখনও কখনও তাঁর মায়ায় বশ হয়ে থাকেন। দেবী মহামায়াই জগৎকে ভুলিয়ে রেখেছেন। তিনি বিশ্ব সংসার সৃষ্টি করেছেন, তিনি জগতের জননী। তিনি পূর্বেও ছিলেন, এখনও আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।

মহাপ্রলয়ে সারা সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে গেছে। বিশ্ব সংসার ডুবে রয়েছে প্রলয় সাগরে। সেই সাগর জলে অনন্ত নাগের উপর শুয়ে আছেন ভগবান বিষ্ণু। যোগনিদ্রাকে আশ্রয় করে তিনি গভীর নিদ্রায় মগ্ন। তাঁর নাভি থেকে একটি পদ্মফুল জন্মেছে। আর সেই পদ্মের উপর বসে আছেন ব্রহ্মা। হঠাৎ বিষ্ণু কানের মল থেকে বেরিয়ে এলো দুই অসুর। তাদের এটির নাম মধু ও অপরটির নাম কৈটভ। তারা সামনে ব্রহ্মাকে দেখেই তাঁকে মারতে গেলো। ব্রহ্মা দেখেন খুব বিপদ। ব্রহ্মা তখন যোগমাযার স্তব স্তুতি আরম্ভ করলেন।

সা ত্বমিথুং প্রভাবৈঃ স্বৈরুদারৈর্দ্দেবি সংস্তুতা।
মোহয়ৈতৌ দূরাধর্ষাবসুরৌ মধুকৈটভৌ।।
প্রবোধঞ্চ জগৎস্বামী নীয়তামচ্যুতো লঘু।
বোধশ্চ ক্রিয়তামস্য হন্তমেতৌ মহাসুরৌ।।

হে দেবী! তুমি নিজের অলৌকিক মহিমা দ্বারা স্তুত হইয়া এই দূদর্ধর্ষ দুই অসুরকে মোহিত কর। জগতের স্বামী বিষ্ণুকে শীঘ্রই জাগ্রত কর। এই দুই অসুরকে বধ করিবার জন্য ইহার প্রবৃত্তি জাগাইয়া তোল।

এবং স্তুতা তদা দেবী তামসী তত্র বেধসা।
বিষ্ণোঃ প্রবোধনার্থায় নিহন্তুং মধুকৈটভ।
নেত্রাস্যনাসিকাবাহু- হৃদয়েভ্রস্তথোরসঃ।।
নির্গম্য দর্শনে তস্থৌ ব্রহ্মণোহব্যক্তজন্মনঃ ।।

যোগনিদ্রা দেবী ব্রহ্মার স্তবে সুষ্ট হইয়া দৃষ্টিগোচর হইলেন। বিষ্ণু তখন জেগে দেখেন দুই দৈত্য ব্রহ্মাকে আক্রমন করতে চলেছে। তিনি সেই অসুরদের মারবার জন্য শুধু হাতেই আক্রমণ করলেন। শুরু হলো তুমুল যুদ্ধ। পাঁচ হাজার বছর কেটে গেলো সেই যুদ্ধে। মহামায়ার মায়ায় মুগ্ধ দুই অসুর বিষ্ণুকে বললো- তুমি তো চমৎকার যুদ্ধ করতে পারো। বলো আমাদের কাছে কবর চাও ?

বিষ্ণু বললেন - তোমরা যদি আমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে থাকো, তাহলে আমার হাতে তোমরা মর! অসুরেরা তখন বিপদ বুঝতে পারলো। অসুরেরা বললো হ্যাঁ আমরা তোমার হাতে মরতে পারি। যদি জল ছাড়া অন্যত্রে বধ করতে পারো। বিষ্ণু অসুরদের চুলের মুঠি ধরে নিজের উরুর উপর রেখে চক্র দিয়ে মাথা কেটে ফেললেন। এই ভাবে ব্রহ্মার স্তবে মহামায়ার আর্বিভাব হয়েছিলো।

আর একবার দেবীর আর্বিভাব হয়েছিলো মহিষাসুর ও তার সৈন্য বধের জন্য। এখন সেই উপাখ্যানই তুলে ধরছি-
একবার দেবতাদের রাজা ইন্দ্র ও অসুরদের রাজা মহিষাসুরের সাথে একশ বছর ধরে যুদ্ধ হয়েছিলো। সেই যুদ্ধে দেবতারা হেরে গেলেন। তখন সকল দেবতারা র্স্বগ ছেড়ে মর্ত্তে ঘুরতে লাগলেন। একদিন তারা সকলে মিলে ব্রহ্মার নিকট সব কথা বলেন। তখন ব্রহ্মা দেবতাদের নিয়ে মহাদেব আর বিষ্ণু যেখানে ছিলেন সেখানে গিয়ে হাজির হলেন।
তাঁরা নিজেদের পরাজয় আর দুঃখের কথা খুলে বললেন। অসুরদের অত্যাচারের কথা শুনে মহাদেব আর বিষ্ণু রাগে জ্বলতে লাগলেন। সেই রাগে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব ও অন্যান্য দেবতাদেও শরীর দিয়ে আগুনের মতো তেজরশ্মি বেরুতে লাগলো। সেই তেজ ক্রমশ জমাট বেঁধে পাহাড়ের মতো হলো। দেবতারা দেখলেন সেই জমাট বাঁধা আলো থেকে একটা দেবী র্মূত্তির আকার ধারন করলো। এক একটা দেবতার তেজ থেকে দেবীর এক একটি অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ হলো। দেবতারা নিজেদের অস্ত্র থেকে আর একটা করে অস্ত্র তৈরী করে দেবীর হাতে তুলে দিলেন। হিমালয় দিলো বাহন সিংহ। এইভাবে সজ্জিত হয়ে দেবী ভগবতী চারিদিকে হাজার হাত মেলে ধরলেন। তখন দেবী অট্টহাস্য করে উঠলেন। সেই হাসির শব্দে র্স্বগ,মর্ত্ত্য, পাতাল ত্রিভ’বন কেঁপে উঠলো। সেই হাসির শব্দ অসু দের কানে পৌঁছলে , অসুরদের রাজা মহিষাসুর বিপুল সৈন্য সামন্ত নিয়ে ছুটে গেলো।

অসুরদের বড়-বড় চিক্ষুর, চামর, মহাহনু, বিড়ালাক্ষ রথ, হস্থী নিয়ে দেবীকে আক্রমণ কররো। আর ডোমর, ভিন্দিপাল,শক্তি নানা অস্ত্র দেবীকে লক্ষ্য করে ছুঁড়তে লাগলো।

দেবী ভগবতী চন্ডী নিজের বাণে অসুরদের অস্ত্র ঘুলি কেটে ফেললেন। দেবীর বাহন সিংহ ঝাঁপিয়ে পড়লো অসুরদের উপর। দেবী, তাঁর বাহন সিংহ ও গনদেবতাদের আক্রমণে অসুরেরা কাতারে- কাতাওে মরতে লাগলো। দেবতারা দেবীর উপর পুষ্প বৃষ্টি করতে লাগলো। বাণে-বাণে ছেয়ে ফেললো দেবীকে। দেবী সে বাণ কেটে ফেললেন। দেখতে-দেখতে দেবীর অস্ত্রে অসুরের রথের সারথী ও ঘোড়া নিহত হলো। রথ হীন মহিষাসুর ঢাল- তলোয়ার নিয়ে দেবীর দিকে ছুটে এলো। কিন্তু তার তরবারি দেবীর শূলের আঘাতে টুকরো-টুকরো হয়ে গেলো। সেই শূলে চিক্ষুর প্রাণ হারালো। তারপর এলো চামর হাতীর পিঠে চড়ে। সে দেবীর দিকে এক শক্তি ও শূল ছুঁড়ে মারলো। দেবী শুধু হুংকার শব্দ করেই সে শূলটি নষ্ট কওে দিলেন। তখন সিংহ লাফ দিয়ে চামরের মুন্ডু ছিঁড়ে ফেললো। এমন করে উদগ্র, বাস্কল, উদ্ধত, করাল, অন্ধক ও তাম্র দেবীর সাথে যুদ্ধ কওে প্রাণ হারালো।

এইবার মহিষাসুর নিজেই ছুটে এলেন মহিষের রূপ ধরে। সেই মহিষের ক্ষুরের, মুখের ও শিঙ্গের আঘাতে গনদেবতারা লুটিয়ে পড়তে লাগলেন। মহিষাসুরের ক্ষুরের আঘাতে মেঘে-মেঘে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। তার অগ্নীজ্বালাময় নিশ্বাসের বেগে ত্রিভুবন কেঁপে উঠলো। দেবী তখন তাকে পাশে বেঁধে ফেললেন। অমনি সে হয়ে গেলো সিংহ। সিংহকে কেটে ফেলতেই মানুষ হলো। মানুষটিও দেবীর বাণে কাটা পড়লো। তখন সে হাতীর রূপ ধরে দেবীর সিংহকে শুড় দিয়ে ধরে টানতে লাগলো। দেবী তলোয়ার দিয়ে হাতীর শুড় কেটে দিলেন। তখন সে আবার মহিষের রূপ ধরল্।ো মহিষাসুর শিঙ্গ দিয়ে পাহাড় পর্ব্বত উপড়ে দেবীর দিকে নিক্সেপ করতে লাগলো। দেবী তখন মধু পাত্র হাতে নিয়ে একটু হেসে বললেন---

“এই মধু পান আমি
করি যতক্ষণ,
ততোক্ষণ যতো ইচ্ছা
করো গর্জণ ।”

এই বলেই তিনি মধু পান করেই বিকট অট্টহাস্য করে লাফ দিয়ে মহিষের পিঠে চড়ে পা দিয়ে তার গলা চেপে ধরলেন। তার পর বুকে শূল বিঁধিয়ে দিলেন, অমনি অসুর তার নিজ মুর্ত্তি ধরে মহিষের বক্ষ থেকে বেরিয়ে পড়লো অর্ধেকটা। দেবী তখন তলোয়ার দিয়ে তার ঘাড়ে কোপ দিতেই তার মাথা লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। অন্য অসুরেরা ভয়ে ছুটে পালালো।

দেবতাদের তখন আনন্দ দেখে কে। তাঁরা সকলে মিলে দেবীর স্তব আরম্ভ করলেন---

নমো দেব্যৈ মহাদেব্যৈই শিবায়ৈ সততং নমঃ।
ওঁ নমঃ প্রকৃত্যৈ ভদ্রায়ৈ নিয়তাঃ প্রণতাঃ স্মতাম্॥
রৌদ্রায়ৈ নমো নিত্যায়ৈ গৌর্য্যৈ ধাত্র্যৈ নমো নমঃ।
জ্যোৎস্নায়ৈ চেন্দুরূপিণ্যৈ সুখায়ৈ সততং নমঃ।।
যা দেবী সর্ব্বভ’তেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
যা দেবী সর্ব্বভ’তেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।

দেবতারা বলেন – মা তুমি আমাদের ঘোর শত্রুকে বিনাশ করেছো । তাতেই আমাদের সকল বিপদ কেটে গেছে। এখন আমাদের প্রার্থণা বিপদে পড়লে যেন এমনি ভাবেই তোমার কৃপাশক্তি পাই। আর তোমার স্তব যে পাঠ করবে তার দুঃখ, কষ্ট দূরে গিয়ে ধন সম্পদ লাভ হয়। দেবী- তথাস্থ বলে মহাশূণ্যে মিলে গেলেন।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।