রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতে দায়েরকৃত দুটি চেক ডিজঅনারের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় ভারতে পারিয়ে যাওয়া আসামী বড় ভাই মেহেদী হাসান রনি সেজে জামিন নিতে এসে ৬ ঘণ্টা আটক থাকলেন ছোট ভ্ইা জাহিদ হাসান। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ রাখিবুল ইসলাম কাঠগড়া থেকে তাকে আটকের নির্দেশ দেন। বিকেল ৫টার দিকে তাকে নিজের কৃতকর্মের জন্য সতর্ক করে মুক্তি দেওয়া হয়।

আটক হওয়া জাহিদ হাসান সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের কাজলা কাশিবাটি গ্রামের আব্দুর রউফ সরদারের ছেলে।

সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত থেকে জানা যায়, কালিগঞ্জ উপজেলার কাজলা কাশিবাটি গ্রামের সৈকত হ্যাচারী এণ্ড নার্সারীর স্বত্বাধিকারী মেহেদী হাসান রণি ইসলামী ব্যাংক কালিগঞ্জ শাখা থেকে ১৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মেহেদী হাসান রণির বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের সিআর -৩৩৯/১৯ মামলা করেন সাতক্ষীরার আমলী আদালতে। পরিবর্তীতে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে মামলাটি বিচারের জন্য যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। যার সেশনস মামলা নং ৭৯৪/২০। একইভাবে নলতা ইউনিয়নের পাইকাড়া গ্রামের আবু ইসলাম সওদাগরের ছেলে মোস্তফা ইউনুছ আলীর কাছ থেকে সাত লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা ধার করে নিয়ে পরিবর্তে চেক দেন মেহেদী হাসান রণি। ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় মোস্তফা ইউনুছ আলী ২০২০ সালের ৫ জুন আমলী আদালতে মেহেদী হাসান রনির নাম উল্লেখ করে সিআর ১৫৮/২০ নং মামলা দায়ের করেন। সমন পেয়ে আসামী হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারের জন্য পাঠানো হয়। যার সেশন মামলা নং ৭২৩/২১।

সূত্রটি আরো জানায়, মঙ্গলবার ছিল উপরোক্ত দুটি চেক ডিজঅনারের মামলার ধার্য দিন। আসামী মেহেদী হাসান রনির পরিবর্তে তার ভাই জাহিদ হাসান মঙ্গলবার জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. ইয়ারুল হকের মাধ্যমে যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতে জামিন আবেন করে। এ সময় আদালতে উপস্থিত ইসলামী ব্যাংকের কালিগঞ্জ শাখার কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে কাঠগোড়ায় দাড়ানো আসামী মেহেদী হাসান রণি নন। তখন বিচারক আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. ইয়ারুল হককে আসামী সম্পর্কে কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বলেন। এরপর আইনজীবী ইয়ারুল হক আসামীর সঙ্গে কথা না বলেই আদালত ত্যাগ করেন। এ সময় আলমগীর হোসেনকে কাঠগোড়ায় দাড়ানো আসামী যে মেহেদী হাসান রণি নন তা প্রমাণ করতে বলেন। একপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ফোন করে লোন নেওয়ার সময় মেহেদী হাসান রনির ছবি পাঠাতে বলা হয় মোবাইলের হোয়াটসএপে। আদালত ওই ছবি পেয়ে আসামীর কাছে জানতে চাইলে সে মেহেদী হাসান রণি নন বলে জানান। তখন তিনি কাঠগোড়ায় থাকা আসামাীকে আটকের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। বিকেল ৫টায় নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় আগামিতে এ ধরণের অপরাধমূলক কাজ থেকে সতর্ক করে মুক্তি দেন বিচারক।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতে বড় ভাই মেহেদী হাসান রণির পক্ষে প্রক্সি দিয়ে জামিন নিতে আসা জাহিদ হাসান বলেন, বড় ভাই আড়াই বছর আগে ভারতে পালিয়ে গেছে । তাই কয়েকজনের সঙ্গে পরামর্শ করে ভাইয়ের পরিবর্তে নিজে জামিন নিতে আসেন।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. ইয়ারুল হক জানান, প্রকৃত আসামীকে চেনেন না তিনি। বড় ভাইয়ের পরিবর্তে ছোট ভাই জাহিদ হাসান জামিন নিতে এসেছে এটাও তাকে বলা হয়নি। তবে অপরাধ স্বীকার করায় ও ভাল হওয়ার সুযোগ দিতে বিচারক তাকে মুক্তি দিয়েছেন।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২)