মারুফ সরকার, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের পিছিয়ে পড়া নারীদের পাশে দাঁড়াতে ও সংগঠিত আগামী ১৭ অক্টোবর২০২২ অনুষ্ঠিতব্য জেলা পরিষদের নির্বাচনে সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীতায় মাঠে নেমেছেন আত্মপ্রত্যয়ী ও নির্যাতিত নারী নেত্রী তানমির সুলতানা রনিতা। যিনি নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে জীবনের সাথে লড়াই সংগ্রাম করে রাজনৈতিকভাবে নিজেকে বিকশিত করেছেন। যিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেই এলাকায় রেখেছেন রাজনীতির উজ্জ্বল স্বাক্ষর এবং যিনি তার দুরদর্শিতা ও সাহসীকতা দিয়ে সিরাজগঞ্জের রাজনৈতিক ময়দানে স্থাপণ করেছেন জলন্ত দৃষ্টান্ত।

সিরাজগঞ্জের আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি যেমন স্বয়ং নিজে নির্যাতিত হয়েছেন ঠিক তেমনি তিনি যে পরিবারের বধু হয়েছেন সে পরিবারটিও আওয়ামী ঘরোনার রাজনীতি করতে গিয়ে হামলা-মামলা, জেল-জুলুম-হুলিয়া ও নানাবিধ নির্যাতিতসহ মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছেন। সংঘটিত হওয়া নির্যাতনের বর্ননা দিতে গিয়ে নারী নেত্রী তানমির সুলতানা রনিতা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আওয়ামীলীগকে স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তানমির সুলতানা রনিতাসহ তার স্বামী ও স্বামীর পরিবারের সদস্যরা অসংখ্য জুলুম নির্যাতনের শিকার হলেও তারা মাথা নত না করে সাহসী বীরের মতো লড়াই- সংগ্রাম করেছেন আওয়ামীলের দুর্দিনে।

সেইসাথে স্বামী-দেবরের পাশে থেকে সাহস দিয়েছেন ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তানমির সুলতানা রনিতা। এতে বিনিময়ে তিনি তার জীবনে রাজনৈতিকভাবে কোন প্রতিদান নেননি। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো তিনি যতোবারই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও সমাজের পিছিয়েপড়া নারীদের কথা ভেবে যখনই জনসেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছেন ততোবারই তিনি দলীয়ভাবে নানা বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন। তারপরও তিনি কোন লোভ-লালসা না করে মুজিব আদর্শ বুকে লালন ও ধারণ করে আওয়ামীলীগের পতাকা বহন করে নীতি ও আদর্শ দিয়ে দলের প্রতি আনুগত্য থেকে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।

নারী নেত্রী তানমির সুলতানা রনিতা'র রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়,তিনি ১৯৯৭ সালে কৈশোরে মুজিব আদর্শের রাজনীতি শুরু করেই ১৯৯৮ সালের ২৩ শে জুন বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে সফল করতে শত- শত মহিলা নিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানের সফলতার অংশীদারিত্ব গ্রহন করেন। সেখান থেকে তিনি হাটিহাটি পা-পা করে রাজনৈতিক সকল কর্মসূচিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। সে ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে নলকা ফুলজোর ডিগ্রি কলেজ মাঠে জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় তিনি মহিলাদের বিশাল মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগদান করে নেতাদের তাক লাগিয়ে দেন এবং নেতৃত্বের ভুয়সী প্রশংসা কুড়িয়ে নেন।

এমনকি ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে তার গলায় নৌকার ব্যাচ দেখে সেনাবাহিনী তাকে ভোট কেন্দ্র থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এতে তিনি ভয়ে কাতর না হয়ে বরং বীরদর্পে দাঁড়িয়ে থেকে নৌকার কর্মী সমর্থকদের সাহস যোগানের চেষ্টা করেন। এসময় সেনাবাহিনী তখন লাঠিচার্জ করারও ভয় দেখান। কিন্তু সে সময় কোন ভয়ই তাকে দুর্বল করতে পারেনি। উপরোন্ত তিনি দৃঢ় মনোবলে বলিয়ান হয়ে একজন সাহসী নারী বীরের পরিচয় জনসম্মুখে ফুঁটিয়ে তুলেছেন।

এমন সাহসীকতার পরিচয় বহনকারী তানমির সুলতানা রনিতা রাজনৈতিক নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ, হরতাল, মিছিল ও মিটিংয়ে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও তার স্বামী মোজাম্মেল হক (চেয়ারম্যান) হাজার হাজার নেতা কর্মী নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান করে প্রতিটি হরতাল ও অবরোধ পালন করেছেন। এজন্য তাকে বার বার প্রশাসন দিয়ে নানারকমের হয়রানি ও অত্যাচার করা হয়েছে। এমন নানাবিধ অত্যাচারের পরও ২০০৬ সালে মহাসড়কে লগি বৈঠা নিয়ে হাজার হাজার মানুষের নেতৃত্বে আন্দোলন করে বেগম জিয়ার ভোটার বিহীন নির্বাচন রুখে দেওয়ার আন্দোলন বেগবান করে রাজনীতিতে বিরল অবদান রেখেছেন

তানমির সুলতানা রনিতাসহ তার পরিবার। শুধু তাই নয় ২০০৬ সালের ৪ জুলাই, দেশব্যাপি অবরোধ চলাকালীন সময় তার স্বামী মোজাম্মেলকে র‍্যাব তুলে নিয়ে গিয়েছিল,উদ্দেশ্য ছিল ক্রসফায়ার। কিন্তু তাৎক্ষনিকভাবে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মিছিল মিটিংয়ের সাথে স্থানীয় হাজার হাজার সাধারণ নারী-পুরুষ মিছিল সহকারে র‍্যাব অফিসে উপস্থিত হলে জনতার আন্দোলনের মুখে সে সময় র‍্যাব মোজাম্মেলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য

(এমএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২)