রবিউল ইসলাম, গাইবান্ধা : গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে বরিশাল ইউনিয়নের দুবলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও পরিবেশ সাড়া ফেলেছে উপজেলা জুড়ে। স্কুলের অফিস কক্ষে ঢোকার আগেই দরজায় কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ফুলের টব যে কারো নজর কেড়ে নেবে। দরজা জানালায় পর্দা, ফুলের বাগান, দেয়ালে দেয়ালে মনীষীদের ছবি সব কিছু মিলে মনে হবে এটাই তো শিক্ষার পরিবেশ হওয়া উচিৎ। প্রধান শিক্ষকসহ সহকারি শিক্ষকরা এবং শিক্ষার্থীরা যথা সময়েই চলে আসছেন স্কুলে,দেখেই মনে হবে মানুষ গড়ার এক মহান দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছেন শিক্ষকরা।

দুপুরে বাড়ী গিয়ে খেয়ে আসলে পড়ালেখার বিঘ্ন হবে ভেবে প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী সেলিমসহ অন্যান্য শিক্ষকরা সবাই বাড়ী থেকেই আনছেন দুপুরের খাবার। শিক্ষকদের মত প্রত্যেক শিক্ষার্থীও খাবার আনেন বাড়ী থেকে।
মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষার ফলাফল তুলে দেওয়া হয় অভিভাবকদের হাতে।পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী সেলিমসহ সহকারি শিক্ষকরা। প্রায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতের লেখার মান দেখলেই মনে হবে এটা যেন হাতের লেখা সুন্দর করার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

গত বৃহস্পতিবার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে উপজেলায় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হন দুবলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী সেলিম।

বাংলা ৭১ এর সাথে কথা হলে প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী সেলিম জানান, শিক্ষার আঁতুড়ঘর হলো প্রাথমিক শিক্ষা। সেখানে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারলে শিক্ষার্থীর জীবন গড়ে দেওয়া সম্ভব। সেই চিন্তা থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই। সেভাবেই ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। শিশুদের উপযুক্ত দক্ষ মানবসম্পদ ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে,তাই প্রাথমিকে যাতে শিক্ষার্থী ঝড়ে না পড়ে এজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

শিক্ষাজীবনে সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে ভূগোলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি। পরে ২০১৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৬ সালে দুবলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান তিনি।

গোলাম রব্বানী সেলিম বলেন, ছোটবেলা থেকেই চাইতাম শিক্ষক হবো। এরপর বুঝতে শেখার পরে ভেবেছি শিক্ষক হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হবো। কারণ এটা হলো শুরু। এখানে শিক্ষার্থীর মননে যেটা দেওয়া যাবে বাকি জীবন সে সেটাই করতে থাকবে। মনে রাখবে। সেজন্যই যোগ দেই।

তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়েছি ফলে আমাদের বিদ্যালয়ে গত কয়েক বছর ধরে ফলাফল ভালো ছিল। বৃত্তি, সমাপনী সব জায়গায় আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো করেছে। শতভাগ পাস রয়েছে।২০১৮ সালে ১৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ অর্জন করে ইউনিয়নের মধ্যে প্রথম স্থান এবং ২০১৯ সালে শতভাগ শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ অর্জন করে উপজেলার মধ্যে যৌথ ভাবে প্রথম স্থান অর্জন করে বিদ্যালয়টি। যার মধ্যে ৮ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি লাভ করে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সুন্দর হাতের লেখা ও রচনা প্রতিযোগিতায় যথাক্রমে ১ম ও ২য় স্থান অধিকার করে বিদ্যালয়টি।খেলাধুলায় চলতি বছরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উপজেলার মধ্যে প্রথম হয়ে জেলা পর্যায়ে খেলার গৌরব অর্জন করে বিদ্যালয়টি।এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের পোশাক, পরিবেশ, খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন, সংস্কৃতি সবখানে কৃতিত্ব দেখিয়েছে তারা।

তিনি আরও বলেন, শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের যে সম্মান সেটি অনেক বড় পাওয়া। এটি আমাকে আরও ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে। স্কুলের পারফরম্যান্স, আমার পারফরম্যান্স আরও উন্নত করার জন্য উৎসাহ দিয়েছে। এটা আমার জন্য খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।

নিজের সাফল্যের জন্য বিদ্যালয়ের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যমে আমার দায়িত্বটা আরও বেড়ে গেল। এই পেশায় এসেছি ভালোবেসে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের যতটা দেওয়া সম্ভব, তার সবটুকুই দিতে চাই। এজন্য সকলের সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে চাই।

কয়েকজন অভিভাবক বলেন, গোলাম রব্বানী সেলিম একজন শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক। বিদ্যালয়ে তিনি যথেষ্ট সময় দেন। এ ব্যাপারে তিনি অতুলনীয়। শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের যতটা দেওয়ার কথা, তাতে তার কোনও ঘাটতি থাকে না। বরং যতটুকু আশা করা যায়, তিনি তারও বেশি দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নে তার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার হান্নান মন্ডল বলেন, দুবলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিক।

পলাশবাড়ী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমা খাতুন বলেন, অনেকগুলো পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়। এতে সেরা প্রধান শিক্ষক হয়েছেন গোলাম রব্বানী সেলিম। নিজের যোগ্যতাসহ অন্যান্য ফলাফলেও তিনি দক্ষতা দেখিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, দুবলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একাধিকবার গিয়েছি, প্রধান শিক্ষকের আন্তরিকতায় ওই স্কুলে শিক্ষার সুন্দর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

(আরআই/এএস/সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২)