আলম শাহী, দিনাজপুর : দু'শত থেকে পাঁচ'শ টাকায় মুড়ি-মুরকির মতো বিক্রি হয়েছে প্রশ্নপত্র। বিষয়টি জানার পর টনক নড়ে বোর্ড কতৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের। ভূরুঙ্গামারী থানা ও ইউএনও কার্যালয়ে মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দীর্ঘ চার ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরে আটক হয় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযুক্ত তিনজন।

চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের এ ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে। কেন্দ্র সচিবসহ তিন শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ‌ণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, কৃ‌ষি শিক্ষা ও রসায়ন পরীক্ষা স্থ‌গিত ক‌রে‌ছে কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভূরুঙ্গামারী থানা ও ইউএনও কার্যালয়ে রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দীর্ঘ চার ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

আটককৃতরা হলেন- ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, একই বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক রাসেল আহমেদ ও ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক জোবায়ের ইসলাম।

অভিযোগ উঠেছে, ওই বিদ্যালয়ে কেন্দ্র থাকার সুবাদে কেন্দ্র সচিব ও আটককৃত দুই শিক্ষক প্রশ্নপত্রের দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় তারা ওই প্রশ্নপত্র গোপনে নিয়ে যান। পরে নিজেদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগের দিন হাতে লিখে সরবরাহ করেন। তবে প্রশ্নপত্র ৫০০ থেকে ২০০ টাকায় যত্রতত্র বিক্রির অভিযোগ ওঠে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

অনুসন্ধানে প্রশ্ন ফাঁসের সত্যতা পাওয়া গেলে মঙ্গলবার রাত ১০টায় ভূরুঙ্গামারীতে আসেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কামরুল ইসলাম, সচিব প্রফেসর জহির উদ্দিন, জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলামসহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম। তারা উপজেলা নির্বাহীর কক্ষে রাত ১২টা পর্যন্ত বৈঠক করেন।

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (ভূরুঙ্গামারী-কচাকাটা সার্কেল) মোরশেদুল হাসান জানান, শিক্ষা বোর্ডের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয়েছে। তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ প্রশ্লপত্র ফাঁসের অভিযোগে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীন চলমান এসএসসি পরীক্ষার চারটি বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার সত্যতা পাওায় মঙ্গলবার রাতে ৩ জনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়।তাদের বিরুদ্ধে রাতেই থানায় মামলা করেছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটি।

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) শামসুল আলম পরীক্ষা স্থগিত সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার পরীক্ষার্থীসহ সবাইকে জানানো যাচ্ছে, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২০২২ সালের চলমান এসএসসি পরীক্ষার গণিত (১০৯), পদার্থ বিজ্ঞান (১৩৬), কৃষি বিজ্ঞান (১৩৪) এবং রসায়ন (১৩৭) বিষয়ের পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো। স্থগিত বিষয়গুলোর পরীক্ষার তারিখ যথাসময়ে জানানো হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, স্থগিত করা বিষয়গুলো ছাড়া অন্য সব বিষয়ের পরীক্ষা রুটিনে উল্লেখিত সময়সূচি অনুযায়ী যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।

প্রঙ্গত, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় একটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে চলমান এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফসর প্রফেসর মো. কামরুল ইসলাম, সচিব প্রফসর মো. জহির উদ্দিন, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম সহ সংশ্লিষ্টরা ভূরুঙ্গামারী যান।

পরে উপজেলার নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, একই বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক রাসেল এবং ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক জোবায়েরকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আটক করে থানায় নেওয়া হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্ন ফাঁসে তাদের জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে রাতেই থানায় মামলা করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটি। এরই পরিপ্রেক্ষতে দিনাজপুর বোর্ডের চারটি বিষয়ের পলীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২)