দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সাথে ফরিদপুরে অংশ নেওয়া সকলের প্রিয় মানিক দা ওরফে বীর মুক্তিযোদ্ধা হরেন্দ্র নাথ কর্মকার আজ হয় তো পৃথিবীতে নেই। তার আত্মত্যাগ আর দেশাত্ব বোধের সেই দিনগুলোর সাহসীকতা আজও মানুষকে জাগিয়ে তোলে। ফরিদপুরে মুক্তিযুদ্ধাদের যুদ্ধে সরঞ্জামের অংশ হিসাবে বোমা তৈরীতে বিশেষ পারদর্শী এই বীর যোদ্ধা ২০০৬ সালের ১৩ই এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। চির কুমার এই যোদ্ধা ছিলেন জয় বাংলার সাহসী সৈনিক। যুদ্ধকালীন সময়ে বোমা তৈরীর সময় তার দুহাতের কোব্জি উড়ে যায়।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা পি.কে. সরকার জানান, তার তৈরী বোমা মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম রাজেন্দ্র কলেজের ২য় তলায় পরীক্ষামূলক বিষ্ফোরন ঘটানো হয়। তাকে চিকিৎসার জন্য গুরুত্বর আহত অবস্থায় তৎকালীন সময়ে ফরিদপুর মুসলিম প্রিন্টিং প্রেস এর সত্ত্বাধীকারী মরহুম সাইদ আলী খান হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মানিক দার ভাতিজা উপেন্দ্রনাথ কর্মকার চকু দা অনেক কাঠ খরি পুড়িয়ে পায়ে হেটে স্বাধীনতা বিরোধীদের শকুন চক্ষু এরিয়ে ৪ দিন পায়ে হেটে সিমান্ত অতিক্রম করে ভারতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রশিক্ষণ শিবিরে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা চিকিৎসার সু ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী সরকার তাকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা প্রদান করে (যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রেজিষ্ট্রেশন-১৮৮, ক্রমিক-২৬৬)। যা ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য।

প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক দার ভাতিজা উপেন্দ্রনাথ কর্মকার চকু দা আক্ষেপ করে বলেন, তিনি নেই কিন্তু তার পরিবারের সদস্য হয়েও আমরা নানা অনুষ্ঠানে মর্যাদা পাইনা কেন? তিনি চির কুমার থাকায় তার কোন সন্তান নেই। কিন্তু আমরা তো তার সন্তানের মতই দেখাশুনা করেছি। আমার অপর ভাই নারায়ন চন্দ্র কর্মকারও দেখাশুনা করেছে। কিন্তু অনেকেই আমাদেরকে মর্যাদা দিতে চান না কেন? আমার সরকারের কাছে দাবী বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সকল সদস্যই সমাজের নানা আয়োজনে মর্যাদায় আসুক।

শহরের পূর্বখাবাসপুরস্থ চকবাজার সংলগ্ন একটি সংযোগ সড়কের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হরেন্দ্র নাথ কর্মকার সড়ক করা হয়েছে। তার স্মৃতি রক্ষায় নতুন প্রজন্মের জন্য আরও কিছু কাজ করা দরকার বলে সুধি মহল মনে করেন। ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস বৃহত্তর আকারে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

(ডিসি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২)