জে.জাহেদ, কক্সবাজার থেকে ফিরে : পুরোনো চেহারায় ফিরছে কক্সবাজার জেলা কারাগারে। গত দুমাস আগে নতুন জেল সুপার যোগদান করলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির। অভিযোগের সমস্ত তীর জেলা সুপার মোঃ শাহ আলম খানের বিরুদ্ধে। কারাগারে বন্দিদের ঘিরে অনিয়ম-দুর্নীতি ও বাণিজ্য নতুন কিছু না হলেও নবাগত জেল সুপার যোগদানের পর থেকেই অনিয়মের সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে সদ্য জেল ফেরত বিভিন্ন ব্যক্তি ও আদালতে হাজিরা দিতে আসা বন্দিরা জানান।

কক্সবাজার কারাগারে ১ বছর বন্দি থেকে সদ্য জামিনে মুক্ত হওয়া মোকারম (ছদ্মনাম) নামে এক ব্যক্তি অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘১২ মাস কারাগারে ছিলাম। কারা ক্যান্টিনে নিয়মিত যেতাম। যেখানে ৫০ টাকার জিনিস ১২০ টাকা, এক কেজি গরুর মাংস ৩ হাজার টাকা, এক ডজন ডিম ২৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজি ৪০০ টাকা, ৮০ টাকার বিস্কুট প্যাক ১৪০ টাকা, ৩০ টাকার কোল্ড ড্রিং ড্রিংকো ৬০ টাকা।’ এভাবেই নাকি গত আগষ্ট মাসে কারা ক্যান্টিনে এক মাসে লভ্যাংশ হয়েছে ৭৩ লাখ টাকা। সরকারি ভাবে ১০% লাভ দেখানোর কথা থাকলেও এভাবে চলছে কারা ক্যান্টিন।

সরোয়ার নামে আরেক জেল ফেরত জানান, ‘কারা ক্যান্টিনে এক বিরা পান ১৫শ’ টাকা, সুপারির কেজি ২ হাজার টাকা, ছোট সুপারি ৪০০ টাকা। বিড়ি ও (নরমাল) সিগারেট ৬০/৭০ টাকা। বেসন ও গোল্ডলিফ এখন সরবরাহ নেই। এখন নাকি ২ হাজার টাকায় মেলে বন্দিদের সাথে ভিআইপি দেখা!

অনুসন্ধানে আরো তথ্য মিলে, কারা বিধি ভেঙে নতুন জেল সুপার জেল খানা এরিয়ায় ১০টির অধিক গরু লালন পালন করেন। এসব গরুর খাদ্যের যোগান দিচ্ছেন কারাগারের উদ্দিষ্ট খাবার থেকে। এসব গুরুর দুধ আবার জেল খানার ভেতরে বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৩০০ টাকা দরে। যার অর্থও যাচ্ছে জেল সুপারের পকেটে।

জেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্তরা আরও জানান, ‘কারাগারের বন্দিদের প্রাপ্য সরকারি বরাদ্দ করা চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের সিংহভাগই লুটপাট হয়। নির্দেশনা অনুসারে প্রতিদিন সকাল, দুপুর, বিকালে যে পরিমাণ খাবার পাওয়ার কথা তা কখনোই দেওয়া হয় না বন্দিদের। এখন জেল সুপারের ইচ্ছে অনুযায়ী রান্না হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র জানায়, কারাগারের বন্দিদের জন্য সরকারী খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহকৃত ৫০ কেজি চালের বস্তা কারাগারের গুদামে পৌঁছার পর প্রতি বস্তা থেকে চার কেজি চাল বের করে আবারো বস্তার মুখ সেলাই করে দেওয়া হয়। চুরিকৃত এসব চাল রাতের আঁধারে বাইরে বিক্রি করে দেয়া হয়।’

কিছুদিন আগেও খবর প্রকাশ হয়, অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া কক্সবাজার কারাগার। ইয়াবা কারবারিদের রাজত্ব। জেল সুপারের পকেটে যায় মোবাইল কল বিক্রি ও কারা ক্যান্টিনের মাসিক মাসোহারার টাকা। অপকর্মের হোতা সুপার ও সুবেদার। কক্সবাজার কারাগারে ‘দ্বিতীয় জামিন’ ছাড়া বন্দিদের মুক্তি মেলে না। কারাগারকে ঘিরে চলছে ব্যাপক অনিয়ম। ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা; স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ মিলে শুধু টাকায়। কারাগার ইয়াবা কারবারিদের রাজস্থান কত কী অভিযোগ।

এসব অভিযোগ উপস্থাপন করে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেল সুপার মোঃ শাহ আলম খান বলেন, ‘কারাগারে গরুর মাংস কখনো ৩ হাজার টাকা হয় না। ক্যান্টিনে মূল্যে তালিকা দেখে বন্দিরা জিনিসপত্র কিনেন। এখানে অনিয়ম বা দুর্নীতির কিছু নেই। জেলা সুপার কারা এরিয়ায় গরু লালন পালন করতেই পারেন। এটা কারা নিয়মে রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বেশ কিছু দিন আগে পলাশ নামে এক কারারক্ষীকে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে বদলি করা হয়েছে খাগড়াছড়িতে। তিনিই মূলত বিভাগীয় মামলা তুলে নিতে নানা ফোনকল, বিব্রতকর ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। কারা ফটকে দায়িত্ব পালন কালে যার প্যান্টের পকেটে ৪ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এসব কারণে তার শাস্তিমূলক বদলি হয়।’

(জেজ/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২)