রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এক আওয়ামী লীগ নেতা ও মানবব পাচারকারির নেতৃত্বে লাগেজ ব্যবসায়ীদের শুল্ক ফাঁকির প্রতিবাদ করায় এক সাংবাদিককে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাতক্ষীরার ভোমরা কাস্টমস অফিস সংলগ্ন ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল স্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে। মারাত্মক জখম ওই সাংবাদিককে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সাংবাদিকের নাম মোতালেব সরদার। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের মৃত আব্দুৃর জব্বারের ছেলে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দক্ষিণাদূত পত্রিকার ভোমরা প্রতিনিধি মোতালেব সরদার জানান, ভোমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম নেপথ্যে থেকে মানববপাচার ও মাদক মামলার আসামী ভোমরার জাকির হোসেনকে দিয়ে পাসপোর্টে আসা ভারতীয় লাগেজ ব্যবসায়িদের কম শুল্কে মালামাল গন্তব্যস্থলে পৌছে দেওয়ার নাম করে প্রতিদিন দুই থেকে তিন লাখ টাকা রাজস্ব ফাকি দিয়ে আসছেন। কয়েকজনের মাল কাস্টমসে ধরিয়ে দেওয়ায় ভোমরা বন্দরের হ্যাণ্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিক মন্টুকে দুই মাস আগে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয় জাকির ও তার সহযোগিরা। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করায় চিকিৎসা খরচ বাবাদ আওয়ামী লীগ নেতা আনারুলের মাধ্যমে ১২ হাজার টাকা দিয়ে রেহাই পায় জাকির। এরপরও লাগেজ ব্যবসায়ীদের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিজেদের পকেট ভর্তি করতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে বোকা বানিয়ে আসছিল জাকির ও আনারুল।

সাংবাদিক জিয়াউর রহমান ও মোতালেব এর প্রতিবাদ করায় মকুল ও মতিয়ারকে দিয়ে সম্প্রতি অনলাইনে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করায় জাকির। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতা আনারুল ও জাকির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্ণীতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায়ে কয়েকজন লাগেজ ব্যবসায়ীকে কাস্টমসে না যেতে দিয়ে তাদের কাছ থেকে রাজস্ব এর অর্ধেক টাকা নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌছে দেওয়ার সময় মোটর সাইকেল থেকে নামিয়ে নেয় কাস্টমস ও বিজিবি। তাদের কাছ থেকে বিদেশী মদসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। এতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে আনারুল ও জাকির।

মোতালেব সরদার আরো জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি কাস্টমস অফিসের পাশে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল স্ট্যান্ড থেকে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি ভ্যানে ওঠেন। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা আনারুল ইসলাম তাকে ওই মোটর সাইকেল স্ট্যাণ্ডে ডাকেন। লাগেজ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিস কেন বলে তিনি তার কাছে এক লাখ টাকা চাদাা চান। প্রতিবাদ করায় তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন আনারুল ও জাকির। এ সময় তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা কেড়ে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে মারপিটের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করতে গেলে সাংবাদিক জিয়াউর রহমানের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় জাকির। তাকেও মারপিট করা হয়। আসাদুল, আইয়ুব আলী ও জিয়া তাকে উদ্ধার করে শনিবার রাত ১২টার দিকে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

তবে জাকির হোসেন তার ও আওয়ামী লীগ নেতা আনারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল কাইয়ুম জানান, এ ব্যাপারে রবিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত তার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২)