কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :বেশি দামে চামড়া কিনে টেনশনে রয়েছেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার মোকাম কুষ্টিয়ার চামড়া ব্যবসায়ী এবং আড়তদারেরা। তাদের দাবী ট্যানারী মালিকেরা ন্যায্য মূল্যে চামড়া না কিনলে এই মোকামের ব্যবসায়ীদের মারাত্বক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে।

অন্যদিকে এই মোকামে চামড়া আমদানী তুলনামুলক কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা শংকিত হয়ে পড়েছেন তবে সকলের আশা সময়ের সাথে সাথে এই মোকামে চামড়া আমদানী আরো বৃদ্ধি পাবে।
কুষ্টিয়া শহরের প্রাণ কেন্দ্র বাবর আলী রেল গেটের সাথেই কুষ্টিয়ার চামড়া মোকাম। প্রায় ৫০জন ব্যবসায়ী শতাধিক ছোট বড় ঘরে চামড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। চামড়া থেকে গোশত ছাড়ানো আর সঠিকভাবে লবনজাত করার কাজে যেন সকলে ব্যস্ত। কুষ্টিয়া চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান সবুজ জানান, ঢাকা নাটোরের পরই কুষ্টিয়া মোকামের স্থান। এখানে ফরিদপুর, খুলনা, মেহেরপুর, যশোর, মাগুড়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, পাবনা, রাজবাড়িসহ ১২/১৫টি জেলা থেকে চামড়া আমদানী হয়। ঈদের দিন এবং পরের দিনগুলোতে এখানে এবার চামড়া আমদানী কম।
তিনি জানান, গরমের কারনে ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্থানে লবনজাত করে পরে সময়মত মোকামে চামড়া নিয়ে আসবে বলে আশা করছি। এবার গরু ও ছাগল কোরবানীর সংখ্যা কম বলে মনে হচ্ছে। ঢাকার ব্যবসায়ীদের দেয়া রেটের চেয়ে অনেক বেশি টাকায় চামড়া কিনতে বাধ্য হচ্ছি কেননা বেশি দামে চামড়া না কিনলে এই চামড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে গেলে সেটা ভারতে পাচারের আশংকা রয়েছে। তিনি আশা করছেন কুষ্টিয়া মোকাম থেকে এবার দেড় লাখের বেশি গরুর চামড়া এবং ৪ লাখেরও বেশি ছাগলের চামড়া আমদানী হবে।
কুষ্টিয়া চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ হাজী ইউসুফ আলী জানান, ঢাকার দেয়া রেটের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে চামড়া কিনতে বাধ্য হচ্ছি। তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশংকা বেশি করছি। তিনি জানান, সরকার চামড়া খাতে ঢাকার ট্যানারী মালিকদের কোটি কোটি টাকার ঋণ দিয়ে থাকে কিন্তু মফস্বলের ব্যবসায়ীদের এখাতে কোন ঋণ না দেয়ায় আমাদের খুবই ঝুঁকির মধ্যে থেকে ব্যবসা করতে হচ্ছে।
তিনি জানান, কুষ্টিয়ার চামড়া ব্যবসায়ীরা দারুন দুঃচিন্তার মধ্যে সময় পার করছে কেননা বাজারে চামড়ার আমদানী কম হওয়ার পাশাপাশি বেশি দামে চামড়া কিনে অনেকেই নাকাল অবস্থায় পড়েছে।
চামড়া ব্যবসায়ী হানিফ কোরাইশী জানান, এবার মৌসুমী ও ভ্রাম্যমান চামড়া ব্যবসায়ীদের কারনে আমরা বেকায়দায় পড়েছি। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে কেনায় এখন আমরা ট্যানারী মালিকদের উপর ভরসা করে আছি। ট্যানারী মালিকেরা যদি আমাদের ন্যায্য মূল্য না দেয় সেক্ষেত্রে আমাদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
তিনি জানান, বর্তমান ট্যানারী মালিকেরা অনেক প্রগ্রেসিভ। ব্যবসায়ীদের সাথে ট্যানারী মালিকদের লেনদেন অনেক ভাল। আমি আকিজ ট্যানারীতে চামড়া সরবরাহ করি তাদের লেনদেন খুবই ভাল এবং বাজার রেটকে তারা প্রধ্যান্য দিয়ে থাকে।
এদিকে বিজিবি ৪৭ ব্যাটালিয়নের সিও লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, কুষ্টিয়া সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচাররোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। তাতে আমরা এখন পর্যন্ত সফল হয়েছি।
তিনি জানান, সীমান্তবর্তি এলাকার প্রত্যেক মসজিদে মসজিদে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে চামড়া পাচাররোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের বিষয়ে জানানো হয়েছে। এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে। কোন এলাকার চামড়া গুদামজাতের সংখ্যা এবং কোন গুদামের কয়টি চামড়া রয়েছে তার হিসেবে আমাদের নথিতে রেখেছি। তাছাড়া চামড়া বিক্রির সময় বিজিবিকে অবহিত করনের জন্য বলা হয়েছে। তিনি জানান এতে চামড়া পাচাররোধে গুরুত্বপুর্ন কাজ করবে।
তিনি দৃঢ়তার সাথে জানান, কুষ্টিয়া সীমান্তে চামড়া পাচাররোধে আমরা কঠোর। এ বিষয়ে প্রতিটি বিওপি ও ক্যাম্পে নির্দেশনা দেয়া আছে। নির্দিষ্ট এলাকায় প্রতিনিয়ত পেট্রোল দল টহল দিচ্ছে। আশা করছি কুষ্টিয়া সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচার শুন্যের কৌটায় থাকবে। তিনি জানান, সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারী রাখা হয়েছে। এরপরেও কেউ চামড়া পাচারের চেষ্টা করলে সেটা কঠোরভাবে দমনের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(কেকে/এসসি/অক্টোবর১২,২০১৪)