রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের দূর্নীতিবাজ অধ্যাপক ডা: কামরুজ্জামানকে রাজকীয় কায়দায় বিদায়ী সংবর্ধনার আয়োজন করায় প্রতিবাদ কর্মসুচি পালন করা হয়েছে। এ কর্মসুচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের গেটের সামনে মানববন্ধন ও কালো পতাকাা প্রদর্শন করা হয়।

সাতক্ষীরাবাসীর ব্যানারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শেখ মারুফ হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন প্রভাষক আমিনুর রহমান, জিল্লুর রহমান, ডা: প্রকাশ, সামছুন্নাহার, রজব আলী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ছয় বছরের বেশি সময় ধরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকার সুবাদে ও ছাত্র সমতুল্য ডাঃ রুহুল কুদ্দুস ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ হিসেবে চাকুরি করার সুবাদে সপ্তাহে একদিন কলেজ করতেন অর্থোপেডিকস সার্জেন্ট ড্যাব নেতা ডাঃ এএইচএমএস কামরুজ্জামান। তার কাছের লোক বলে পরিচিত কয়েকজন ডাক্তার সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন দায়িত্ব পালন করে বাকী সময় বাইরের ক্লিনিকে সময় দিয়ে মুঠো মুঠো টাকা আয় করেছেন। ডাঃ কামরুজ্জামানের কথামত কাজ না করতে রাজী হওয়ায় নাক, কান ও গলার রোগ বিশেষজ্ঞা ডাঃ জাহিদ হাসানকে বরিশাল জোনে বদলী করা হয়।

ড্যাব নেতা হয়েও সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রীূ ডাঃ আ.ফ,ম রুহুল হকের মেয়ের বিয়ের ঘটকালি করে হিরো বনে য্না তিনি। তার পকেটের চারজন ডাক্তারকে সঙ্গে নিয়ে নিজে ক্রয় কমিটির প্রধান হয়ে হাতিল ফার্ণিচার কোম্পানীর সঙ্গে গোপন চুক্তি মাফিক মেডিকেল কলেজের ৫০ লাখ টাকার ল্যাব যন্ত্রপাতি, এসি মেশিন ও আসবাবপত্র কিনে ওই অধ্যক্ষ চলে যাওয়ার পর ইনটেক অবস্থায় অন্যত্র বিক্রি করেন ডাঃ কামরুজ্জামান। এ ছাড়া ওই হাতিল কোম্পানীর কাছ থেকে কমিশন বাবদ তিনি লুটেছেন বহু টাকা।

চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি লিফটম্যান, পরিচ্ছন্ন কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরীসহ ১৩টি পদে ৩৩ জনের যে নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করা হয় সেই কমিটির সভাপতি ছিলেন ডাঃ কামরুজ্জামান। ৩৩ জনের মধ্যে তার তিন আত্মীয় সুজন, শেখ বিল্লাল ও সবুজসহ ১৯ জনকে নতুন নিয়োগ দিয়ে তিনি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা লুটপাট করেছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। কোন টেণ্ডার ছাড়াই তার একঠিকাদার বন্ধুকে দিয়ে ডাঃ কামরুজ্জামান মেডিকেল কলেজের লেক খনন করে বহু টাকা লুটপাট করেছেন। নতুন নিয়োগকৃত ছয়জন কর্মীকে মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে ছাটাই করায় নূরজাহান বাদি হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও দুদকে অভিযোগ করেন চলতি বছরের ১৪ মার্চ। ৫ম ব্যাচে তার বিভাগে প্রথম হওয়া ছাত্র আল মুকিতকে ফেল করিয়ে নিজের স্বেচ্ছাচারিতার নিদর্শণ সৃষ্টি করেন বলে ডাঃ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। করোনাকালিন সময়ে কলেজে না এসেও যাবতীয় বাড়তি সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন ডাঃ কামরুজ্জামান।
বিভিন্ন ক্রয় কমিটির সভাপতি হওয়ার সুবাদে ডাঃ রুহুল কুদ্দুসকে ম্যানেজ করে ডাঃ কামরুজ্জামান অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

গত ৩১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব সারওয়ার মুর্শিদ চৌধুরীর নির্দেশে গত ১০ আগষ্ট সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তদন্ত করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির সদস্যদের সামনে যাতে কেউ মুখ খুলতে না পারে সেজন্য ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী মোতায়ন করা হয়।

এমন একজন দূর্ণীতিবাজ ডাঃ কামরুজ্জামানেক অবসরে যাওয়া নিয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শামছুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মেডিকেল কলেজের এক্সাম হলে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় বহু টাকা খরচ করে রাজকীয় কায়দায় বিদায়ী সংবর্ধনা জানানো হবে এটা মেনে নেওয়া হবে না। প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসুচি চলাকালে ডাঃ কামরুজ্জামানকে কালো পাতাকা দেখানো হয়। একইসাথে তার দূর্র্ণীতি ও অধ্যক্ষ ডাঃ রুহুল কুদ্দুসের দূর্ণীতির তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২)