স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কেশবপুর : যশোরের কেশবপুরে ব্যাঙ্গের ছাতার মত যত্রতত্র নামে বে নামে গড়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল। সাধারণ জনগণের সেবার নামে প্রতিনিয়ত যেখানে জীবন নিয়ে খেলা করা হয়। এই সব বেসরকারি হাসপাতালের একচেটিয়া ব্যবসা সিজারিয়ানের আপারেশন করা। বিভিন্ন মূল্য প্যাকেজে অবাধে চলে এই সিজারিয়ানের কাজ। তবে ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রে খরচ বাঁচাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অদক্ষ জনবল দিয়ে সিজারিয়ানের কাজ করে থাকে। যে কারণে অকাল মৃত্যু পথের যাত্রী হতে হয় প্রসূতির, পরিবারে নেমে আসে চরম ভোগান্তি। নব জাতক শিশু হারায় মাতৃস্নেহ।

তেমনি কেশবপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতাল "মডার্ণ হাসপাতাল" নামে বহুল আলোচিত। এই বেসরকারি মডার্ণ হাসপাতালে ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে আবারও এক জন প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই নিয়ে গত এক বছরে এই ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে ৫ জন প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হলো। এসব মৃত্যুর ঘটনায় ভিকটিম পরিবারের পক্ষ থেকে মডার্ণ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ ই সেপ্টেম্বর কেশবপুর উপজেলার সন্নাসগাছা গ্রামের আফছার শেখের কন্যা পার্শ্ববর্তী মনিরামপুর উপজেলার মান্দ্রা গ্রামের মোস্তফা সরদারের স্ত্রী ২ সন্তানের জননী লাভলী খাতুনের (২৪) প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে তাকে স্থানীয় মডার্ণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি মোতাবেক সে রাতে গাইনী ডাক্তার ছাড়াই অদক্ষ ডাক্তার দিয়ে ওই গৃহবধুর সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। এসময় লাভলী খাতুনের একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিলেও ভুল সিজারিয়ান অপারেশনের কারনে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের ফলে তার অবস্থার মারাত্নক অবনতি দেখা দিলে, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে সু-কৌশলে খুলনার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসার নামে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২৩ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। বর্তমানে লাভলী খাতুনের সদ্য ভুমিষ্ট ছেলে সন্তানটি সুস্থ থাকলেও তার ৩টি শিশু সন্তান তাদের মায়ের খোঁজে কান্নায়, আকাশ-বাতাশ ভারি হয়ে উঠছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা এই প্রতিনিধিকে জানান।

এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, লাভলী খাতুনের মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের সাথে মোটা অংকের বিনিময়ে ঝামেলা মুক্ত হয়েছেন। হাসপাতাল থেকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে পরিবারটিকে যেন কোনো ভাবে মিডিয়া বা প্রসাশনের দারস্থ না হয়।

এছাড়া কেশবপুর মডার্ণ হাসপাতালে ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে গত ৩০ সেপ্টেম্বর জাহানপুর গ্রামের সাইফুল্লার স্ত্রী তাসলিমা বেগম (২৬), ১৭ আগষ্ট পারখাজুরা গ্রামের আব্দুল গণির স্ত্রী মুসলিমা খাতুন (২৩), ১০ মার্চ কেশবপুর সদরের মুলগ্রামের সাইদ সরদারের স্ত্রী মজ্ঞুয়ারা (২৮) এবং পাথরা গ্রামের জনৈক ব্যাক্তির স্ত্রীর ভুল অপারেশনে মৃত্যু হয়।

প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চালিয়ে আসলেও দেখার কেউ নেই। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে নীতিবাচক প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছে।

লাভলীর পিতা আফসার সরদার বলেন, আমার মেয়ের চলে গেছে আর ফিরে পাবনা। তাই ক্লিনিক মালিক আমাদের ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন তাই মিটিয়ে নিয়েছি।

মডার্ণ হাসপাতালের পরিচালক রবিউল ইসলামের কাছে মুঠো ফোনে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ফোনটি রিসিভ করে পরে কথা হবে বলে লাইন কেটে দেন।

(এসএ/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২)