নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় সরকারি খাঁস ও অর্পিত সম্পত্তি ব্যাক্তি মালিকানায় খারিজ করে দেয়ার অভিযোগে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভুমি) বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা নাহারুল ইসলামসহ ভুমি অফিসের কয়েক কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অবশেষে তদন্ত শুরু হয়েছে। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনায় স্থানীয় জেলা প্রশাসনের  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায় এই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই বেশকিছু তদন্ত কার্যক্রম এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকতা। তবে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দা মতিউল হক নওরোজ ও সঞ্জয় কুমার দাস নামে দুই ব্যক্তি জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ওপর মহলে দীর্ঘদিন আগে লিখিত  অভিযোগ করেও কোন ফল হচ্ছিল না। ওই দুই ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তি করে এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশের পর প্রশাসনের টনক নড়ে।

অভিযোগকারী আরজি নওগাঁর বাসিন্দা সন্তোষ কুমার দাসের ছেলে সঞ্জয় কুমার জানান, নওগাঁ সদর উপজেলার এসিল্যান্ড হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে নাহারুল ইসলাম সরকারী স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সরকারের ক্ষতি সাধন করেছেন। তার অভিযোগ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ডাফইল/৬১ মৌজায় ৮৮৪/১৯৭৮ নম্বর ভিপি কেসে অন্তত ৩ কোটি টাকা মূল্যের ২৭ শতক অর্পিত সম্পত্তি সরকারী গেজেটভূক্ত রয়েছে এবং তা লীজ গ্রহীতার দখলে আছে। সেইসঙ্গে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান থাকায় হোল্ডিংয়ের কার্যক্রম বন্ধও রয়েছে। অথচ সেই অর্পিত সম্পত্তি থেকে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ৩ শতক সম্পত্তি অবৈধ ভাবে ব্যক্তি মালিকানায় হাট নওগাঁর বাসিন্দা মমতাজ হোসেনের নামে খারিজের আদেশ দিয়েছেন নাহারুল ইসলাম। এতে সরকারের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। এই অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ সম্পত্তিটি মূল সম্পত্তিরভূক্ত করার দাবি করেন তিনি।

অপর অভিযোগকারী মতিউল হক নওরোজ জানান, নওগাঁ শহরের প্রান কেন্দ্র পুরাতন মাছ বাজারে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ান ভুক্ত শ্রেনী হাটখলার প্রায় ৫ শতক জমি মৃত ব্যক্তির নামে খারিজ করে দিয়েছেন তৎকালীন এসিল্যান্ড নাহারুল ইসলাম। প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি ওই সম্পত্তিটি ব্যক্তি মালিকানায় মৃত শেখ আব্দুল কুদ্দুসের নামে খারিজের আদেশ দেন তিনি। পরে স্থানীয়দের মাঝে ঘটনা জানাজানি হয়। একই সাথে মৃত শেখ আব্দুল কুদ্দুসের নাতনী শাহানা হকের কাছ থেকে খাজনাও আদায় করা হয়েছে।

মতিউল আরো বলেন, নিয়ম অনুযায়ী খাস খতিয়ানের সম্পত্তি কেউ দলিল মূলে দাবি করলে তা আদালতের মাধ্যমে নিস্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু আদালতের রায় পাওয়ার আগেই সেই জমি খারিজ করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ভূমি মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোন জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না, এমন নির্দেশনা থাকলেও ওই সম্পত্তি হাটখলার স্থলে শ্রেনী দোকান ঘর উল্লেখ করে খারিজ ও নতুন হোল্ডিং খুলে খাজনা আদায় করা হয়েছে।

ভূমি কর্মকর্তা নাহারুলের বিরুদ্ধে লিখিত এসব অভিযোগ পেয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও তাঁর কার্যালয়ের সংস্থাপন শাখার নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত শুরু করেছেন নওগাঁ জেলা প্রশাসনের এডিসি(রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায়।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায় জানান, অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে বক্তব্য গ্রহন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ করে দ্রুতই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। তবে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত চলমান অবস্থায় তদন্ত কার্যক্রমের বিস্তারিত কোন কিছু বলা সম্ভব নয়।

(বিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২)