স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, একটা ডিমের উৎপাদন করতে খরচ পড়ে ৫/৬ টাকা। এটাকে ৮ টাকা নেয়া যেতে পারে, কিন্তু তা না করে ১৩/১৪ টাকা করে কেন হবে? এটা কি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না? সম্মিলিত ভাবে প্রচেষ্টা নিয়ে এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিছুতেই একটা ডিমের দাম ১৩ টাকা হতে পারে না, ১৪ টাকা হতে পারে না।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে আমাদের ডিম আমদানির দরকার নেই। তা হলে আমরা আমদানি নির্ভরশীল হয়ে যাবো। এতে অনেকে দ্বিমত পোষন করবে। এজন্য আমাদের একটু কষ্ট হবে, নইলে ডিম কম খাবো। তারপরও স্থানীয়ভাবে আমাদের ডিম উৎপাদন করে খেতে হবে। দেখা গেছে যখনই বাজারে সরবরাহ কমে যায় তখন কিছু হ্যাচারি মালিক, ফার্মের মালিক নানা রকম চক্রান্ত করে ডিমের দামটা বেশি নেয়। আবার বাজারে যখন ডিমের সরবরাহ বেড়ে যায় তখন কিন্তু তারা ষড়যন্ত্র করে ডিমের দাম বাড়ায় না। তাই ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের উচিত হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যারা দায়িত্বে রয়েছেন, মার্কেটিং বিভাগ সবাই মিলে এটা কঠোরভাবে মনিটরিং করা। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিয়ে এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমি আগেও বলছি, এখনও বলছি। আমি জানি এ নিয়ে সমালোচনা হবে। তারপরও আমি বলবো ডিম আমদানি করার দরকার নাই। এজন্য আমাদের হতো সাময়িক কষ্ট হবে। আমাদের যে প্রযুক্তি আছে এবং বানিজ্যিকভাবে আমাদের যে সংখ্যক ফার্ম আছে, ইচ্ছা করলে ডিম দিয়ে বাংলাদেশ ভাসিয়ে দেয়া যেতে পারে। ডিম যদি আমদানি করা হয়, তবে আমদানি নির্ভর হয়ে যাবো আমরা। সেটা কি আমরা সাপোর্ট করি? না এখন ডিম আমদানি করার দরকার নাই।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের অনেক উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু এসব প্রযুক্তির অধিকাংশই কৃষকের কাছে সেভাবে পৌছায়নি। তাই দেশের কৃষির উন্নয়নে এসব জাত ও প্রযুক্তি দ্রæততর সময়ের মধ্যে কৃষকের কাছে পৌছে দিতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার এর সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব (রুটিন দায়িত্ব) জনাব মো. রুহুল আমিন তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর চেয়ারম্যান জনাব এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক জনাব আঃ গাফ্ফার খান, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক জনাব মো. বেনজীর আলম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. মো. কামরুল হাসান। বারি’র গবেষণা কার্যক্রম ও সাফল্যের উপর সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন বারি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. তারিকুল ইসলাম।

এরআগে মন্ত্রী বারি’র কৃষি প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও ফসল প্রদর্শনীর স্টল ঘুরে দেখেন। অনুষ্ঠানে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বারি’র মহাপরিচালক জানান, উদ্বোধনী এ কর্মশালার কারিগরি অধিবেশন আগামী ১৩-১৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। বর্তমানে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২১১টি ফসল নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বারি ৬২৫টি উচ্চ ফলনশীল জাত এবং ৬১২টি উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তিসহ মোট ১ হাজার ২৩৭টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এসকল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য সব ধরনের ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২)