শিমুল সাহা, লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে বসত ঘরে আগুনের ঘটনায় আনিকা আক্তার (১৮) নামে এক গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তার মা জোসনা বেগম (৪০) ও ছোট ভাই রুপম (৯) দগ্ধ হয়েছে। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছ। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাত ১ টার দিকে সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের পূর্ব মাগুড়ি গোপালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধ দুইজনকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠালে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।

নিহত আনিকা ৩ মাসের গর্ভবতী ছিল। তার স্বামীর নাম মো. রতন। বাবার নাম আনোয়ার হোসেন। বাবা ও স্বামী সৌদি প্রবাসী। সে স্থানীয় গোপালপুর দারিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। ৮ মাস আগে তার বিয়ে হয়েছে।

বুধবার (১২ অক্টোবর) সকালে আগুন লাগার ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রণজিৎ কুমার সাহা। তিনি বলেন, রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা একজনের পোড়া মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশকে বুঝিয়ে দিই, আর দগ্ধ দুইজনকে হাসাপাতালে পাঠায়। আমরা যাবার আগেই স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তিনি। তবে স্থানীয় কয়েকজন বলছে, কেউ ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে।

নিহত আনিকার ফুফু শেফালী বেগম বলেন, আমার ভাই আনোয়ার সৌদীতে থাকেন। রাতে তার স্ত্রী জোসনা বেগম, ছেলে রিফাত (২০) মেয়ে আনিকা ও ছোট ছেলে রুপম ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের পর তিনজন ঘর থেকে বের হতে পারলেও অনিকা বের হতে পারেনি। সে ঘরের ভেতের আগুনে জ্বলে পুড়ে মারা যায়।

আগুন নেভাতে আসা আনিকার চাচা কামাল হোসেন বলেন, রাতে আমরা আগুন নেভাতে আসি। আমার ভাতিজা রিফাত এবং তার মা জোসনা ছোট ছেলে রুপমকে নিয়ে ঘরে থেকে বের হতে পেরছে। কিন্তু অনিকা ঘর থেকে বের হতে পারেনি। আগুন নেভানোর পর তার পোড়া কঙ্কাল পাওয়া যায়। আমার ভাবী জোসনা ও ভাতিজা রুপম আগুনে পুড়ে আহত হয়েছে।

এদিকে বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে পরিবারকে ৬০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা করে জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, এটি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। আগুনে পুরোপুরি ভষ্মিভুত হয়ে একটি মেয়ে মারা গেছে। তার মার শরীর অনেকটা পুড়ে গেছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পরিবারের পাশে আছি। তাদেরকে আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করা হবে।

পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কি কারণে আগুন লেগেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। আগ্মিকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হবে বলে জানান তিনি।

(এস/এসপি/অক্টোবর ১২, ২০২২)