সোহেল সানী, পার্বতীপুর : পাথর উত্তোলনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এমোনিয়াম নাইট্রেট না থাকায় দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাস বন্ধ থাকার পর দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনিতে পাথর উৎপাদন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে পাথর উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত অন্যতম প্রধান উপাদান এক্সফ্লোসিভ (বিস্ফোরক) আসায় (দ্বিতীয় শিফট) বিকেল থেকে পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন পর আবার পাথর উত্তোলন শুরু হওয়ায় খনির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। 

খনি সূত্র মতে, খনি ভূগর্ভে পাথর উৎপাদন কাজে এক্সফ্লোসিভ (ইমালশন) সংকটে পড়ে গত ১ মে মাস থেকে পাথর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেডসহ (বিস্ফোরক) সংকটে পড়ে ১২ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ ছিল। সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে প্রতি তিন মাস অন্তর এক্সফ্লোসিভ আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। খনি কর্তৃপক্ষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিস্ফোরকের জোগানও দিতে পারছিল না। খনির উৎপাদন ঠিকাদার জিটিসি’র অধীনে কর্মরত সাড়ে ৭শ’ খনি শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ে। পাথর না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় বিক্রি কার্যক্রমও। অন্যদিকে, খনি রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে জিটিসি’র মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি মধ্যপাড়ার পাথরের ওপর নির্ভরশীল দেশের নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলো পাথর সংকটের মুখোমুখি হয়। মধ্যপাড়ার পাথর উন্নতমানের হওয়ায় দেশীয় বাজারে এর উচ্চ চাহিদা রয়েছে। এমজিএমসিএল তার উৎপাদিত পাথর ৯৭ জন ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করে।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামান বলেন, খনিতে গত বুধবার উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ১০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেড বিস্ফোরক পৌঁছেছে। আগামী ১৫ অক্টোবর আরও ১২০ টন চট্টগ্রাম পৌঁছার কথা রয়েছে। চলতি অক্টোবর মাসের শেষে আরও ১৫০ টন বিস্ফোরক বেনাপোলে পৌঁছার কথা রয়েছে। তাই আসা করা হচ্ছে এ অবস্থায় আগামী ৬ মাস নিরবচ্ছিন্ন খনি পরিচালনা করা যাবে। প্রথম দিন তিন শিফটে পূর্ণমাত্রায় কাজ চলবে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টন পাথর উত্তোলন সম্ভব হবে।

বর্তমানে মধ্যপাড়া খনি থেকে পাথর উত্তোলন করছে বেলারুশের ঠিকাদার জার্মানিয়া স্ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। চুক্তি অনুযায়ী পাথর উত্তোলনের জন্য যাবতীয় মেশিনারিজ, ইকুইপমেন্ট ও বিস্ফোরক জোগান দেবে এমজিএমসিএল। জিটিসি পাথর উত্তোলন করবে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার মে.টন। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত সাড়ে ৪ মাস খনি বন্ধ থাকায় ঠিকাদার কোম্পানিকে ১০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হয়েছে। সরকার প্রতিমাসে রাজস্ব হারায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি। পাথরের অভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছে দেশের অনেক বড় বড় মেগা প্রকল্প।

জানা গেছে, মধ্যপাড়া খনির ভূগর্ভে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর উৎপাদন করা হয়। এ জন্য বছরে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার এক্সফ্লোসিভ (এমোনিয়াম নাইট্রেট, ইমালশনসহ বিস্ফোরণ কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য মালামাল) প্রয়োজন হয়। এসব মালামালের পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। লেবাননের বৈরুতে এমোনিয়াম নাইট্রেডের গুদামে বিস্ফোরণ, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে এক্সফ্লোসিভের তীব্র সংকট দেখা যায়। এসব এক্সফ্লোসিভ আমদানি করতে একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করেও কেউ দরপত্র শিডিউল পর্যন্ত ক্রয় করেনি। পরে খনি কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে কয়েক দফা তা আমদানি করে পাথর উৎপাদন সচল রাখে।

(এসএস/এএস/অক্টোবর ১৩, ২০২২)