কবীর চৌধুরী তন্ময়


‘তোমাকে চাই’ গানের সুনামিতে আমাকেও কবীর সুমন ভাসিয়ে নিয়ে গেলেন বাংলা গানের শ্রোতাদের মাঝে। গান পাগল মন- যেন জীবনের আরেক অক্সিজেন! বেঁচে থাকার, স্বপ্ন দেখার এবং ভালোবাসার পরতে পরতে এই অক্সিজেন আমারও বড্ড প্রয়োজন ছিলো, এখনো আছে।

আমরা যখন উত্তাল শাহবাগে, ক-তে কাদের মোল্লা-তুই রাজাকার, তুই রাজাকার- স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত। কলঙ্কের বলি রেখা আর অশুভ অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার দাবি জানিয়ে একে অপরের হাত ধরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবি শাহবাগ থেকে বাঙালির ঘরে-ঘরে পৌঁছে দিয়েছি, সমবেত সুরে যখন বলেছি-‘রাজাকারদের বিচার চাই’। তখন কবীর সুমন তাঁর সুর নিয়ে আমাদের সমবেত সুরে একাকার হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কবীর সুমনও বাঙালির অভিশাপ মুছনে, সব রাজাকারদের ফাঁসি-দে স্লোগানে অন্য রকম সুর তুলেছিলেন।

আমিও কবীর সুমনকে আলিঙ্গন করেছি। এ যেন বাঙালি মোরা একই ভাই। একই সংস্কৃতি, একই চিন্তা, একই চেতনার মানুষজন আমাকে উদ্ভুদ্ধ করে, আলিঙ্গন করে। আমিও তাকে বিশ্বাস করি। ভালোবাসার শ্রদ্ধায় রাখি। কিন্তু এই কবীর সুমন যখন কোনো কুখ্যাত রাজাকারের সন্তানকে নিয়ে গান করে, অপসংস্কৃতি আর মৌলবাদ দেশবিরোধীকে নিয়ে গর্ববোধ করে সুর তুলে-তখন আমি থমকে দাঁড়াই। আমি ভেতরে-ভেতরে দুমরে-মুচড়ে যাই।

প্রশ্ন করি-এই কবীর সুমন, কি সেই কবীর সুমন! ভাবতে থাকি। অনেক গভীরে গিয়ে ভাবতে থাকি। কিন্তু হিসেব মিলাতে পারি না। বিশ্বস্ত অনেকের কাছে জানতে চাই, জিজ্ঞেস করি-দ্বৈতনীতি কেন?

সবার উত্তরগুলো এক করে সংক্ষপে বললে এমন দাঁড়ায় যে, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কবীর সুমন খুব বেশি অবগত নয়!! আবার অনেকে বলেছেন, এক শ্রেণির শিল্পীর মূল আদর্শ টাকা-অর্থ; যার বিনিময়ে তারা অনেকে কুখ্যাতকে বিখ্যাত করেন। আবার বিখ্যাতকে অখ্যাত করতে দ্বিধা করেন-না।।

আমার একান্ত সন্দেহ থেকে জানতে ইচ্ছে করে, শাহবাগে কবীর সুমন টাকার বিনিময় সুর তুলেছেন? আমাদের আবেগ, ভালোবাসা, দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে নয়?

আবার নানান জনের নানান কথার যৌক্তিকতাও পাওয়া যায় যেমন, সাম্প্রতিক একজন সংগীত শিল্পী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে নাকি একজন রাজাকার পুত্রের কাছ থেকে রাজাকার নাতীর বিয়ের দাওয়াত পাননি-এমন মনোকষ্টকর স্ট্যাটাসও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, গণমাধ্যমও লুফে নিউজ করেছে!!

তবে, কবীর সুমনের বিষয়টি ছিলো একেবারেই ভন্নি। আমি বা আমরা অনেকে ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করেছিলাম যে, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গীকারের শিল্পিত স্বভাব ছিলো কবীর সুমনের।

কিন্তু বাস্তবতার হিসেব যে বড্ড কঠিন। বিশ্বস্ত অনেকে এও বলেছেন, রাজাকার পুত্রের গুণ-গানের বিষয়টি ছিলো মূলত প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে কবীর সুমনকে ব্যবহার করা। এখানেও আমি সন্দেহ করে প্রশ্ন করতে চাই, কবীর সুমনও ব্যবহার হয় বা হওয়ার সম্ভাবনা আছে? তবে

আমি এটিকে বিশ্বাস করতে চাই। তাই, কবীর সুমনের গানের সুরে সুর মিলিয়ে ক্ষমা চাওয়ার সুরও দেখতে চাই। নিজের ভুলের ক্ষমা চাওয়ার গান চাই।।

আমি সুরের সীমারেখার পক্ষে নই। একজন শিল্পীর সুরের মাঝে প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে। তবে কবীর সুমনকেই প্রমাণ করতে হবে, কবীর সুমন শুধু সুর করেন? নাকি মানবিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেমের পক্ষে আর অপসংস্কৃতি, মৌলবাদ, স্বাধীনতাবিরোধীদের বিপক্ষে।।

প্রত্যাশা করি, প্রতিবন্ধকতামুক্ত কবীর সুমনের সুর উঠুক। অজ্ঞ ও প্রাজ্ঞদের উজ্জীবিত করুক। দেশ-বাঙালি প্রেম? নাকি রাজাকার-পক্ষ অবলম্বনের বিষয়টি কবীর সুমন নিজেই নির্ধারণ করুক।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)।