বিশ্বজিৎ বসু


 

এখানে এখন বসন্ত!
এখানে কাঁশফুলের সমারোহ নেই!
শিশির ভেজা ঘাসে ঝরে পড়া শিউলী ফুলের সমারোহ নেই!
এখানে শরতের সোনা রোদের ঝলকানি নেই!
এখানে আজ বসন্ত!
এখানে বাহারি ফুলের সমারোহ আছে!
আছে রক্তিম পারিজাত, রংবেরংয়ের বাগানী বিলাস।
আছে নিজ ভারে নুয়ে পড়া বোতল ব্রাস ।
এখানে সাদা মেঘের ভেলা আর বাসন্তী রোদের ঝলকানি আছে।
এখানেও উমা আসে
এখানেও বোধন হয়
এখানে শরতের বোধন হয় বসন্তে ।

পার্থ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী শহর। অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম প্রান্তে দুরে একাকী দাঁড়িয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন শহর। বিচ্ছিন্ন এ শহরেও দুর্গাপূজা হয় নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে। প্রবাসের কর্মব্যস্ত জীবন, পুরোহিত সংকট, উপযোগী স্থানের অপ্রতুলতা নানাবিধ কারণেপুজোর আয়োজন হয় তিথির আগে পরে বা মাঝখানের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে।"প্রবাসে নিয়ম নাস্তি" সনাতন ধর্ম পালনে এর এই প্রায়োগিক বিধান এখানে প্রয়োগ হয় পরিপূর্ণভাবে।

পার্থে দুই বাংলার প্রবাসী বাঙালিদের আয়োজনে পুজো হয় সাতটি অস্থায়ী মন্দিরে। এখানে সাধারণত স্থানীয় সরকারের কমিউনিটি হল ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় অস্থায়ী মন্দির। গত ৮ অক্টোবর শনিবার হয়ে গেল বাঙালি সোসাইটি ফর সুজা এন্ড কালচার আয়োজিত শারদীয় দুর্গোৎসব ২০২২। ক্যানিং সিটি কাউন্সিল এর অন্তর্গত লিনউড হলে ছিল এ আয়োজন। সকাল আটটায় শুরু হওয়া এ আয়োজন শেষ হয় রাত বারোটায়।

আয়োজনে সকাল থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ছিল পূজা এবং অঞ্জলী পর্ব। এরপর সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাঙালি সোসাইটির সভাপতি ড. প্রবীর সরকার, অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য ডাঃ জগদীশ কৃষ্ণাণ, বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া এসোসিয়েশনের অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া (বাওয়া)র সভাপতি ডাঃ আনিসুর রহমান।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে পার্থে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা। বিশেষ আকর্ষণ ছিল ইংলিশ নাটিকা মহিষাশুর বধ। শর্মিষ্ঠা সাহার রচনা এবং পরিচালনায় পনর জন শিশু শিল্পী অংশগ্রহণ করে এ নাটকে। এছাড়া ছিল বয়স ভিত্তিক শিশুদের দলীয় নৃত্য এবং গান।

বাঙালি সোসাইটি প্রতিবছর পূজার সময়ে খাদ্য সংগ্রহ করে এবং অস্ট্রেলিয়া সরকারের ফুড ব্যাংকে দান করে। এবারও তার কোন ব্যাতিক্রম ছিলনা। সোসাইটির সদস্যরা তাদের সাধ্যমত খাদ্য দান করে এ উদ্যোগে। প্রতি বছরের মত এবারও প্রকাশিত হয়েছে শারদীয় প্রকাশনা "বন্ধন"।

অনুষ্ঠান শেষে বিশেষ আকর্ষণ ছিল ছিল পুজোর বাহারী খাবার। লুচি, সবজি, নাড়ু, নানান পদের মিস্টি দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন। অনুষ্ঠানে ছিল অতিথিদের উপচে পরা আগমন। দুপুর রাত মিলিয়ে সাত শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণ ছিল এ আয়োজনে। রাত সাড়ে দশটায় শুরু হয় সিঁদুর খেলা এবং আনন্দ নৃত্য যা শেষ হয় রাত বারোটায়। এবং এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় সমস্ত আয়োজন।

লেখক : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।