রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : পাহাড়ি ঢলে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি নেমেছে আর ভেসে উঠছে ক্ষেতে ক্ষেতে রোপা আমনের সর্বনাশা চিত্র। কৃষকের সোনার ধান গাছ পাহাড়ি লাল মাটিতে চাপা পড়ে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। মাটির নিচে চাপা পড়ায় ক্ষেতে ক্ষেতে পচা গাছের গন্ধে আকাশ বাতাস ভারি হয়েগেছে। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ধানগাছের গন্ধ আর কৃষকের বুকফাটা কান্না। কৃষকের ওই আর্তনাত কান্না আর গন্ধ পাওয়া যাবে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সীমান্ত এলাকার গ্রাম গুলোতে।

প্রথম দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বুকভরা অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো রোপা লাগিয়েছিল কৃষক। কিন্তু সর্বনাশা পাহাড়ি ঢলের বন্যায় কৃষকের সে বুকভরা স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান করে দিয়েছে। দিগন্তজুড়ে রোপা আমন ক্ষেত পাহাড়ি লাল মাটিতে ঢেকে গেছে। দু’একটা জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও বেশির ভাগ কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে হা-হুতোষ করছে।

সরেজমিনে সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পচা গন্ধ আর কৃষকের কান্নার চিত্র। বাতাসে কিসের গন্ধ এটা জানতে চাইলে সীমান্ত গ্রাম বিকরীবিল এলাকার আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘কি কমুরে বাবা। এ গন্ধ আমগর সোনার ধান গাছের। পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আসা লাল মাটিপড়ে হগল ক্ষেতের ধান মাটিতে মিশে গেছে। মাটি চাপা পড়ায় নিচ থেকে ধান গাছের পচা গন্ধ বের হচ্ছে। এ বন্যায় আমগর মতো হাজারো কৃষকের বুকের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে।’ একই গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘এবার আগুর (অগ্রাহায়ন) মাসে বউপোলাপান নিয়া না খাইয়া থাকা নাগব। ক্ষেতে যদি আবাদ না হয় তাহলে ওইসময়ে ধানও পাওয়া যাবো না। সব শ্যাষ হয়া গেছে আমগর।’

প্রতিবছরই সীমান্ত এলাকা বকবান্দা, খেওয়াচর, চরলাঠিয়াল ডাঙ্গা, বড়াইবাড়ি, ঝাউবাড়ি, ইজলামারী, বিকরিবিল, কাশিয়াবাড়ি, গোয়ালগ্রাম সীমান্ত এলাকাগুলোতে প্রচুর রোপা আমনের চাষ হয়ে থাকে। ফলনও হয় সব চেয়ে বেশি। কিন্তু এবার এমন সময়ে পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যার সৃষ্টি হলো যেসময় রোপা আমন লাগানো শেষ হয়। আর ওই সময়ে পাহাড়ি ঢলের লাল মাটিতে ভেসে যায় এলাকা গুলো। চরলাঠিয়াল ডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষেতে যাইয়া দেহি ধানের কোনো চিহ্নই নাই। সব মাটিতে ঢেকে গেছে।’ তাদের মতো সীমান্ত এলাকার অসংখ্য কৃষক এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

চরলাঠিয়াল ডাঙ্গা গ্রামের বর্গাচাষি আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সুদের ওপর ট্যাহা নিয়া ৩বিঘাজমিত আমন চাষ করছিলাম। বন্যায় সব খায়া গেছে। বড়াইবাড়ি গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন জানান, গত ৩০ বছরেও সীমান্ত এলাকায় এত বড় বন্যা হয় নাই। রোপা আমন ছাড়াও অন্যান্য যে শাক সবজি আবাদ করা হয়েছিল সেটাও বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। এবছর অগ্রাহায়ন মাসে কৃষককে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

রৌমারী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফার বন্যায় ৮ হাজার হেক্টর আর দ্বিতীয় দফার বন্যায় ৪ হাজার মোট ১২ হাজার হেক্টর রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল হক জানান, আমার উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সীমান্ত এলাকায়। এমন সময়ে পাহাড়ি ঢলের বন্যা হলো যখন নতুন করে আর রোপা লাগানোর সুযোগ নেই। তারপর সরকারি ভাবে বেশ কিছু কৃষকের মাঝে চারা বিতরণ করা হয়েছে যাতে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে।

(আরএস/এএস/অক্টোবর ১৩, ২০১৪)