তারেক হাবিব, হবিগঞ্জ : সাইফুল ইসলাম অভি, বয়স মাত্র ২৮ বছর। এর মধ্যেই তার জীবনে যে পরিবর্তন এসেছে তার। সব কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। একেবারে মোবাইল সার্ভিসার থেকে এখন কোটি-কাটি টাকার মালিক সে। শুধু বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিকই হননি, সরকারি দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের পদপদবিও বাগিয়ে নিয়েছেন। ক্ষমতা ও টাকার জোরে পুরো আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকা এখন তার । দুই ভাইয়ের মধ্যে সাইফুল ইসলাম অভি বড়। গত দেড় বছরে গড়ে তুলেছেন নিজের বিশাল কমান্ডার বাহিনী বহর। ‘মোবাইল জুয়া ক্যাসিনো’ হাত ধরে তাদের এই অবিশ্বাস্য উত্থান। জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম অভি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।

স্থানীয় বাজারের আল মদিনা টেলিকমে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের মাধ্যমে শুরু হয় তার কর্মজীবন। দেড় বছর আগে কোনো মাধ্যমে তিনি অনলাইনে বাজি ধরে জুয়া খেলার সন্ধান পায়। ইন্ডিয়ান মালিকাধীন সেটস্টেট সাইডের এডমিন ও ভেলকি সাইডের সুপার এজেন্ট সাইকুল ইসলাম অভি। তার অধীনে সব সময় ৫/৬জনের এজেন্ট কাজ করে যারা দৈনিক গড়ে ৫/১০ লাখ টাকার লেনদেন করে থাকেন। এভাবেই হঠাৎ করে মাত্র দেড় বছরের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন সাইফুল ইসলাম অভি। তার নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছ সঞ্চয় পত্র। মাত্র বেশ কিছুদিন আগেও হবিগঞ্জ শহরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার জমি ক্রয় করেছেন নিজের নামে। বর্তমানেও তার ক্যাশ আছে কাছে নগদ ২ কেটি টাকা। সম্প্রতি ‘সাইকুল ইসলাম অভি’ নামে ফেসবুক আইডিতে নিজের নামের সাথে ফেসবুক সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়ে নিজেই করছেন নিজের প্রচারণা। আপলোড করছেন নিজের বিলাস বহুল জীবনের নানা তথ্য। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাফেরা করেন বিমানে। ব্যবহার করেন দেড় লাখ টাকা দামের আইফোন প্রমেক্স। সহকর্মীদের নিয়ে নিয়মিত বিচরণ থাকে ঢাকার বিলাস বহুল ফাইভস্টার হোটেলে ও স্পা সেন্টারে। মাসের ২৫ দিনই কাটে ঢাকার অভিজাত হোটেল সোনারগাও, শেরাটন এবং রোজভিউতে। বিলাসী জীবনের পাশাপাশি সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের বিতরণ করেছেন প্রায় ৫ লাখ টাকা। গত ১ মাস আগে বিরাট গ্রামের শাহারিয়ার হোসেন আমির নামে এক যুবকের এজেন্ট ও টাকা লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তার ঝামেলা হয়। এক পর্যায়ে শাহারিয়ার হোসেন আমির সাইফুল ইসলাম অভির দেড় লাখ টাকার আইফোন আটক করে। পরে এ বিষয়টি আজমিরীগঞ্জ থানা পর্যন্ত গড়ায়।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম অভি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক বাংলা৭১’কে জানান, তিনি আগে অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি এ পেশার সাথে জড়িত না। আগে অন্যজনের এজেন্ট হয়ে কাজ করতেন। আজমিরীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মোবারুল হোসেন জানান, প্রায় ১ মাস আগে জুয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অন্য আরেকজনের সাথে ঝামেলা হয়েছিল। বিষয়টি তিনি আপোষে মিমাংসা করতে সহায়তা করেছেন। এর বেশী কিছু তিনি জানেন না।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা সালেহা সুমী বলেন, অনলাইন জুয়াটি মোবাইল কোর্টের আওতায় পড়ে না। এ নিয়ে নিয়মিত মামলা করলে ভাল হয়। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখবে উপজেলা প্রশাসন।

বানিয়াচং আজমিরীগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার পলাশ রঞ্জন দে জানান, এ ধরনের কোন তথ্য আগে পাইনি। কোন তথ্য প্রামাণ পেলে তাৎক্ষনিক আইন-আনুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(টিএইচ/এএস/নভেম্বর ০২, ২০২২)