শিতাংশু গুহ


সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলাম, ‘আমার বিশ্বাস প্রশ্নটি করেছেন একজন হিন্দু শিক্ষক এবং তাঁর মনে ব্যাথা আছে’। আমার আশঙ্কা সঠিক হয়েছে। শিক্ষা বোর্ড ঘটনার দায় প্রশান্ত কুমার পাল, সৈয়দ তাজউদ্দীন শাওন, মো: শফিকুর রহমান, শ্যামল কুমার ঘোষ এবং মো: রেজাউল করিম-এর ওপর চাপিয়েছেন। কেউ কেউ ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকারকে দায়ী করছেন।

শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি বলেছেন, ‘সাম্প্রয়দায়িক প্রশ্ন, ব্যবস্থা নেয়া হবে’। এইসএসসি পরীক্ষা' ২০২২, বাংলা ১ম পত্র, ঢাকা বোর্ড-র ১১নম্বর প্রশ্নটি এখন ‘টক অফ দি টাউন’। প্রশ্নটি একটি অপ্রিয় সত্য এবং সমাজের বাস্তবতা। সত্য সর্বদাই কঠিন এবং তা একসময় প্রকাশিত হবেই। দুই হিন্দু ভাইয়ের ঝগড়া, বা মুসলিম প্রতিবেশীর আচরণ এগুলো মিথ্যা নয়, এমত অসংখ্য ঘটনা আছে। প্রশ্নটি যিনি করেছেন, তিনি হয়তো এমত কোন ঘটনার সাক্ষী।

প্রশ্নটি সাম্প্রদায়িক, একই সাথে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার বহি:প্রকাশ। প্রশ্নে বলা হচ্ছে, ‘নেপালের মন ভেঙ্গে যায়’-হিন্দু’র মন তো অনেক আগেই ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এখানে গোপালকে ‘মীরজাফর’ বলা হচ্ছে এবং আব্দুলের পরিচয় ‘খাল কাটা কুমির’? প্রশ্নকর্তা নেপালের দুর্দশা যেমনি তুলে ধরেছেন, কুমিরের চরিত্রটা সুন্দর ফুটিয়েছেন। প্রশ্নে বলা হচ্ছে, নেপাল ভারত চলে যায়? সত্য চাপা থাকেনা। নেপালরা ভারত যায় বটে!

ক’দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে একজন হিন্দুও ভারত যায়নি! নায়িকা অন্জু ঘোষ গেছেন, গায়িকা মিতালী মুখার্জী গেছেন, লক্ষ্-কোটি হিন্দু গেছেন। এখনো যাচ্ছেন, কারণ কুমির! শামসুর রাহমান লিখেছিলেন, ‘সুধাংশু যাবেনা’--। সুধাংশু বা নেপাল-রা তারপরও যাচ্ছে, ভারত তাদের গন্তব্য। কেন যাচ্ছে? কারণ, জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ’।

জমি নিয়ে হিন্দু দুই ভাইয়ে ঝগড়া নুতন কিছু নয়, এটি হিন্দু-মুসলমান সবাই করে, বিষয়টি ধর্মের নয়, সম্পত্তি’র। রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার কারণেই জমি সংক্রান্ত লক্ষ লক্ষ মামলা ঝুলন্ত। জমি নিয়ে যত মিথ্যাচার, মামলা, খুনাখুনি, ঘুষ, দুর্নীতি তা হয়তো অন্য কোন ক্ষেত্রে নয়? ঘটনাচক্রে সদ্য একজন বিসিএস (অব:) তথ্য ক্যাডার হিরণ কুমার বণিক জানালেন, ১৯৬৯ সালে তাঁর পিতার কেনা জমি ত্রিশ বছর ধরে ‘শত্রু সম্পত্তি’, বারবার মামলায় জিতলেও জমি উদ্ধার হচ্ছেনা! এটাই বাস্তবতা।

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা কমরেড নাহিদের আমলে ইসলামীকরণ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমান মন্ত্রী দীপুমনি চেষ্টা করছেন, কতটা এগুতে পারবেন বলা শক্ত? শুধু শিক্ষা দফতর নয়, সর্বত্র একই অবস্থা। শেখ ফজলুল হক মনি লিখেছিলেন, ‘মোনায়েমের প্রশাসন দিয়ে বঙ্গবন্ধু’র সরকার চলতে পারেনা’। ঠিক তেমনি, ‘জামাতি প্রশাসন দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার চলতে পারেনা’। বঙ্গবন্ধু উত্তরাধিকার সূত্রে মোনায়েমের প্রশাসন পেয়েছিলে; ১৪ বছর দেশ শাসন করার পর শেখ হাসিনা কেন জামাতি প্রশাসন পেলেন, এপ্রশ্নের কোন জবাব নেই?

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।