নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরে গাড়লের খামার তৈরী করে ভাগ্যবদল করেছেন খামারী আব্দুল মান্নান। তার খামারে বর্তমানে ছোট-বড় ৭৫টি গাড়ল রয়েছে। খামারে গাড়লের পাশাপাশি গরু মোটাতাজাকরন, দেশী হাঁস-মুরগী ও ছাগল পালন, মাছ চাষসহ বিভিন্ন প্রজাতির বাগানও রয়েছে। বর্তমানে মান্নানের খামারে ১২জন বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। সঙ্গে ভাগ্যের দুয়ারও খুলেছে তার। তার দেখাদেখি লাভজনক এই পশু পালনে ঝুকছেন অনেকেই।

মেহেরপুর থেকে ৪০টি গাড়ল কিনে ২০১৬ সালে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে খামার শুরু করেন উদ্যোক্তা আব্দুল মান্নান। গাড়ল কিনতে তার খরচ হয় তিন লাখ টাকার মতো। আর খামারসহ অবকাঠামো তৈরিতে খরচ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। ঘাসের চাহিদা মেটাতে আড়াই বিঘা জমিতে লাগান নেপিয়ার ঘাস।

উপজেলার মালশন গ্রামের মৃত আব্বাস আলী মোল্লার ছেলে আব্দুল মান্নান মোল্লা মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন । তিনি একজন ব্যবসায়ী। নওগাঁ শহরের আলুপট্টিতে তার আড়ত রয়েছে। ব্যবসার পাশাপাশি পশু পালনের শখ তার। এই শখ থেকেই ৬ বছর আগে গাড়ল পালন শুরু করেন তিনি। এর আগে নেন প্রশিক্ষণ। মালশন গ্রামে বাড়ির পাশে তৈরী করেন গাড়লের খামার।

গাড়ল রাজশাহী অঞ্চলের একটি ভেড়ার জাত। দেখতে ভেড়ার মতো লাগলেও আকারে ভেড়ার চেয়ে কিছুটা বড়। এগুলো আসলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাগপুর অঞ্চলের ছোট নাগপুরি জাতের ভেড়ার সঙ্গে দেশি ভেড়ার ক্রস ব্রিড। এই ক্রস ব্রিডের নামকরণ করা হয় ‘গাড়ল’। এরা সাধারণত সাত থেকে আট মাস পরপর একটি করে বাচ্চা দিয়ে থাকে।

উদ্যোক্তা আব্দুল মান্নানের দেখাদেখি ওই গ্রামসহ তার আশেপাশের গ্রামগুলোতে ছোট-বড় ১৬টি নতুন খামার তৈরি হয়েছে। ওই সব খামারে কেউ গাড়ল, কেউ গরু, কেউ ছাগল, কেউ মাছ আবার কেউ কেউ দেশী প্রজাতির হাঁস-মুরগি প্রতি পালন করছেন।

আব্দুল মান্নান বলেন, গাড়ল বছরে দু’বার বাচ্চা দেয়। প্রতিবারে দুই থেকে তিনটি বাচ্চা প্রসব করে মা গাড়ল ভেড়া। দেশীয় ভেড়ার চেয়ে গাড়ল আকারে প্রায় দ্বিগুণ। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি গাড়লের ৩৫-৫০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। দামও বেশি এবং এর মাংস খেতে সুস্বাদু। যেখানে দেশীয় একটি ভেড়ার ২০-২৫ কেজি মাংস মেলে। প্রাপ্তবয়স্ক একটি গাড়ল ১৫হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। খাবার, আবাস ও পালন পদ্ধতি দেশীয় ভেড়ার মতই।

কর্মচারী আব্দুল মতিন, আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আগে বেকার ছিলাম। প্রায় তিন বছর ধরে মান্নান ভাইয়ের খামারে কাজ করি। এর জন্য আমাদেরকে মাসে ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়। যা দিয়ে আমার সংসার খরচ চলে। এখানে কাজ পেয়ে আমাদের কর্মসংস্থানের একটা সুযোগ হয়েছে।’

রানীনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কামরুন নাহার জানান, মান্নানের খামারে উন্নত জাতের ৭৫টি গাড়ল রয়েছে। উপজেলার অন্য কোনো স্থানে এত বেশি গাড়ল পালন করা হয়নি।

তিনি বলেন, ‘উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে তার খামারটি বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। আগামীতে ছাগলের বিকল্প হিসেবে গাড়ল চাষে খামারিদের বেশি উদ্বুদ্ধ করা হবে।’

(বিএস/এসপি/নভেম্বর ১৩, ২০২২)