ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


শীতকালে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক ও এর মৃত্যু ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।শীতের প্রভাবে রক্তচাপের পরিমাণ ১২ থেকে ১৮ মিলিমিটার বাড়তে পারে যা গবেষণায় প্রমাণিত। শীতের প্রভাবে রক্তনালি সংকোচিত হওয়ার ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি ঘটে। এতে রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতিবছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ মারা যায়। এর শতকরা ৮০ শতাংশই মারা যায় হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোকে। করোনায় শুধু বিশ্বব্যাপী মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩,৫০,৭১,১৮৯ মৃত ৬৬,০৯,৯২৬ আর বাংলাদেশে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত বেড়ে ২০ লাখ ৩৬ হাজার ২০৪ জন এবং মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৪২৯ জনে। 

অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে ১ লাখ ১২ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে হৃদরোগে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ ভাগই হচ্ছে অসংক্রামক রোগে। এর ৩৬ দশমিক ১ শতাংশই হৃদরোগী। আরেক তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। যার ২৪ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক ও তামাকজাত পণ্য।

শীতকালে হৃদরোগ বৃদ্ধি নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন- শীতের প্রভাবে রক্ত উপাদানে অনেক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। রক্ত জমাট বাঁধার জন্য দায়ী রক্তকনিকা, প্লাটিলেট, লোহিত কনিকা, ফিব্রিনোজেন এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের প্রবণতা অনেক গুণে বৃদ্ধি পায়।হার্টের অসুখ বা হৃদরোগই পৃথিবীতে মৃত্যুর প্রধান কারণ। কেবল হৃদরোগের এইপরিসংখ্যানগুলো আগে থেকে জানি না বলে, হৃদরোগ নিয়ে আমাদের মাঝে কোন ভয় কাজ করে না। জানি না বলেই নিজের অজান্তে আমরা ধরে নিয়েছি, আমাদের বোধ হয় হৃদরোগ হবে না। যেমনটা আমাদের নিম্নবিত্ত কিংবা অথর্ব বোকা মানুষগুলো করোনার পরিসংখ্যান জানে না বলে তারা ধরে নিয়েছে করোনায় তারা আক্রান্ত হবে না। এজন্যই যারা জানে আর যারা জানে না তারা সমান না।মানুষ যদি সচেতন না হয়, তবে এটা ছড়াবেই। যারা , ক্যান্সার আক্রান্ত, ডায়াবেটিস, হাইপারটেশন, হৃদ যন্ত্রের সমস্যা, ফুসফুসে সংক্রমণ এবং কিডনি ডিজিজে ভুগছেন অথবা যাদের ইমিউনিটি কম তারা অবশ্যই বেশি ঝুঁকিতে আছেন।

স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে এদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। তাই অন্য সময়ের চেয়ে এই সময়ে হৃদরোগ বেড়ে যাওয়ার খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।আমাদের দেশের মানুষ যে দুইটি রোগে চিকিৎসা করতে গিয়ে পথের ভিকারীতে পরিণত হয় তার একটি হলো ক্যান্সার, অন্যটি হলো হৃদরোগ বা হার্ট ডিজিজ।অথচ অন্যান্য জটিল রোগের মতো হৃদরোগের চিকিৎসাতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার।হোমিওচিকিৎসা বিজ্ঞানীদের হৃদরোগ চিকিৎসায়,বিবরণী পড়লে হতাশ প্রাণে আশার আলো দেখা দেয়, সাধারনভাবে হৃদরোগ বলতে হৃৎপিন্ড, রক্তবাহী ধমনী ও শিরা, মস্তিষ্ক ও বৃক্ক সম্পর্কিত রোগ বোঝায়। হৃদরোগের অনেক কারণের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ও অ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রধান। সাথে সাথে বয়সের সাথে হৃৎপিন্ড ও ধমনীর গঠনগত পরিবর্তনও হৃদরোগের জন্য অনেকাংশে দায়ী। হৃদরোগ সাধারনত বয়স্কদেরই হয়। মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হন। পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, তামাক জাতীয় দ্রব্য বর্জনের মাধ্যমে অনেকাংশে হৃদরোগ প্রতিরোধ সম্ভব হতে পারে।হৃদ রোগ বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন- জন্মগত হৃদ-রোগ, করোনারি হৃদ রোগ, হার্ট ফেইলর, কার্ডিও-মায়োপ্যাথি, উচ্চ রক্তচাপ জনিত হৃদ রোগ, কোর পালমোনাল (হৃৎপিণ্ডের ডান পাশ অচল হয়ে যায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হয়), সেরেব্রোভাস্কুলার রোগ (মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী রক্তবাহিকার অসুখ, যেমন- স্ট্রোক), প্রান্তিক ধমনীর রোগ, রিউম্যাটিক হৃদ রোগ (বাতজ্বরের কারণে হৃদপেশি ও ভাল্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া), কার্ডিয়াক ডিসরিদ্মিয়াস ইত্যাদি।

হৃদরোগের কারন

হৃদরোগের জন্য অনেক কারন দায়ী। যেমন- বয়স, লিঙ্গ, ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, পারিবারিক ইতিহাস, স্থূলতা, স্বল্প শারীরিক পরিশ্রম, খাবার দাবারে অসচেতনতা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ লিপিড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন, নিয়মিত হাঁটা বা শারীরিক পরিশ্রম, খাবার দাবারে একটু সচেতন হলে এবং ঊচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ লিপিড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা হ্রাস করা যেতে পারে।

হার্ট রেট কত হলে বুঝবেন পরিশ্রম যথাযথ

শারীরিক পরিশ্রমের জন্য একজন মানুষের হার্ট রেট থাকা উচিত তার সর্বোচ্চ হার্ট রেটের ৬৪ থেকে ৭৬ শতাংশের মধ্যে। আবার বয়সভিত্তিকও এটা হিসেব করা যায় যে শারীরিক শ্রমের মাধ্যমে হার্ট রেট কতটা পর্যন্ত হলে সেটা যথাযথ হবে। এক্ষেত্রে একজন মানুষের বয়স যদি ৫০ বছর হয় তাহলে তাহলে ২২০ থেকে ৫০ বাদ দিলে যে ১৭০ বিটস পার মিনিট বা বিপিএম পাওয়া যাবে সেটাই ঐ ব্যক্তির বয়স অনুপাতে সর্বোচ্চ হার্ট রেট। এখন ৫০ বছর বয়সী একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ হার্ট রেটের ৬৪ শতাংশ হবে : ১৭০ *০.৬৪ =১০৯ বিপিএম আর ৭৬ শতাংশের হবে: ৭০*০.৭৬= ১২৯ বিপিএম। এখানে দেখা যাচ্ছে মোটামুটি মাত্রার শারীরিক পরিশ্রমের জন্য একজন ৫০ বছর বয়সী মানুষের হার্ট রেট ওই পরিশ্রম করার সময় ১০৯ তেকে ১২৯ এর মধ্যে থাকতে হবে। আবার উচ্চমাত্রার শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে হার্ট রেট হবে সর্বোচ্চ হার্টরেটের ৭৭% থেকে ৯৩%। তবে শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় উচ্চমাত্রার পরিশ্রম সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।

কোন বয়সে হতে পারে?

হৃদরোগ সব বয়সেই হতে পারে। তবে সাধারনত বয়স্ক ব্যক্তিরাই এ রোগের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারনভাবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮২ শতাংশই হৃদরোগে মারা যায়। আবার ৫৫ বছর বয়সের পরে স্ট্রোক করার সম্ভাবনাও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আবার বয়সের সাথে সাথে ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়, ফলে করোনারি ধমনী রোগ হয়।

কাদের হতে পারে?

প্রজননে সক্ষম নারীর তুলনায় পুরুষদের হৃদরোগ হবার ঝুঁকি বেশি। প্রজননের সময়ের পরে, নারী ও পুরুষের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা সমান। যদি কোন নারীর ডায়াবেটিস থাকে, তার হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষের চেয়ে বেশি। মধ্যবয়সী মানুষের ক্ষেত্রে, করোনারি হৃদরোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা নারীদের তুলনায় পুরুষদের প্রায় ৫ গুণ বেশি। হৃদরোগে লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ মূলত হরমোনগত পার্থক্য।

হৃদরোগের লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ :বুক, পিঠ, পেট, গলা, বাম বাহুতে ব্যাথা, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভুত হতে পারে।শ্বাসকষ্ট পাকস্থলির উপররের দিকে অসহনীয় ব্যাথা অনুভূত হবে।মাথা হালকা লাগতে পারে।

হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয়: হৃদরোগ নানান রকমের হতে পারে, যেমন- জন্মগত হৃদরোগ, বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ জনিত হৃদরোগ, হৃদপিণ্ডে স্বল্প রক্ত চলাচলজনিত হৃদরোগ, হৃদপিণ্ডে মাংসের দুর্বলতাজনিত হৃদরোগ ইত্যাদি। হৃদরোগ প্রতিরোধে সতর্ক হলে অনেক ভাল ফল পাওয়া যায়।

> জন্মগত হৃদরোগ এবং অন্যান্য হৃদরোগ প্রতিরোধে করনীয় বিষয় সম্মন্ধে বর্ণনা করা হলঃজন্মগত হৃদরোগ প্রতিরোধে করনীয়ঃ-

গর্ভধারণের কমপক্ষে তিন মাস আগে মাকে MMR Injection দিতে হবে, গর্ভবতী মায়ের উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে।ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে সেটা অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে।গর্ভবতী অবস্থায় যেকোনো রকম ওষুধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অন্যান্য হৃদরোগ প্রতিরোধে করনীয়: কম বয়সী ছেলে বা মেয়ের গলাব্যথাসহ জ্বর হলে, তাকে এক সপ্তাহের জন্য বেলাডোনা দিয়ে চিকিৎসা করলে ভবিষ্যতে হৃদরোগ হওয়ার আশংকা অনেকটা হ্রাস পাবে। আবার স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচলজনিত কারণে হার্ট অ্যাটাকের মত মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা প্রতিরোধে খাবার এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন-প্রতিদিন কমপক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময় হাঁটা বা ব্যায়াম অথবা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। এটা হৃদরোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। প্রচুর পরিমানে ফলমুুুল, শাকসবজি, তরকারি, টক জাতীয় ফল খেতে হবে। অপরদিকে লবণ ও চিনি কম খেতে হবে। বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার বর্জন করতে হবে।মদ্যপান, জর্দা, তামাক, ধূমপান ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। ধূূূমপান ছাড়ার পরবর্তী ১০ বছর সময় পর্যন্ত হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে যায়। ফাস্টফুড, টিনজাত ও শুকনো খাবার খাওয়া কমাতে হবে।অতিরিক্ত পরিমানে চা, কফি এবং কোমলপানীয় বর্জন করতে হবে।

ধূমপান, অ্যালকোহল বা যেকোন ধরনের মাদক বর্জন করতে হবে। মহিলাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং কিছু কিছু ওষুধ হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।শরীরে চর্বি জমতে দেয়া যাবে না। এটা হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ওজন যত কিলোগ্রাম হবে, তাকে উচ্চতা যত মিটার তার বর্গ দিয়ে ভাগ করে বিএমআই নির্ণয় করতে হয়।৪০ বছরের বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে, সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। প্রাণিজ চর্বি খাওয়া যাবে না, তবে উদ্ভিদ তেল খেতে হবে যেমন- সয়াবিন, সূর্যমুখী, সরিষার তেল ইত্যাদি। সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। বাদাম হৃদরোগের জন্য উপকারী। বাদামের ভেষজ প্রোটিন, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফ্লাভোনয়েডস, সেলিনিয়াম ও ভিটামিন-ই হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী।দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার চেষ্টা করতে হবে এবং ধর্মকর্মে মনোযোগী হতে হবে।মানসিক চাপ অর্থাৎ অনিদ্রা, টেনশন, ভয়, ক্রোধ, হতাশা, রাগ, প্রতিশোধ প্রবণতা, হিংসা ইত্যাদি বর্জন করতে হবে।উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। কমপক্ষে সপ্তাহে এক দিন রক্তচাপ পরীক্ষা এবং মাসে একবার করে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে।

শীতকালে হৃদ রোগীর করণীয়:

* শরীরচর্চা স্বাস্থ্যের জন্য সবসময়ই ভালো, আর হৃদরোগীদের জন্য তা অবশ্য কর্তব্য। তবে শীতের সকালে তীব্র ঠাণ্ডায় হাঁটতে না যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বরং বিকালে কিংবা সন্ধ্যায় সূর্যের আলো ফুরিয়ে যাওয়া আগে হাঁটতে যাওয়া ভালো।

* শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে ঘরের ভেতরে বেশি সময় পার করা উচিত। অন্যান্য শীতের কাপড়ের পাশাপাশি হাত ও পায়ে মোজা পরতে হবে। গোসল করতে হবে গরম পানি দিয়ে।

* একবারে ভারী আহার সব বয়সেই হৃদযন্ত্রের উপর বাড়তি চাপ ফেলে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবারও কম পরিমাণে নিয়ে কয়েকবারে খেতে হবে। পানি ও লবণ গ্রহণের মাত্রার উপর নজর রাখতে হবে।

* যেকোনো বিপদ-আপদের জন্য পুরো পরিবারকে প্রস্তুত থাকতে হবে। বুকে অস্বস্তি, ঘাম, হাঁসফাস অনুভুতি, ঘাড়, কাঁধ কিংবা চোয়ালে ব্যথা, পায়ের তলায় ঘাম ইত্যাদি সমস্যাকে অবহেলা করা যাবে না। একজন বিশেষজ্ঞ হোমিওপ্যাথির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

হোমিও প্রতিকার:

রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয় এই জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক কে ডা.হানেমানের নির্দেশিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসারে হৃদরোগ চিকিৎসা সহ যে কোন জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ভিওিক লক্ষণ সমষ্টি নির্ভর ও ধাতুগত ভাবে চিকিৎসা দিলে আল্লাহর রহমতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে সম্ভব।

হোমিও রেমিডি:

অভিজ্ঞ চিকিৎসক গন প্রাথমিক বাবে যে সব ঔষধ নির্বাচন করে থাকে,ক্র্যাটিগাস,অরম মেটালি কাম,এডডোনিস ভাণ্যালিস, অর্জুন,আর্নিকা মন্টেনা, গ্লোনয়িন, ভ্যানাডিয়ম, ল্যাকেসিস, ডিজিটালিস, বেলাডোনা, স্পাজিলিয়া, এনথেলমিয়া, ন্যাজাট্রাইপুডিয়ামস, নাক্স ভুমিকা সহ আরো অনেক ঔষধ লক্ষণের উপর আসতে পারে।

পরিশেষে বলতে চাই, বেশি শীতের প্রকোপে হার্টের অনিয়মিত হৃদস্পন্দন শুরু হতে পারে যার ফলে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটাও অস্বভাবিক নয়। পেট ভরে খেয়ে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় হাঁটাহাঁটি করলে খুব সহজেই এনজিনার ব্যথা শুরু হয়ে যায়, যার জন্য রক্তনালির সংকোচনকেই দায়ী করা হয়। যারা সুস্থ-সবল লোকজন তারা খুব সহজে ঠাণ্ডাজনিত এসব পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, কিন্তু যারা শারীরিকভাবে দুর্বল, বয়সের ভারে ন্যুব্জ বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত তারা খুব সহজেই এসব পরির্বতনের ফলে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে থাকেন। এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য আপনার প্রস্তুতি এবং সতর্কতা আপনাকে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।