মোহাম্মদ ইলিয়াছ


কৃষি বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। হাজার বছরের অবহেলিত ও শোষিত এ বাংলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ও সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কৃষির কোনো বিকল্প নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সত্যটি দৃঢ়তার সঙ্গে অনুধাবন করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন কৃষির উন্নতিই হচ্ছে কৃষকের অর্থনৈতিক মুক্তি, কৃষকের অর্থনৈতিক মুক্তি মানেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য হবে আরও প্রজ্জ্বলিত ও প্রস্ফুটিত।

বর্তমান করোনাভাইরাস সংকটে জাতির পিতার সেই বিশ্বাসই আমাদের কাছে আবারও ফিরে এসেছে। এ সংকটে বিশ্বের বড় বড় অর্থনৈতিক সংস্থা ও জোট যখন বিশ্ব অর্থনীতিতে মহামন্দার পূর্বাভাস দিচ্ছে, যখন পূর্বাভাস দিচ্ছে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের, ঠিক সেই সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে এক বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে। বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।

জাতির পিতার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা তার পিতার মতই কৃষিকে অন্তর দিয়ে ভালোবেসেছেন। বিশ্বের নামী-দামী অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোর বিরোধিতার মুখেও শুধুমাত্র দেশকে ভালোবেসে প্রিয় মাতৃভূমির মঙ্গল চিন্তায় কৃষিতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। দেশ এর সুফল পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্তমান করোনাভাইরাস সংকটে যখন দেশের শিল্প খাত, সেবাখাত, তৈরি পোষাক শিল্প, রফতানি খাতের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, সেই সময়ে কৃষি খাত দিচ্ছে বরাবরের মতো সুসংবাদ, মায়ের মমতায় আগলে রেখে খাদ্য সংকটের সম্ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার এক অবিশ্বাস্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কৃষি খাত।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বোরো মৌসুমে সব মিলিয়ে চাল উৎপাদিত হয়েছে ২ কোটি ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি। বর্তমান অর্থবছরের বোরো মৌসুমে চাল উৎপাদনের পরিমাণ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ৪.৩৯ শতাংশ বেশি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ৪.৪৮ শতাংশ বেশি। এবারের বোরো মৌসুমের একটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদের পরিমাণ বিগত বছরের আবাদের তুলনায় প্রায় ৩১.৬১ শতাংশ কমে গিয়ে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ প্রায় ১৪.৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকলে বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন আরও এক দফা বৃদ্ধি পাবে।

চলতি অর্থবছরে আউশ মৌসুমে মোট চাল উৎপাদন হয়েছে ৩৫ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন, যা বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ৩১.৭৩ শতাংশ বেশি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ২৮.৬০ শতাংশ বেশি। এবারকার আউশ মৌসুমও আমাদের আরও একটি আশার সঞ্চার করেছে। আর তা হল বিগত অর্থবছরের তুলনায় বর্তমান বছরে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ প্রায় ২৬.৪২ শতাংশ কমে গিয়ে আধুনিক জাতের ধানের আবাদ ২৪.৮৫ শতাংশ বেড়েছে। উপরন্তু হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আউশ মৌসুমেও চালের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। আউশ মৌসুমে চালের উৎপাদন যত বৃদ্ধি পাবে বোরো মৌসুমের উপর চালের উৎপাদনের চাপ তত কম হবে। বোরো মৌসুমে আবাদের পরিমাণ কম হলে ভুগর্ভস্থ পানির উপর চাহিদা কম হবে। কেননা গবেষণা বলছে বোরো মৌসুমে প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে প্রায় ৩০০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। সুতরাং বোরো মৌসুম থেকে চাল উৎপাদনের আওতাধীন জমির পরিমাণ যত কমতে থাকবে পানি সম্পদের যৌক্তিক ও সুষ্ঠু ব্যবহারের সুযোগ তত বেশি সৃষ্টি হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঝুঁকি নিয়েছেন বলেই তাঁর সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় করোনাভাইরাস সংকটের সময়েও সব ধরনের শস্যের উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমান অর্থবছরে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ৫১ লক্ষ মেট্রিক টন। বিগত বছরের উৎপাদিত ৪ কোটি ১ লক্ষ মেট্রিক টনের চাইতে বর্তমান অর্থবছরে প্রায় ১২.৪৭ শতাংশ বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে।

করোনাভাইরাসের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে ২০১৯-২০ অর্থবছরে শস্য ও শাকসব্জি থেকে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনা ভাইরাস সংকটের কারণে যেহেতু শিল্প খাত, সেবা খাত, তৈরি পোষাক শিল্প খাত, নির্মাণ খাত এবং প্রবাসী আয় হতে আয়ের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেহেতু কৃষি খাতের বর্ধিত আয়ের মাধ্যমে সেই ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ হওয়ার একটি সম্ভাবনা জাগ্রত হয়েছে। যেখানে অর্থনীতির অন্যান্য খাত, উপ-খাত জিডিপি প্রবৃদ্ধির উপর ঋণাত্বক প্রভাব ফেলছে সেখানে কৃষি খাত জিডিপির সহনীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সুতরাং বাংলাদেশের অর্থনীতি যে শক্তিশালী বুনিয়াদের উপর দাঁড়িয়ে আছে সেই শক্তিশালী বুনিয়াদের অর্থনীতিকে কৃষি খাতই বরাবরের মতো সচল রাখার গুরুদায়িত্ব পালন করছে। সেই বিবেচনাতে কৃষি খাতই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা।

এই প্রাণভোমরাকে স্বাভাবিকভাবে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের। এটিকে কোভিড-১৯ এর পর রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধে বেসামাল বিশ্ব অর্থব্যবস্থা।বিভিন্ন উপায়ে বর্তমান সরকার সততার সাথে এই সংকটাপন্ন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা তার পিতাই মতই কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রাণভোমরাকে প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করে চলেছেন। তারই প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে সামগ্রিক কৃষি খাতে ৩০৯৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ছিল ২৭০২৪ কোটি টাকা। কৃষি খামার যান্ত্রিকীকরণের জন্য ৩১৯৮ কোটি টাকার বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, খামার যান্ত্রিকীকরণে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছেন, ৯৫০০ কোটি টাকার কৃষি ভর্তুকির প্রস্তাব দিয়েছেন। ২০১৮ এর নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ব্যাপকভিত্তিক কৃষি খামার যান্ত্রিকীকরণের জন্য খামার যন্ত্রপাতির যন্ত্রাংশ আমদানির উপর শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। উপরন্তু যন্ত্রপাতির ব্যবহার সহজলভ্য করার জন্য ব্যবসায়ী পর্যায়ে মুসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভুট্টা এবং আলুর উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে মেইজ স্টার্চ ও পটেটো ফ্লেক্স আমদানি নিরুৎসাহিত করে দেশিয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে মুসক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশি পিঁয়াজ উৎপাদন উৎসাহিত করে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে হবে ২৩২৬ মার্কিন ডলার। যেহেতু মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে সেহেতু মানুষের গুনগতমানসম্পন্ন খাবার গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৎস্যখাতকে প্রণোদনা প্রদান এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত ১ লক্ষ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি সামুদ্রিক এলাকা তথা ব্লু ইকোনমির সুফল পাওয়ার লক্ষ্যে গভীর সমুদ্রে জেলেদের মাছ ধরার অন্যতম উপকরণ ইলেকট্রিক্যাল সিগনালিং ইকুইপমেন্টের আমদানিতে শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে পোলট্রি ও মৎস্য শিল্পের প্রতিরক্ষণ ও বিকাশের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে অর্থনীতির গতিশীলতার জন্য সহায়ক হবে।

বাংলাদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের কৃষকরা। তাদের সহায়তা করছেন কৃষিবিদরা। আর এই কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নীতি নির্ধারকগণের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়টি নীতি নির্ধারকগণের খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে উপরে বর্ণিত বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এসব পদক্ষেপে শতকরা প্রায় ৮৪ ভাগ ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষক কিভাবে লাভবান হবে সেটিই দেখবার বিষয়। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতায় সরকারের নানান পদক্ষেপ দরিদ্র কৃষকের পক্ষে খুব বেশি কাজে আসেনি। সেই বিবেচনায় বাজেট প্রণয়নের পাশাপাশি বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কৃষকের মাত্র ১.৩৪% ভাগ কৃষক সরকার নির্ধারিত সংগ্রহ মূল্যে ধান বিক্রয় করতে পারে। বিগত বোরো মৌসুমের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের যেহেতু প্রায় ৮৪% হচ্ছে ভূমিহীন, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক, সেহেতু তাদের মূলধন খুবই কম থাকে আর কৃষিতে যতই আধুনিকতার ছোয়া লাগছে কৃষকের জন্য কৃষি কাজ ততই ব্যয়বহুল হচ্ছে, শ্রম নির্ভর কৃষি থেকে মূলধন নির্ভর কৃষিতে রুপান্তর হচ্ছে যদিও উৎপাদনশীলতাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে দেশের সিংহভাগ কৃষকই দারুণভাবে মূলধন সংকটে ভুগছে। মূলধন সংকটে ভোগার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে চালকল মালিক, চাল ব্যবসায়ীসহ মধ্যস্বত্বভোগীদের নিকট থেকে নানাবিধ শর্তে ঋণ নিয়ে কৃষি কাজ পরিচালিত করতে হচ্ছে। যেহেতু দেশের শতকরা ৮৪ ভাগ কৃষকই মূলধন সংকটে ভুগছে সেহেতু সংগ্রহ মৌসুমে ঋণ পরিশোধের তাগিদেই উৎপাদিত ধান বিক্রয় করতে হচ্ছে। যেহেতু সংগ্রহ মৌসুমে ধানের সরবরাহ অনেক বেশি থাকে, অন্যদিকে সরবরাহের বিপরীতে চাহিদা অনেক কম থাকে, ফলশ্রুতিতে ধানের দাম সংগ্রহ মূল্যের অনেক নিচে নেমে যায়। এ বছর ধানের সংগ্রহ মূল্য যেখানে ১০২৪ টাকা মন, সেখানে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে হাওর অঞ্চলের কৃষককে ৬০০-৭০০ টাকা মন দরে ধান বিক্রি করতে হয়েছে।

আবার জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত তো রয়েছেই। আম্পান, ফণীসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষকদের। এই নানামুখী চাপ নিয়েই আমাদের কৃষকদের কৃষি কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতির প্রাণভোমরা কৃষিকে রক্ষা করতে হচ্ছে। গুরুদায়িত্ব আবারও আমাদের সেই কৃষকদেরই।

এ প্রসঙ্গে ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশবাসীর প্রতি যে কথা বলেছিলেন তা স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন, আমাদের নজর গ্রামের দিকে দিতে হবে। কৃষকদের রক্ষা করতে হবে, কৃষককে বাঁচাতে হবে। উৎপাদন করতে হবে। তা না হলে বাংলাকে বাঁচাতে পারবেন না।

জাতির পিতার সেই অমোঘ বাণী স্মরণে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষির ক্রমোন্নতি সাধনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন বাংলাদেশের আগামীর অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হবে কৃষ ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।

সময়ের পরিক্রমায় কৃষির মতো একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রায়োগিক বিজ্ঞানের টেকসই প্রয়োগে কৃষিবিদদের হতে হবে আরও অনেক গতিশীল, হতে হবে আরও অনেক দক্ষ। সেই সঙ্গে কৃষিবিদদের দায়িত্বও প্রতিনিয়ত বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু কৃষিবিদদের দায়িত্ব যে হারে বাড়ছে সে হারে তাদের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল কৃষিকে আরও উৎপাদনশীল ও কার্যকর করতে উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত প্রতি কৃষিবিদের জন্য জন্য গাড়ির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। বিলাসিতার জন্য নয় কৃষির স্বার্থে, কৃষকের স্বার্থেই উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কৃষিবিদদের জন্য ফোর হুইল ড্রাইভ ও উচ্চ ক্ষমতার ইঞ্জিন সম্বলিত গাড়ি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি আবশ্যিক উপাদান হচ্ছে কৃষক সমবায়। বর্তমানে ভারতের পল্লী জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ ভাগ কৃষক সমবায়ের উপকারভোগী।

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধানের ১৩(খ) অনুচ্ছেদে সম্পদের মালিকানার অন্যতম খাত হিসেবে সমবায়কে স্বীকৃতি দেয়া হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধুমাত্র সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েই সমবায়কে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি গ্রাম উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং শোষিত মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সমতা ভিত্তিক উন্নয়ন দর্শনের আওতায় সমবায়কে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

এদেশের কৃষি এবং কৃষককুলকে বাঁচাতে হলে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে । ব্যাংক গুলিকে দালাল মুক্ত করতে হবে আরও সহজ শর্তে কৃষককে ঋণ দিতে হবে। পণ্যের সঠিকভাবে মূল্য নির্ধারন করতে হবে। সরকারি -বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি কৃষককের কাছ থেকে পণ্য কিনতে হব। প্রতিটি থানায় কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষি ভিক্তিক শিল্প স্হাপন করতে হবে। সার, কীটনাশক, কৃষি উপকরণের দাম সমন্বয় করতে হবে। কৃষককে আধুনিক কৃষি চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিক্ষিত যুবকদেরকে কৃষিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। কৃষককে আধুনিক কৃষি চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নতুবা সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হবে খাদ্য সংকট।

প্রতিনিয়ত চাষের জমি কমে যাচ্ছে।উপরের মাটি ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের জমি রক্ষা করতে হবে। ধনী ব্যক্তিরা শত বিঘা জমি কিনে রেখেছেন। চাষবাস করছেন না। এসব জমি ব্যবহারের একটা নীতিমালা থাকা উচিত।

কৃষিকে গণমাধ্যমের আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের সাফল্যের কথা যদি বলি, তাহলে কৃষি সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। ৭ কোটি থেকে আজ ১৬ কোটির বেশি মানুষ। কিন্তু আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি।

চাল, মাছ ছাড়াও অন্যান্য খাদ্যে আমাদের উৎপাদন প্রায় চাহিদার কাছাকাছি। কোনো মানুষ বলে না যে বাজারে খাদ্য নেই।

কৃষির ক্ষেত্রে নতুন কোনো বিষয় যদি আসে, তাহলে সেটা কে জানাবেন? একটা থানায় হয়তো একজন কৃষি অফিসার আছেন। তাঁর যাতায়াতের ব্যবস্থা তেমন নেই। একজন মানুষ কীভাবে একটা উপজেলার কৃষকের সুযোগ-সুবিধা দেখবেন? রাসায়নিক ব্যবহারের একটা নীতিমালা থাকতে হবে। কৃষকদের আরও সুযোগ -সুবিধা বাড়াতে হবে।

আমরা আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কার্যকরভাবে কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণের মধ্য দিয়েই আমাদের অর্থনীতির প্রাণভোমরা কৃষিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। জাতির পিতার স্বপ্নের বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আমাদের যেমন সংকট সৃষ্টি করেছে তেমনি আমাদের জন্য কিছু সুযোগেরও দ্বার উম্মোচন করেছে। আশাবাদী ;সকল বৈশ্বিক সমস্যা কাটিয়ে এগিয়ে যাবে ২০৪১ এর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনে।

লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়।