রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ নভেম্বর। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।

প্রায় ৮ বছর পর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হচ্ছে সভা-সমাবেশ। শহর সাজানো হচ্ছে ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণ দিয়ে। মোড়ে মোড়ে আলাপ-আলোচনাসহ চায়ের কাপেও উঠছে ঝড়। সবমিলিয়ে একটা উৎসবমুখরতা বিরাজ করছে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে।

সম্মেলনকে সামনে রেখে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীর সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখছেন সভাপতি পদে ও সাধারণ সম্পাদক পদে কাকে দেখতে চান। তৃণমূল থেকে শুরু করে দলীয় নেতারাও তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন অহরহ।

২০১৫ সালের ২০ মে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি হন এডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্ ও সাধারণ সম্পাদক হন মো. ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। তাঁদের দুজনের নেতৃত্বে প্রায় আটবছর অতিক্রম করেছে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি।

জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এইচ আর জাহিদ আনোয়ারকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন।

আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও সম্ভাব্য একাধিক নেতা প্রার্থীর নাম শোনা গেছে।

সভাপতি পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মেলান্দহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুজ্জামান। সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রেজাউল করিম রেজনু সিআইপি; জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, সাবেক ছাত্রনেতা বিজন কুমার চন্দ; জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক ছাত্রনেতা আবম জাফর ইকবাল জাফু ও জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য অব্যাহতি দেওয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক যুবলীগ নেতা অধ্যাপক মো. সুরুজ্জামান।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ কেন্দ্রে ব্যাপক লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরছেন নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মেলান্দহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক নির্যাতিত ছাত্রনেতা ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুজ্জামান বলেন, আসন্ন ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি সভাপতি পদের একজন প্রার্থী। দল তাকে সমর্থন দেবে বলে তিনি আশাবাদী।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রেজাউল করিম রেজনু সিআইপি বলেন, ২০১৫ সালের সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। আসন্ন সম্মেলনেও তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে শক্তিশালী একজন প্রার্থী।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিজন কুমার চন্দ বলেন, আসন্ন ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আবম জাফর ইকবাল জাফু জানান, আসন্ন সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী। ইতোমধ্যে তাঁর পোষ্টার লাগানো হয়েছে বিভিন্ন দেয়ালে।

জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য অব্যাহতি দেওয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. সুরুজ্জামান বলেন, গত ১৩ নভেম্বর তাকে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং কেন বহিস্কার করা হবে না মর্মে জবাব চাওয়া হয়েছে। নিয়মানুযায়ী তিনি জবাব প্রদান করেছেন। বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগের একজন মাঠকর্মীর অধিকার থেকেই তিনি এখনও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী।

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী জানান, জিলাস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন সফল করতে জেলা আওয়ামী লীগ রাতদিন কাজ করছে। প্রতিদিনই সভা-সমাবেশ করা হচ্ছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। জামালপুর জিলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক ছাড়াও লক্ষাধিক লোক সমাগম হবে বলে তিনি আশা করেন। সম্মেলনস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত চারপাশেই মাইক লাগানো হবে। যাতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য খুব সহজে সবাই শুনতে পারেন। সম্মেলন স্থলে মঞ্চ তৈরিসহ বিভিন্ন সাজসজ্জার কাজ চলছে।

জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এড. মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ্ বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী। তাঁর কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য তিনি জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের পরবর্তী তিন বছরের জন্য যাকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করবেন, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ৫ লক্ষ নেতাকর্মী সানন্দ চিত্তে সে সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন এবং স্বাগত জানাবেন।

(আরআর/এসপি/নভেম্বর ২২, ২০২২)