নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরে চাকুরির পেছনে না ছুটে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন আব্দুল মান্নান। দেশে আমিষের চাহিদা পূরণ ও বেকার মানুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আব্দুল মান্নান বিগত ২০১৭ সালে উপজেলার মালশন গ্রামের মালতিপুকুর নামক স্থানে ১৭ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন আমিন হাসান এগ্রো লি: নামে এক সমন্বিত খামার। এই খামারের প্রধান একটি অংশ হচ্ছে গাভী প্রতিপালন ও মোটাতাজাকরন। তার দেখাদেখি লাভজনক এই পশু পালনে ঝুঁকছেন অনেকেই। বর্তমানে মান্নানের খামারে ১২জন বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মান্নানের খামারে বর্তমানে গরু আছে ৪২টি। খামারের গরু থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪৫-৫০লিটার দুধ পাওয়া যায়। কিন্তু দুধের স্থানীয় কোন বাজার না থাকায় দুধ উৎপাদন করে মান্নানকে অনেকটা লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে গোয়ালাদের কাছে। যদি স্থানীয় ভাবে দুধের নির্দিষ্ট বাজার কিংবা বহুজাতিক কোম্পানি দুধ সংগ্রহ করতো তাহলে মান্নানের মতো খামারীদের দুধ উৎপাদন করে লোকসান গুনতে হতো না। বর্তমান খামারে উৎপাদিত দুধ দিয়ে নিজেদের চাহিদা পূরণের পর স্থানীয়দের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। বর্তমানে মান্নানের খামারে শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, ব্রাহমাসহ কয়েকজাতের গরু আছে। ইতোমেধ্যই মান্নানের দেখাদেখি ওই গ্রামসহ তার আশেপাশের গ্রামগুলোতে ছোট-বড় ১৬টি নতুন খামার তৈরি হয়েছে। ওই সব খামারে কেউ গাড়ল, কেউ গরু, কেউ ছাগল, কেউ মাছ আবার কেউ কেউ দেশী প্রজাতির হাঁস-মুরগি পালন করছেন।

খামারী আব্দুল মান্নান বলেন, আমার খামারটি মূলত সমন্বিত হওয়ার কারণে আমি একদিকের লাভ দিয়ে অন্যদিকটাকে সচল রাখার চেষ্টা করছি। বর্তমানে আমার খামারে ব্রাহমাজাতের ৩টি ষাঁড় বিক্রির উপযোগি হলেও বাজারে দাম না থাকায় তা বাজারজাত করতে পারছি না। এছাড়া দুধ বিক্রিতে তো লোকসান দিয়েই আসছি। তবুও খামারটি আমার স্বপ্ন হওয়ার কারণে সচল রাখা ও আরো সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করে আসছি। আমার খামারে আধুনিক পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক ও সুষম খাবার প্রদানের মাধ্যমে সম্পূর্ন হালাল উপায়ে গরু ও গরুর বাছুর লালন-পালন করা হয়। যদি সরকারের পক্ষ থেকে বড় ধরনের সহযোগিতা পাই তাহলে খামারটিকে আরো বড় করার ইচ্ছে আছে।

পার্শ্ববর্তী গিরিগ্রামের ছোট খামারী বুলবুল আহমেদ বলেন, মান্নান ভাইয়ের দেখাদেখি আমিও বাড়িতে কয়েকটি গরু পালন শুরু করেছি। তবে দিন দিন গো-খাদ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে আমরা খামারীরা লোকসানের মধ্যে রয়েছি। এছাড়া সরকারের প্রণোদনাও আমাদের ভাগ্যে জোটে না। যার কারণে বর্তমানে গরু মোটাতাজাকরন কিংবা লালন-পালন ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে অনেক ছোট খামারীরা খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, মান্নানের খামারটি একটি আদর্শ খামার। প্রাণি সম্পদের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা খামারী মান্নানকে প্রদান করার চেষ্টা করবো। যাতে করে খামারী মান্নান আরো উজ্জ্বিবিত হন এবং তার খামারে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের প্রাণিজও আমিষের চাহিদা পূরন হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মহির উদ্দীন বলেন, আমার দেখা মতে জেলায় যতগুলো খামার আছে তার মধ্যে মান্নানের সমন্বিত খামারটি একটি আদর্শ খামার। গ্রামের মধ্যে এমন একটি সমন্বিত খামার সত্যিই একটি দৃষ্টান্ত। আমার দপ্তরের লোকজন সব সময় খামারটিকে পর্যবেক্ষন করে আসছে। প্রাণি সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে খামারী মান্নানকে সব সময় সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

(বিএস/এসপি/নভেম্বর ২২, ২০২২)