বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দেওয়া সেই মিরাজ পেল জিপিএ-৫
গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিতে যাওয়া মাহিদুল হোসেন খান মিরাজ এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক্ লাগিয়ে দিয়েছে। মিরাজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তবে মিরাজের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার দেবগ্রামে। বর্তমানে মিরাজ তার মাকে নিয়ে জেলা শহরের কাউতলিতে বসবাস করছে।
অদম্য মেধাবী মিরাজের চলতি এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নেয়া মিরাজ পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার গৌরব অর্জন করায় এলাকাবাসিও বেশ খুশী হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, চলতি এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মিরাজের বাবা আখাউড়া উপজেলার গ্রিন ভ্যালি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মোতাহার হোসেন খান মারা যান। এরপর সারারাত বাবার মরদেহের পাশে বসে দোয়া-দরুদ পড়েছে মিরাজ। এ অবস্থায় পরদিন সকালে বাড়িতে বাবার লাশ রেখে মিরাজ গণিত পরীক্ষা দিতে জেলা শহরে যায় মিরাজ। ওইসময় তার মামা আরিফুল ইসলাম তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যান।
এলাকার লোকজন জানান, ওইদিন সকালে জেলা শহরের গভর্নমেন্ট মডেল গার্লস হাই স্কুল কেন্দ্রে গণিত পরীক্ষা দিয়ে দুপুরে বাড়িতে ফিরে। এরপর বিকেলে জানাজা শেষে বাবার লাশ দাফন করে মিরাজ।
মিরাজ কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, তার বাবা যেদিন মারা যান, সেদিন সকালেও বাবার সঙ্গে তার অনেক কথা হয়। মিরাজ জানায়, ওইদিন বাবার শেষ কথা ছিল ‘ভালো করে পরীক্ষা দাও মিরাজ, তোমাকে কিন্তু পরীক্ষায় ভালো করতেই হবে'। কথা বলার সময় বাবার ওইদিনের এসব স্মৃতিকথা মনে করে বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলো মিরাজ।
মিরাজের মামা নবীনগরের রতনপুর ইউপি কার্যালয়ের সচিব আরিফুল ইসলাম জানান, মিরাজদের বাড়ি আখাউড়ায় হলেও মিরাজ ও তার মা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাউতলিতে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। তবে মিরাজের বাবা থাকতেন আখাউড়ায়।
তিনি বলেন, কিন্তু মিরাজের এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে হঠাৎ করে যে দুলাভাই এভাবে মারা যাবেন, সেটি কেউ আমরা ভাবতে পারিনি।
মিরাজের মা তাসলিমা বেগম পরীক্ষায় ছেলের এই ভালো ফলাফল শোনার পর আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, মিরাজের বাবা আজ বেঁচে থাকলে ছেলের এই ফলাফল শুনে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে অনেক খুশী হতেন।'
বাবার মৃত্যুর পর পুত্র মিরাজকে নিয়ে সেসময় গণমাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিবেদন করা জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধি আবুল হাসনাত রাফি বলেন, 'মিরাজের বাবা মারা যাওয়ার পর বাড়িতে বাবার লাশ রেখে যে ছেলে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে, সেসময় মিরাজকে নিয়ে রিপোর্ট করার সময় সে যে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করবে, সেটি তখনই আমরা আঁচ করতে পেরেছিলাম।'
ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজমীন বলেন, 'পরীক্ষা চলাকালীন তার বাবার আকস্মিক মৃত্যুর খবরটি শুনে যতটা কষ্ট পেয়েছিলাম, পরীক্ষার পর আজ মিরাজের ভালো একটি রেজাল্ট দেখে ঠিক ততটায় খুশী হয়েছি। দোয়া করি, সে ভবিষ্যতে আরও ভালো করুক।'
(জিডি/এসপি/নভেম্বর ২৯, ২০২২)