মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের কালিহাতীর উপজেলার মসিন্দা চেঁচুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বাকপ্রতিবন্ধী ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন ৩.৫৬ পেয়ে মানবিক বিভাগ থেকে এবার এসএসসি পাস করেছে। সে উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের হতদরিদ্র নজরুল ইসলামের ছেলে। সে এলেঙ্গা কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়। তার সাফল্যে আনন্দিত স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠী এবং অভিভাবকরা। তবে তার এ বিজয় অন্যদের মতো সহজ ছিল না। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে প্রতিবন্ধকতার পরাজয় হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক রতন কুমার দত্ত বলেন, সাজ্জাদ হোসেন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে আমাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এরপর থেকে তাকে আমরা বিনাবেতনে পড়াই। শুধুমাত্র বোর্ড ফি দিয়ে ওকে এবার এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করে দেই। সাজ্জাদের বাবা একজন গরীব ভ্যানচালক। সাজ্জাদ সরকারি তালিকাভুক্ত একজন প্রতিবন্ধী। শত কষ্টের মাঝেও একজন প্রতিবন্ধী ছাত্র পাস করায় আমি খুব খুশি। ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।

সাজ্জাদ হোসেনের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, আমি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে দু' বছর ধরে বাড়িতে বেকার পড়ে আছি। আগে ভ্যান গাড়ি চালাতাম। কৃষিকাজ ও খড় কেনাবেচা করে সংসার চালাই। আমার দুই ছেলের মধ্যে বড় সাজ্জাদ। সে কথা বলতে পারে না। তারপরও পাস করায় আমি আনন্দিত। বর্তমানে পরিবার নিয়ে চলা আমাদের পক্ষে খুব কষ্টকর। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে আমাদের জন্য উপকার হতো।

কালিহাতী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা কবীর বলেন, মসিন্দা চেঁচুয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করা বাক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা একজন ভ্যানচালক এবং দুর্ঘটনায় অসুস্থ অবস্থায় আছেন। সে যদি কালিহাতী উপজেলার যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চায়, সেক্ষেত্রে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের হুসেইন বলেন, একজন প্রতিবন্ধী ছাত্রের এসএসসি পাস সত্যি ভালো বিষয়। সে লেখাপড়া করে কর্মজীবনে প্রবেশ করে সমাজের মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত থাকবে এটাই কামনা করি। সাজ্জাদ হোসেনের পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে তাকে যতদূর সম্ভব সাহায্য সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেবো।

টাঙ্গাইলের সরকারি মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুজ্জামান মিয়া বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের দৃঢ় মনোবল এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে প্রতিবন্ধকতা পরাজিত হয়ে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় তার এসএসসি পরীক্ষায় পাস করা সত্যি প্রশংসনীয় ও সম্মানের। তারা সমাজের বোঝা নয়। তাদের পাশে থেকে আমাদের সকলের উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। সমাজের মূল স্রোতের সাথে তাদেরকে অংশগ্রহণ করাতে হবে৷ তবেই দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে।

(এসএম/এসপি/নভেম্বর ৩০, ২০২২)