স্টাফ রিপোর্টার : প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িত রিটার্নিং অফিসারসহ ১৩৩ নির্বাচনী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যরা হলেন ১২৫ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহা, একজন নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া অনিয়ম হওয়া ১৪৫ নির্বাচনী কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টরা ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশের সিদ্ধান্তের কথা জানান সিইসি।

গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি এ সুপারিশের কথা উল্লেখ করেন। তবে, কোনো ধরনের অনিয়মে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়নি। এছাড়া কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরাসরি অনিয়মে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থার সুপারিশ আসেনি।

ইসি তার সুপারিশে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর বিধান মতে এ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

সিইসি জানান, দায়িত্বে অবহেলার জন্য রিটার্নিং অফিসার ইসির আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একজন প্রিসাইডিং অফিসারকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত, পাঁচ এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ, ১২৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ, এডিসি ও একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও ১৪৫ কেন্দ্রের নির্বাচনী এজেন্টদের ভোটে আর দায়িত্ব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিইসি তার সুপারিশে যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন তারা হলেন- ২ নম্বর কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরুণ কুমার, এসআই (গোবিন্দগঞ্জ থানা), ৫৪ নম্বর কেন্দ্রের মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, এসআই (গোবিন্দগঞ্জ থানা), ৫৯ নম্বর কেন্দ্রের মো. আনিছুর রহমান, এসআই (গোবিন্দগঞ্জ থানা), ৬২ নম্বর কেন্দ্রের কনক রঞ্জন বর্মন, এসআই (সাদুল্যাপুর থানা) ও ১০৫ নম্বর কেন্দ্রের মো. দুলাল হোসেন, এএসআই (আটোয়ারী থানা, পঞ্চগড়)। এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা তথা অসদাচারণের কারণে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করবে বলে উল্লেখ করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও ইসির সিদ্ধান্ত

১২৫টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন। তাদের নামের তালিকা সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী তাদের স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণকারী/নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে। নিয়ন্ত্রণকারী/নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দায়িত্বপালনে অবহেলা তথা অসদাচরণের কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করবে।

উদয়ন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও ৯৪নং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. সাইফুল ইসলামকে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫(৩) অনুযায়ী চাকরি থেকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্থ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে। সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এক মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুসারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অসদাচরণের জন্য ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করার জন্য বলা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সহকারী কমিশনারের নাম জেনে (তদন্ত প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ নেই) তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ পালনের বিষয়ে সতর্ক করে চিঠি দেবে।

রিটার্নিং অফিসার সাইফুল ইসলামের (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজশাহী) বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন।

এক মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে অবহিত না করলে কমিশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৬ (২) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

সব কেন্দ্রের দায়িত্বপালনকারী নির্বাচনী এজেন্টদের তালিকা প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক সিলকৃত ব্যাগে রয়েছে। যেহেতু নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই যেসব কেন্দ্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে সেসব কেন্দ্রের ব্যাগ খুলে দায়ী এজেন্টদের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এই তালিকা করবেন। দোষী নির্বাচনী এজেন্টদের পরবর্তী নির্বাচনে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না।

ভবিষ্যতে নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম করা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গাইবান্ধা-৫ আসনের পুনর্নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, পুনরায় ভোটের তারিখ আাগামী সপ্তাহে জানানো হবে। খুবই সংক্ষিপ্ত একটি সময় দেওয়া হবে। কবে ভোট হবে ও কারা দায়িত্বে থাকবেন তা জানানো হবে। সব প্রার্থী আগের মতোই থাকবেন।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০২২)