শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুর বিরলের সরিষা ক্ষেতের ভেতর থেকে উদ্ধারকৃত বিরল প্রজাতির ভয়ংকর বিষধর রাসেল ভাইপার সাপটি রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার বিকেলে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ ফরেস্টের বিট অফিস থেকে নিয়ে গেছে রাজশাহী বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের স্নেক রেস্কিউর সেন্টার। প্লাস্টিকের বস্তায় সংরক্ষিত সাপটি সেই সেন্টারের কর্মকর্তা মো. রিপন ইসলামের হাতে তুলে দেন,কালিয়াগঞ্জ ফরেস্টের বিট কর্মকর্তা মো. মহসীন আলী।

লালছে হলুদ রঙের প্রায় ৬ ফুট লম্বা এই বিরল প্রজাতি'র ভয়ংকর বিষধর রাসেল ভাইপার সাপটি গত বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেল আনুমানিক সোয়া ৫ টায় বিরল উপজেলার ৬ নং ভান্ডারা ইউনিয়নের তুলাই নদী'র রেংটার ব্রীজ সংলগ্ন একটি সরিষা ক্ষেতের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় বলে বিরল কালিয়াগঞ্জ ফরেস্টের বিট কর্মকর্তা মো.মহসীন আলী।

দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা ও জাতীয় উদ্যান রামসাগর দীঘির তত্ত্বাবোধায়ক মো.কামরুল হাসান জানান, প্রায় পাঁচ কেজি ওজনের সাপটিকে অজগর ভেবে প্রথমে দিনাজপুরের জাতীয় উদ্যান রামসাগরে রাখার চিন্তা-ভাবনা করা হলেও পরে জানা যায় এটি ভয়ংকর বিষধর রাসেল ভাইপার অর্থাৎ চন্দ্র বোড়া সাপ। তাই,এই ভয়ংকর সাপটি জাতীয় উদ্যান রামসাগর দীঘির মিনি চিড়িয়াখানায় না রেখে রাজশাহী বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের স্নেক রেস্কিউর সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে। সম্ভবত সাপটি ভারত থেকেই এসেছে। সাপটি উদ্ধার স্থানের এক থেকে দেড় কিলো মিটারের অদুরে ভারতী সীমান্ত রয়েছে।

রাজশাহী বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের স্নেক রেস্কিউর সেন্টারের কর্মকর্তা মো. রিপন ইসলাম জানান, বাংলাদেশে যেসব সাপ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বিষাক্ত। নিজে থেকে ছুটে এসে আক্রমণ করে এই বিষধর সাপটি। দাঁত অনেক গভীর ও সূঁচালো। বিষ প্রয়োগে সময় নেয় এক সেকেন্ডেরও কম। কোনো এন্টিভেনম নেই। সাপটির বিষক্রিয়ায় রক্ত জমা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণে অনেক দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মৃত্যু হয়।

অন্যান্য সাপ যেখানে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০টি ডিম পাড়ে, সেখানে এই সাপটি ডিম তো পাড়েই না বরং একসঙ্গে ৬০ থেকে ৮০টি বাচ্চা ফুটায়! বিশেষ করে নদীর অববাহিকায় এবং চর এলাকায় এখন এই সাপটির জন্য উপযুক্ত বংশবৃদ্ধির স্থান। এই প্রজাতির সাপের কামড়ের কিছুক্ষণ পরই দংশিত স্থানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। ব্যথার পাশাপাশি দংশিত স্থান দ্রুত ফুলে যায় এবং ঘণ্টা খানেকের মধ্যে দংশিত স্থানের কাছে শরীরের আরো কয়েকটি অংশ আলাদাভাবে ফুলে যায়। এই সাপের কামড়ে শরীরের দংশিত অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাত, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে।

সাপটির নাম রাসেল ভাইপার। বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে যেসব সাপ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বিষাক্ত। বাংলাদেশে শঙ্খিনী সাপ কমে যাওয়ায় রাসেল ভাইপারের প্রাকৃতিক প্রজনন বেড়ে গেছে। শঙ্খিনী সাপের মূল খাদ্যই ছিলো এই সাপটি।

(এস/এসপি/ডিসেম্বর ০২, ২০২২)