আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি প্রনোদনায় প্রদান করা ভর্তুকির কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন এখন কৃষকের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। সরকারের সাথে এসিআই কোম্পানীর চুক্তিতে অতিমূল্যর কারণ এবং কোম্পানীর মহাজনী সুদের চেয়েও চরা সুদ প্রদান করতে না পারায় কোম্পানীর মামলার হুমকীতে দিশেহারা ভুক্তভোগী চাষীদের পরিবার।

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের নাঘার গ্রামের স্বপন বল্লভের ছেলে ভুক্তভোগী কৃষক বাদল বল্লভ ও একই এলাকার যতীন্দ্র নাথ মুহুরীর ছেলে উত্তম মুহুরী জানায় তারা যৌথভাবে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে তারা ধান কাটা ও মাড়াই করার জন্য ২৯ লাখ টাকা মূল্যের এসিআই কোম্পানীর মাধ্যমে একটি কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন গ্রহণ করে। ওই মেশিনের মূল্য নির্ধারন করা হয় ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের ভর্তুকি রয়েছে ১৪ লাখ টাকা এবং বাকী ১৫ লাখ টাকার মধ্যে তারা ৫ লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান করে তারা। তবে তাদের প্রথমে জাপানী মেশিন দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে চায়না মেশিন দেয়া হয়। যার মূল্য বাজার মূল্যর চেয়ে অনেক বেশী বলেই তাদের ঘারে চাপিয়ে দিয়েছে এসিআই কোম্পানী।

ওই বছর বিভিন্ন এলাকার ধান কেটে ৩ লাখ টাকা কিস্তি পরিশোধ করে ভুক্তভোগী ওই কৃষকেরা। এরই মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন্যার পানি জমিতে জমায় ধান কাটতে না পারায় কিস্তি দিতে ব্যর্থ হয় ওই কৃষকেরা।

কিস্তি না দেয়ার কারণে চলতি বছরের ১৫মে এসিআই কোম্পানীর বরিশাল জোনাল অফিসের রিকভারী অফিসার মামুনুর রহমান কাউকে কিছু না বলেই কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন থেকে ইসিইউ নামের একটি যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যায়। ওই যন্ত্রটি খুলে নেওয়ার কারণে বর্তমানে মেশিনটি কোন রকমেই চালু করা সম্ভব নয়। এরপর থেকে মেশিনটি নাঘার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পরে থাকায় রোদ-বৃষ্টি ও ঝড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে এসিআই কোম্পানীর ওই রিকভারী অফিসার মামুনুর রহমান অন্যত্র বদলি হয়ে যায়। বর্তমানে মেশিনটি মেরামত করতে গেলে লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন হবে বলে জানান বাদল বল্লভ।

বাদল বল্লভ জানান, তারা মেশিন গ্রহনের সময় নগদ ৫ লাখ টাকা ও কিস্তিতে ৩ লাখ টাকাসহ মোট ৮লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। এসিআই কোম্পানীর বরিশাল জোনাল অফিসে তাদের কাছে ৭ লাখ টাকা পাওনা থাকলেও উল্টো তারা আরও ৯লাখ ৫৩হাজার টাকা তাদের পাওনা বলে দাবী করে আসছে। যা ২লাখ ৫৩হাজার টাকা বেশী দাবি করছে তারা। তাদের দাবিকৃত টাকা পরিশোধ না করলে ওই কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা করার অব্যাহত হুমকি দিয়ে আসছে তারা।

সরকারের ভর্তুকী মূল্যের কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিনটি উল্লেখিত দুই কৃষককে দেয়ার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি অফিসার দোলন চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বাদল বল্লভ ও উত্তম মুহুরীকে দেওয়া হলেও মেশিনের যন্ত্রাংশ খুলে নেওয়ার ঘটনাতাকে কেউ জানায়নি। বাদল ও উত্তম অফিসে আসলে তিনি এসিআই কোম্পানীর সাথে কথা বলে মেশিন মেরামতসহ সমস্যার সমাধান করবেন বলে জানান।

এসিআই কোম্পানীর বরিশাল জোনাল অফিসে গিয়ে রিজিওনাল অফিসার দিলকাতুর রহমান ও এরিয়া ম্যানেজার অরুণ কুমারের সাথে কথা বলেেত চাইলেও তারা এ ব্যপারে কোন বকতব্য দিতে রাজি হননি।

এসিআই কোম্পানীর বরিশাল জোনাল অফিসের রিকভারী অফিসার খোরশেদ আলম জানান, প্রধান কার্যালয় থেকে আমাদের বক্তব্য দিতে নিষেধ করা হয়েছে। যার কারনে আমরা কোন বক্তব্য দিতে রাজি নই। এরপরেও তিনি বলেন, মেশিন গ্রহণ করা কৃষক বাদল বল্লভ ও উত্তম মুহুরীকে বরিশাল অফিসে আসলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০২২)