শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে উত্তরের সীমান্ত জেলা দিনাজপুরে জেঁকে বসছে শীত। ক্রমান্বয়ে কমছে তাপমাত্র। সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত বেশি অনুভত হচ্ছে শীত। বাড়ছে,শীত জনিত রোগ। এতে নাজেহাল শিশুসহ বয়স্করা। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দিসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। দিনাজপুরের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা। হঠাৎ করে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন  হাসপাতালে দায়িত্বরত নার্স ও চিকিৎসক।

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দিনাজপুর জেলায় আগামী সপ্তাহে দু'টি মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আশংকা রয়েছে। তাপমাত্রা নেমে আসতে পারে ৮ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়া সহকারী আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, আগামীকাল শুক্রবার সন্ধায় বঙ্গোপসাগরে একটি লঘু নিন্মচাপ ঘুর্ণি ঝড়ে রূপ নিতে পারে। এতে কমতে পারে তাপমাত্রা।

তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার ( ০৮ ডিসেম্বর) জেলার সর্বোনিন্ম তাপমাত্রা ছিলো ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বুধবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দ্রুত কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা।

অন্যদিকে জেলায় শীতের প্রকোপ বাড়ায় নাজেহাল অসহায়,দরিদ্র তৃর্ণমুল মানুষের। শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, শিশুসহ বয়স্করা। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দিসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।জেলার হাসপাতাল গুলোতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, শীতজনিত রোগের কারণে ১ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী বেশির ভাগ শিশুই এখন জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়ারিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে (৮ ডিসেম্বর) দিনাজপুর ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি শয্যায় শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে অনেক শিশুকে। রোগীর চাপে নার্স ও চিকিৎসকরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

হাসপাতালের শিশু বিভাগে কর্মরত স্টাফ নার্স মোছা.শিউলি আক্তার জানালেন, এবার কোল্ড ডায়রিয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন কম বেশি ৪০-৫০টি শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।

তিনমাস বয়সী শিশু একটি শিশু নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মোমেনা খাতুন নামে এক নারী। কাহারোল উপজেলা থেকে আসা এই নারী জানান, তার নাতির কয়েক দিন ধরে সর্দি-কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। হঠাৎ অবস্থার অবনতি হওয়ায় বুধবাধ বিকেলে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। শীতের কারণে নিউমোনিয়া হয়েছে বলে চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন।

দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকাল অফিসার ডা. সোহেল রানা জানিয়েছেন,বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক শিশুকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে ২০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ জন। আজ বৃহস্পতিবার ( ০৮ ডিসেম্বর) শিশু রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৩ জন।

উত্তরের ঐতিহ্যবাহী দিনাজপুর অরবিন্দ শিশু হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক মো.শামীম কবির জানালেন,তাদের হাসপাতালে ক্রমাগত বাড়ছে শীত জনিত রোগির সংখ্যা।

দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. বোরহানুল ইসলাম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার ১৩টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগে তিন শতাধিক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে।

(এস/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০২২)