শিতাংশু গুহ


বিএনপির সমাবেশে হিন্দুধর্ম অবমাননা করে “হরে কৃষ্ণ হরে রাম, শেখ হাসিনা’র বাপে’র নাম” শ্লোগান দেয়া হয়েছে। এটি নুতন কিছু নয়, বাংলাদেশে প্রায়শ: এমন ঘটনা ঘটে, ওয়াজ মাহফিলে হিন্দু দেবদেবী’র চৌদ্ধগোষ্ঠী উদ্ধার করা হয়, এমনকি এক হুজুর দেবীদুর্গাকে বিয়ে করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন বা হুজুররা প্রকাশ্যে মূর্তিভাঙ্গার ফতোয়া দেন্। এসব চলছে দীর্ঘদিন, দেখার কেউ নেই, বিচারের প্রশ্নই উঠেনা। বাংলাদেশে হাজার হাজার মূর্তি ভাঙ্গা হয়েছে বা এখনো হচ্ছে, আজ পর্যন্ত একজনের বিচার হয়নি। এজন্যে ঠাট্টা করে বলা হয়, ‘মূর্তিভাঙ্গা দেখলে বোঝা যায়, দুর্গাপূজা এসে গেছে’। 

কলকাতার জনপ্রিয় ইউ-টিউব টিভি যা ‘আরামবাগ টিভি’ নামে সমধিক পরিচিত ঐ শ্লোগান সম্বলিত ভিডিও সবিস্তারে দেখিয়েছে। এই টিভি’র মালিক শফিকুল ইসলাম মনের দু:খে বলেছেন, কি আর বলবো, অদ্ভুত শ্লোগান, পাশের দেশের বিষয়, এই হলো রাজনীতি। এ টিভি’র লিঙ্কটি পাঠকের সুবিধার্থে দেয়া হলো:

https://www.facebook.com/timepassvlogs/videos/1250979699092166/?sfnsn=wiwspwa&mibextid=2Rb1fB

বাংলাদেশের কোন মিডিয়া এটি প্রকাশ করেছে বলে আমার জানা নেই, তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী রাগে-ক্ষোভে একটি ভিডিও করেছেন। এ রাগ শুধু তাঁর নয়, সকল হিন্দু’র। তাঁর ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, কয়েক লক্ষ ভিউ হয়েছে। ভিডিও’র লিঙ্ক দেয়া হলো:

https://fb.watch/hwlTwiEX_b/

আরো কেউ কেউ এনিয়ে ভিডিও করে থাকবেন, সেই প্রসঙ্গ টানলাম না?

একই ভিডিও-তে বেশকিছু আপত্তিকর শ্লোগান আছে, যেমন, ‘বাপ্ ছিলো কম্বল চোর, মেয়ে হলো ভোট চোর’ অথবা ‘ভারত যাদের মামার বাড়ি, বাংলা ছাড় তাড়াতাড়ি’ বা ‘চশমাওয়ালী বুবুজান, এমুহুর্তে ভারত যান’ ইত্যাদি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কম্বল চোর ছিলেন, একথা কেউ বলেনা, বরং তিনি বলেছিলেন, ‘আমার চারিদিকে চোর’ অথবা ‘আমার কম্বল গেলো কই’? এই চোরদের জ্বালায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, ‘আমাকে ছাড়া সবাইকে কেনা যায়’।

বাংলাদেশে ভোট চুরি শুরু হয়েছিলো, জিয়াউর রহমানের আমল থেকে, আমরা তখন কত রঙ্গের ভোট দেখেছি, ১শ’ শতাংশের বেশি ভোট পড়ার ইতিহাসও আছে? সেই জেনারেল জিয়ার আমল থেকে যেই ভোট চুরি শুরু, সেটি জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া হয়ে এখনো চলছে। শেখ হাসিনা ১৯৯১’র ভোটে সূক্ষ্ম চুরির অভিযোগ এনেছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ২০০১-এ তাকে জোড় করে হারানো হয়েছে, এসবই ভোট চুরির ইতিহাস। ২০১৪ ও ২০১৮ ভোট স্বচ্ছ হয়নি, তাও ঠিক? দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশে সুষ্ঠূ ভোট হওয়া দরকার।

যাঁরা ঐসব শ্লোগান দিচ্ছিলেন, তাঁদের সনাক্ত করা মোটেই কঠিন নয়, তাদের পেছনে একটি ব্যানার আছে, সরকার চাইলে তাঁদের বিচারে সোপর্দ করা যায়। প্রশ্ন হলো, সরকার ব্যবস্থা নেবেন কিনা? ২০০১’র ঘটনা এবং রামু থেকে কুমিল্লার ঘটনার বিচার হয়নি। একই সঙ্গে বিএনপি’র একটি দায়িত্ব আছে, এ বিষয়ে কথা বলার। এঘটনা’র জন্যে দল হিসাবে বিএনপি’কে হিন্দুদের কাছে ‘নি:শর্ত ক্ষমা’ চাইতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ-ধরণের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে!

মূল ভিডিও: https://fb.watch/hr5OHZWvA5/?mibextid=2Rb1fB

দেখা যাক, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? ১৯শে ডিসেম্বর ২০২২। [email protected];

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।