শিতাংশু গুহ


ঢাকাস্থ রাশিয়ান দূতাবাস বলেছে, গণতন্ত্র কিংবা অন্য কোনো অজুহাতে বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কারও হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে আলোচনায় পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

এ দু’টো সংবাদ যুগপৎ ভাল ও মন্দ? ভাল এজন্য যে রাশিয়ার বন্ধুত্ব বিশ্বাসযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার অবদান অনেক। মন্দ এ কারণে যে, ইউক্রেনে রাশিয়া-আমেরিকা ‘ছায়াযুদ্ধ’ চলছে, থামার লক্ষণ নেই। সদ্য ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন, সাজেদুল ইসলামের সুমনের বাসায় আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের যাওয়া ঠিক হয়নি।

গুজব যে, ভারত আগের মত উৎসাহী সমর্থন দিচ্ছেনা, আমেরিকা পক্ষে নেই, তাই বাংলাদেশ ঝুঁকছে রাশিয়া-চীনের দিকে। রাশিয়া ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু। প্রশ্ন হচ্ছে, আমেরিকা-রাশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ‘স্যান্ডউইচ’ হবেনা তো? দেশে এখন ‘আওয়ামী লীগ’ এবং ‘বিএনপি’ মুখোমুখি। ঢাকায় নুতন করে আমেরিকা-রাশিয়া বৈরিতা দেখতে হবে?

সমস্যার মূল ‘মায়ের কান্না’ এবং ‘মায়ের ডাক’? আগে মানুষ এদের নাম তেমন জানতো না, এখন জানে। এ দুই সংগঠনের পেছনে অনেক অশ্রু, অনেক কান্না জড়িত। এ সংগঠন দু’টো অরাজনৈতিক ছিলো, এবার এর রাজনীতিকরণ সম্পন্ন হয়েছে। এমনটা না হলেই ভালো হতো। মা-তো সবার, যেই মা’র সন্তান গেছে, ব্যাথা তো সেই মা জানে?

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হ্যাস গেলেন ‘মায়ের ডাক’-র বাসায়, সেখানে বাইরে ‘মায়ের কান্না’ গেলেন, সংগঠন দু’টো মুখোমুখি হয়ে গেলো? শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেখানে গেলেন কেন, অথবা তিনি তো ২১শে গ্রেনেড হামলার ভিকটিম, বা ‘মায়ের কান্না’র কারো বাসায় যাননি? এসব প্রশ্ন উঠতেই পারে, উত্তর দেবে কে?

মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিশ্চিত হাওয়া খেতে ‘সুমনের’ বাসায় যাননি, এটি হয়তো ‘কূটনৈতিক’ সিদ্ধান্ত, যা সরকারের বিরুদ্ধে এবং বিএনপি’র পক্ষে গেছে। তবু, কূটনৈতিক ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াও কূটনৈতিক হতে পারতো, হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য হতাশাব্যঞ্জক। সাংবাদিকদের সাথে তিনি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন, কূটনৈতিক নয়!

মিডিয়া হেডিং করেছে, রাষ্ট্রদূতের গাড়ি ঘেরাও! বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কূটনীতিকদের নিরাপত্তার প্রশ্ন তুললেন, স্মরণ করিয়ে দিলেন, রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্ণিকাট-র গাড়িবহর ভাংচুরের ঘটনা। বললেন, দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীন, এখন কূটনীতিকদের নিরাপত্তাও প্রশ্নবিদ্ধ। ৩৪জন নাগরিক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সমালোচনা করলেন।

‘মায়ের কান্না’ এবং ‘মায়ের ডাক’ ঘটনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, উত্তর দিতে কেউ বাধ্য নন। ‘মায়ের কান্না’ কোত্থেকে ঠিকানা পেলো সেই প্রশ্নেরও উত্তর নেই? খেলা হচ্ছে, খেলা হবে, ওয়ার্ল্ড কাপ’র মত খেলা যেন শান্তিপূর্ণ থাকে, জনগণ শান্তি চায়। জানুয়ারি ২০২৪-এ নির্বাচন, ২০২৩-এ দেশ শান্তিপূর্ণ থাকুক। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইস্যু শিগশিরি চাপা পড়ুক।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।