শিতাংশু গুহ


ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস বলেছে, গণতন্ত্র সুরক্ষা বা অন্য কোনো অজুহাতে বাংলাদেশসহ তৃতীয় কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে রাশিয়া বদ্ধপরিকর। এর পাল্টায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এক টুইটে এ বিষয়ে একটি প্রশ্ন তুলে বলেছে: ইউক্রেনের ক্ষেত্রে রাশিয়া এই নীতি প্রয়োগ করেছে কি না, অথবা এটা কি ইউক্রেনে মানা হয়েছে? 

বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ এখন গুরুত্ব বহন করে, এর জাজ্বল্য প্রমান ঢাকা বসে আমেরিকা-রাশিয়া দুই পরাশক্তি বাংলাদেশ নিয়ে বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি দিচ্ছে। এই দুই দেশ তাদের স্বার্থ দেখছে বা দেখবে, বাংলাদেশকে এর নিজের স্বার্থ দেখতে হবে। কেউ পক্ষে বললে হাততালি দেয়া বা বিপক্ষে বললে ‘উল্টাপাল্টা কথাবার্তা’ বলা রাষ্ট্রনীতি হওয়া উচিত নয়।

আমেরিকার বিরোধিতা করে বাংলাদেশ যেমনি লাভবান হবেনা, তেমনি রাশিয়াকে দূরে ঠেলে দেয়াটা সমীচীন হবেনা। দেশের স্বার্থে দুই পরাশক্তিকে ‘সমপরিমান’ ভালবাসতে হবে? অথবা সমান দুরুত্বে রাখতে হবে? এই দুই শক্তির মধ্যে ‘ঝগড়া’ লাগিয়ে বাংলাদেশের কোন লাভ নেই! অথবা এই দুই দেশ ‘কাইজ্যা’ লাগলে ‘হাততালি’ দেয়ার সুযোগ নেই!

বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে নাক গলানোর সুযোগ পায়, কারণ তাদের সেই সুযোগ করে দেয়া হয়? বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে বিদেশিরা কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত ছিলো, ফলাফল যাদের পক্ষে গেছে তারা খুশি হয়েছে, অন্যরা ‘ব্যথা’ পেয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে যে, দেশে সুষ্ঠূ নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি এবং ফলশ্রুতিতে নির্বাচনে জিততে বিদেশী সহযোগিতা অনিবার্য হয়ে পড়েছে?

কোন দল দেশে ‘গ্রহণযোগ্য’ একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কখনই আন্তরিক ছিলো না? বিদেশের সহায়তায় ক্ষমতায় এলে, তাঁরা নাক গলাবে-না, তা-কি হয়? দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যেমনি হয়না, তেমনি ক্ষমতা হস্তান্তরের স্থায়ী-শান্তিপূর্ণ কোন ব্যবস্থা নেই! সবাই ভাবে তারাই একমাত্র দেশপ্রেমিক, সুতরাং ক্ষমতায় থাকার অধিকার তাদের।

বিদেশিদের ‘নাক গলানোর’ আর একটি ক্ষেত্র হচ্ছে, ‘মানবাধিকার’! মানবাধিকার কি তা দেশে কতজন মানুষ বোঝেন কে-জানে? দেশে হত্যা, গুম, দুর্নীতি, লুটপাট কমবেশি সব-সময় ছিলো। বিচার বিভাগ নাজুক। নির্বাচন কমিশন তল্পিবাহক। মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত। পার্লামেন্ট ঠুঁটো জগন্নাথ। যতদিন এগুলো ঠিকমত না চলবে, ততদিন ‘নাক-গলানো’ থাকবে।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে ‘নাক-গলানো’ তেমনটা নেই, সুযোগ নেই! যেমন ঘরের পাশে ভারত, সেখানে বিচার বিভাগ, পার্লামেন্ট, নির্বাচন কমিশন, মিডিয়া এক্কেবারে স্বাধীন, জবাবদিহিতা সর্বত্র। পক্ষান্তরে পাকিস্তান, গণতন্ত্র নেই, তাই বিদেশী হস্তক্ষেপ বিদ্যমান। পৃথিবীর সবগুলো কল্যাণকর, উন্নত রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক। গণতন্ত্রের কোন বিকল্প নেই!

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।