ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : নীলফামারীতে জেঁকে বসেছে শীত। নীলফামারীতে ক্রমেই কমছে তাপমাত্রা। গোটা নীলফামারী ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে। প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হতে শুরু করছে গোটা নীলফামারী জুড়ে। কুয়াশার কারণে সকালেও আলো জ্বেলে চলছে যানবাহন।

আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসেই দেখা দেবে শৈত্যপ্রবাহ। এতে তাপমাত্রা আরও ৬ থেকে ৭ ডিগ্রি পর্যন্ত কমে যেতে পারে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জেলার মাধ্যমে সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রয়েছে। নীলফামারী জেলায় গত কয়েকদিন ধরেই ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। আগের দিন সন্ধ্যা থেকে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত এমনকি সন্ধ্যা পর্যন্ত কুয়াশা থাকছে। মাঝে মাঝে সূর্যের দেখা মিললেও প্রখরতা নেই। এই সময়টাতে লোকজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি কনকনে ঠান্ডাও জেঁকে বসতে শুরু করেছে পুরো জেলা জুড়ে। কৃষিজীবী নিম্ন আয়ের মানুষের কাজে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে।

সোমবার বেলা ১২ টায় সূর্যে দেখা মিললেও তা বেশিক্ষণ থাকেনি। দুপুরের মধ্যেই আবারো মেঘে ঢাকা পড়ছে। দুপুর ১২ টার পরেই সূর্যের দেখা মিলেছে, তবে প্রখরতা নেই। এ সময়টাতে সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে।

শহরের বড় বাজার এলাকার রাসেদ বলেন, প্রতিদিন সকালে ইজিবাইক নিয়ে বের হই। এই সময়ে ইজিবাইকের চলাচল কম হওয়ায় যাত্রী ভালো পাওয়া যায়। তবে গত কয়েকদিন ধরে সকালে যাত্রীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। শীতের কারণে মানুষজন বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। আমিও যে ইজিবাইক চালাচ্ছি তাতে প্রচণ্ড ঠান্ডায় হাত-পা জড়ো হয়ে যাচ্ছে।

উপজেলার উত্তর হাড়োয়া গ্রামের আনিসুর রহমান স্বপন বলেন, সকালে কিছু শাক বিক্রির জন্য সাইকেল নিয়ে বের হয়েছিলাম। সেগুলো বাজারে দিয়ে আসলাম। কিন্তু সকালে এমন অবস্থা যে সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে রাখতে পারছিলাম না। ঠান্ডায় হাত বরফ হয়ে যাচ্ছিল যেন।

শহরের সবুজ পাড়া এলাকার রফিকুল বলেন, এখন ধানের বীজ বপন করার সময়। মাঠে আলু রয়েছে। যদি এমনভাবে কুয়াশা হয় তাহলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে। এই সময়ে আমরা খুব ভয়ে থাকি। কয়েকদিন ধরেই ঘন কুয়াশা, তাই আলুতে বালাইনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে।

সদর উপজেলা টুপামারী শিমুলতলীর ভবেশ কুমার বলেন, এ শীতে কাজ-কাম হচ্ছে না। সকালে ঠান্ডার কারণে বের হওয়া যাচ্ছে না। এ সময়টা আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য একটু সমস্যাই বটে।

সৈয়দপুর উপজেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, দিন দিন তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা ছিল। এই তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমে যেতে পারে এবং এই মাসের শুরুতেই একটি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। এবং এই ঘন কুয়াশা চলমান থাকবে তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা কিছুটা কমতে পারে।

সোমবার (০২ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

জানা গেছে, তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় বেশি বিপাকে পড়েছেন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমরসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার চরাঞ্চলের মানুষজন। গরম কাপড়ের অভাবে তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেই কাজে বের হতে হচ্ছে শ্রমজীবীদের।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত নানা রোগ। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু। নীলফামারী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট শয্যার বিপরীতে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। বহির্বিভাগেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।

ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে উত্তরের জেলা নীলফামারীতে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নীলফামারীর জনজীবন।

আবহাওয়া অফিস সূত্রমতে, শুক্রবার সকাল ১০টায় নীলফামারী জেলার মধ্যে সর্বনিম্ন সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ছিল ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সন্ধ্যার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত কনকনে ঠাণ্ডা বিরাজ করছে এ জনপথে। বিঘ্ন ঘটেছে বিমান, ট্রেন ও বাস চলাচলে।

(ওকে/এসপি/জানুয়ারি ০২, ২০২৩)