স্টাফ রিপোর্টার : ‘আওয়ামী লীগ জ্ঞানী ব্যক্তিদের সম্মান দিতে জানে না’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. পিয়াস করিমের স্মরণসভায় যোগ দিয়ে বক্তারা বলেছেন, যে কারণে তার মরদেহ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনারে নিতে দেয়নি। তবে তিনি (পিয়াস করিম) যে অমর তা মরে গিয়ে প্রমাণ করেছেন। একদিন আওয়ামী লীগকে এর জবাব দিতে হবে।

শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে পিয়াস করিমের স্মরণসভা করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ। এতে তার সুহৃদ ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা বক্তব্য দেন।

বক্তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সম্পদ শহীদ মিনারকে দলীয়করণ করেছে। জনগণ এটা মানবে না। আওয়ামী লীগকে এর জন্য জবাব দিতে হবে।

বিশিষ্ট কলামিস্ট কবি ফরহাদ মজহার বলেন, সব শ্রেণী পেশা এবং ধর্মবর্ণ নির্বিশেষ সবাই যেন শ্রদ্ধা জানাতে পারেন সেজন্য আমরা পিয়াস করিমের মরহেদ শহীদ মিনারে নেয়ার চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু সরকার তার মরহেদের প্রতি অশ্রদ্ধা জানিয়েছে। এটা ইসলামেও ঘৃণিত। এরমাধ্যমে সরকার দেশের ৯০ভাগ মানুষের মনে আঘাত দিয়েছেন ।

পিয়াস করিমের মরহেদ শহীদ মিনারে নিতে না দেয়ার মাধ্যমে দেশের তথাকথিত প্রগতিবাদীরা শহীদ মিনারের ভাব মর্যাদাকে ধ্বংস করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ইবরাহীম বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের অনুমতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করিনি। তাদের অনুমতি নিয়ে মরতে হবে না। তাদের অনুমতি নিয়ে সত্য কথা বলতেও হবে না। পিয়াস করিম সত্য সব সময় সত্য কথা বলে গেছেন।

তিনি ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পিয়াস করিম ফ্যাসিবাদের চরিত্র প্রকাশের চেষ্টা করেছেনে। এটাই তার অপরাধ।

শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়ার অনুমতি না দেয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তার জায়গা হবে। কিন্তু এখন আর তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সকাল-বিকাল মিথ্যা কথা বলেন।

ঢাবির ভিসির সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল ন্যূনতম ভদ্রতার খাতিরে সহকর্মীর স্বামীর জানাজায় হয়তো তিনি যোগ দেবেন। কিন্তু তিনি আসেননি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক বলেন, একজন মানুষের মধ্যে যতগুলো মানবিক গুণাবলী থাকতে হয় পিয়াস করিমের মধ্যে তা ছিল। কিন্তু সেই ব্যক্তির মৃত্যুর পর সরকার তাকে সন্মান জানায়নি।

শহীদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত থেকে অন্যত্র হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার , প্রশাসন ও ঢাবি কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনারকে কলঙ্কিত করেছে। নির্দলীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দিয়ে একটা ট্রাস্ট গঠন করে তাদের হাতে শহীদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া উচিত।

বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট নয়জন ব্যক্তিকে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার সমালোচনা করে তিনি বলেন,যদি এই নয়জন এখানে আসতে না পারেন তাহলে আওয়ামী লীগের কোনো টাউট শহীদ মিনারে আসতে পারবে না।

বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান তার বক্তব্যে বলেন, আওয়ামী লীগ শহীদ মিনারকে অপবিত্র ও নোংরা করেছে। তাই কোনো ভদ্র মানুষের মৃত্যুর আগে ও পরে এখানে যাওয়া ঠিক হবে না।

শহীদ মিনার এখন আওয়ামী স্বৈরতন্ত্রের মিনারে পরিণত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন্নেসা তাহমীনা খাতুন বলেছেন, পিয়াস করিম একজন দেশপ্রেমিক ছিলেন। তিনি মরিয়া অমর হয়েছেন। কিন্তু সরকার তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেয়নি। সরকার একদিন এর শিক্ষা পাবে বলেও দাবি করেন তিনি।

বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংকীর্ণতায় বন্দী। শহীদ মিনার কারো দলীয় সম্পদ নয়, এটা জাতীয় সম্পদ। জাতি এই পবিত্র স্থান দলীয়করণ মেনে নেবে না।

আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

(ওএস/এটিআর/অক্টোবর ১৮, ২০১৪)