স্টাফ রিপোর্টার : কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরও এক ব্লক মাঝিকে (নেতাকে) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রবিবার (৮ জানুয়ারি) ভোর রাতে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিমে) অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা গুলি করে ওই মাঝিকে হত্যা করে। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী এ তথ্য জানিয়েছেন।

নিহত মোহাম্মদ সেলিম (৩৫) ওই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-ব্লকের আবদুস সোবহানের ছেলে। তিনি বি-ব্লকের রোহিঙ্গা উপ-মাঝি (নেতা) ছিলেন।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, সেলিমকে রবিবার ভোর রাতে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই সেলিম মারা যান। সকাল ১০টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। দুর্বৃত্তদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

রোহিঙ্গাদের দাবি, হামলাকারীরা মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্য। মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় তারা মাঝি মোহাম্মদ সেলিমসহ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, চার মাস ধরে উখিয়ার একাধিক ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ২৪ জন (রোহিঙ্গা) মারা গেছেন। এদের মধ্যে ১১ জন রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) ও ৫ জন আরসা সদস্য। অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।

বালুখালী ক্যাম্প-৮ এর এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ন্ত্রণ করে আড়াই হাজারের বেশি মাঝি ও সাব মাঝি। দুই হাজারের মতো মাঝি আরসাবিরোধী। মাঝিদের কেউ কেউ মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী নবী হোসেন গ্রুপের প্রধান নবী হোসেনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। এমন অভিযোগে আরসার সদস্যরা মাঝিদের হত্যার মিশনে নেমেছেন। প্রায় প্রতিদিন আরসা সদস্যরা ঘরে ঢুকে মাঝিদের অপহরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা সূত্র জানায়, শনিবার রাত আটটার দিকে উখিয়ার জামতলী ক্যাম্প-১৫ এর এ–ব্লকের হেড মাঝি রশিদ আহমদকে (৩৬) ঘরে ঢুকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, মুখোশধারীরা আরসার সদস্য।

অপরদিকে ৬ জানুয়ারি দুপুর দেড়টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প-৮ (পশ্চিম) এ আরসা সদস্যদের হামলায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন গ্রুপের মোহাম্মদ নবী (৪০) গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ওই আশ্রয় শিবিরের বি-৩৯ ব্লকের মোহাম্মদ হাশিমের ছেলে। এখন পুলিশের তত্ত্বাবধানে চলছে মোহাম্মদ নবীর চিকিৎসা।

পুলিশ জানায়, ওইদিন বিকেলে মোহাম্মদ নবীর বসতিতে অভিযান চালিয়ে অত্যাধুনিক একটি হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করে এপিবিএন। রোহিঙ্গা বসতিতে এ গ্রেনেড কীভাবে এলো, তা নিয়ে জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। এটি মিয়ানমারের তৈরি অত্যাধুনিক গ্রেনেড বলে জানিয়েছে বোম ডিসপোজাল দল। এভাবে একের পর এক রোহিঙ্গা মাঝিকে (নেতা) হত্যার ঘটনায় ক্যাম্প জুড়ে আতংক বিরাজ করছে।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ০৯, ২০২৩)