গৌরীপুর প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সরিষার হলদে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে কৃষকের ফসলের মাঠ। এমনই চোখ ধাঁধানো প্রকৃতির রূপ দেখা যায় গৌরীপুর উপজেলার চরাঞ্চলসহ পুরো উপজেলার ফসলের মাঠজুড়ে। যত দূর চোখ যায়, তত দূরেই দেখা যায় হলদে রঙের সরিষা ফুল। পৌষের কনকনে শীতেও মনে হচ্ছে প্রকৃতিতে বসন্তের ছোঁয়া। কুয়াশায় ধূসর প্রান্তরের মাঝেও দূর থেকে চোখে ভেসে উঠে সরিষার হলুদ মাঠ। এই হলদিয়া মাঠে এসেছে প্রজাপতি, মৌমাছি, পোকামাকড় থেকে শুরু করে পাখিরাও। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ও ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৩৬১ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা বাস্তবায়নে এবার কৃষি অফিস সরিষা আবাদ বাড়াতে প্রণোদনার মাধ্যমে ২১০০ কৃষককে বিনামূলে সরিষা বীজ ও সার দিয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে পতিত জমিতে সরিষা চাষ করেছেন।

উপজেলার ভবানীপুর, তাঁতকুড়া, গুঁজিখা, ধরুয়া, কলতাপাড়া, বোকাইনগর, ভাংনামারী সহ বিভিন্ন গ্রামে সরিষার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, নানা রঙের প্রজাপতিতে ভরে আছে সরিষার ক্ষেত। রঙ-বেরঙের প্রজাপতি ডানা ঝাপটানো হৃদয়ে জাগাবে নবতর আনন্দ। কোথাও ঝলক দিয়ে উঠছে কালো ডানায় হলুদ-লালের মিশ্রণ, নীল, সবুজ, লাল-নীলের ডোরাকাটা বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি। প্রজাপতিরা এখানে আসে বিশ্রাম নিতে। অনেক দূর উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ানোর পর সরিষার মাদকতা তাদের আকৃষ্ট করে।

গুজিখাঁ পশ্চিমপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ আঃ ছালাম, নবী হোসেন ও আব্দুল মান্নান জানান, আমন ধান কাটার পর কৃষি জমি অনেকটা অলস পড়ে থাকে। সেই ফাঁকা মাঠে সরিষা চাষ করে জমির উর্বরতা রক্ষার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
ধরুয়া গ্রামের কৃষক আঃ রাজ্জাক জানান, তিনি ৯০ শতাংশ জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। ভালো ফলনের আশা তার। সরিষার ফুল বিক্রি করে বেশ আয় হয়েছে বলে তিনি জানান।

সরিষার ঝাঁজালো ঘ্রাণে মুখরিত চারদিক। বেশির ভাগই ফুলে এই সময়ে গন্ধ থাকে না কেবল সরিষা ফুল ছাড়া। এ ঘ্রাণে ফুসফুসের উপকার হয়। এছাড়াও, সরিষার মাঠে হুমড়ি খেয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত বিভিন্ন গ্রাম থেকে শহুরে মানুষজন। ভ্রমর মধু খুঁজে ফিরছে এই ফুলে, মৌয়ালরা মৌমাছি চাষ করে এই মধু সংগ্রহ করছেন সরিষার মাঠে। চাষীরা ব্যস্ত সরিষা ফুল তুলতে।

উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার লিপি বলেন, আমাদের ভোজ্যতেলের চাহিদা ৪০% দেশে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। সরিষা আবাদ বাড়াতে প্রণোদনা কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। কৃষক যেন ভালো ফলন পায় সেলক্ষে কৃষি বিভাগের টিম মাঠে কাজ করছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ০৯, ২০২৩)