মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : দেশীয় নানা প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বৃহত্তম হাইল হাওর তীরে বিশাল এলাকাজুড়ে ব্যক্তিগত জমিতে সবুজ মিয়া নামে মালদ্বীপ ফেরত যুবক শীতকালিন সবজি চাষ করে পেয়েছেন ঈর্ষান্বিত সাফল্য। কৃষি বিভাগের কোনরূপ সহযোগিতা ছাড়াই মাত্র আড়াই একর কৃষি জমিতে গড়ে তুলেছেন লাউ, শষা, মিষ্টি লাউ, কচুর লতি, লালশাক, লাইশাক, টমেটোসহ নানা প্রজাতির শীতকালিন সবজি ক্ষেত। শুধু সবজি চাষই নয়, পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন দেশী-বিদেশী গরু-ছাগলের খামারও। সবজি চাষ আর খামার ঘিরে তাঁর যে আয় হয় তা প্রবাসের বেতনের প্রায় দিগুণ পরিমাণ অর্থ বলে জানান ওই কৃষি উদ্যেক্তা। 

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার চাবাগান, পাহাড় আর হাওর বেষ্টিত মির্জাপুর ইউনিয়নের কান্দিপাড়া গ্রামের যুবক সবুজ মিয়া ২০১৩ সালে ভাগ্য পরিবর্তনের সপ্ন নিয়ে পাড়ি জমান পর্যটন সমৃদ্ধ দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে। প্রথমে গিয়ে কম বেতনে চাকুরী করলেও খুব কম সময়ের মধ্যেই তিনি নিজের উপার্জিত টাকায় সেখানে গড়ে তুলেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ওই ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন প্রবাসে না থেকে উপার্জিত অর্থ দেশে বিনিয়োগের। ৯ বছরের প্রবাস জীবনের ইতি টেনে ২০২২ সালের শুরুর দিকে চলে আসেন দেশে।

দেশে এসেই প্রথমে শখের বসে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি বিদেশী প্রজাতির গাভি দিয়ে গড়ে তুলেছেন সবুজ মিয়া ডেইরী ফার্ম নামে গরুর খামার। খামারের বেশিরভাগ গাভি বার্মা ও শাহীওয়াল প্রজাতির। ওই খামার থেকে তাঁর এ পর্যন্ত আয় হয়েছে প্রায় পাঁচলক্ষ টাকারও বেশি। পাশাপাশি হাইল হাওরের তীরবর্তী নিজের পৃথক পৃথক ফসলী জমিতে শুরু করেছেন শীতকালিন সবজির চাষাবাদ। তিনি যে জমিতে লাউ চাষ করেছেন সেখানে দেখা যায় প্রতিটি ডগার মধ্যে ঝুলে রয়েছে বিশাল আকৃতির বড় বড় লাউ। ক্ষেতের প্রতিটি সাড়িতেই থরে থরে ঝুলানো রয়েছে শতশত লাউ। সাপ্তাহে দু’দিন গাড়িতে করে লাউ, মিষ্টি লাউ, লতি, লালশাক ও শসা নিয়ে যাওয়া হয় জেলা শহর মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গলসহ আশপাশের গ্রামীণ হাট গুলোতে।

ওই যুবকের ক্ষেত-খামার ঘিরে স্থানীয় বেশ কয়েকজন যুবকেরও হয়েছে কর্মসংস্থান। হাওর তীরে গড়ে তোলা শীতকালিন সবজি চাষাবাদের এই দৃশ্য আশপাশের প্রকৃতিকেও করেছে বেশ সমৃদ্ধ। হাওরের বিল গুলোর এক প্রান্তে জেলেরা ব্যস্ত মাছ ধরায় আর আরেক প্রান্তে সবুজ মিয়ার মতো অনেক কৃষক ব্যস্ত শীতকালিন নানা প্রকারের সবজি চাষাবাদে। এসব সবজি বিক্রি করে সবুজ মিয়ার মাসে আয় হয় অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো। শুধু সবুজ মিয়া নয়, হাইল হাওরের তীর ঘেঁষা পুরো কান্দিপারা গ্রামের বেশিরভাগ কৃষকই শীতকালিন সবজি চাষ করে আসছেন বহুকাল থেকে। এসব সবজি পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে দূরের হাটবাজারে বিক্রিও হয়।

সবুজ মিয়া জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই কৃষির উপর বেশ আগ্রহী। বর্তমানে তিনি শীতকালিন সবজি চাষ করে সফল। প্রবাসের উপার্জনের থেকেও সবজি চাষ অনেক লাভজনক।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন মুনালিসা সুইটি বলেন, গত ১০ বছরে কৃষিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে শীতকালিন সবজি চাষে এই অঞ্চলের কৃষকরা বেশ লাভমান হওয়ায় কৃষিতে অনেকের আগ্রহ বাড়ছে। তিনি বলেন, করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে অনেক প্রবাসী দেশে এসে কৃষি কাজ করে সফল ও লাভমান হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, হাওরপাড়ের কৃষক সবুজ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও বীজসহ সবধরণের সহযোগিতা করব।

(একে/এসপি/জানুয়ারি ১২, ২০২৩)