বাঁচানো গেল না অগ্নিদগ্ধ স্কুলছাত্রী ফারজানাকে
অমল তালুকদার, পাথরঘাটা : অবশেষে বাচানো গেল না আগুনে পোড়া স্কুলছাত্রী ফারজানাকে। পাথরঘাটার লাকুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল ফারজানা (৮)।
স্কুলগৃহ ও আশেপাশের কুড়ানো কাগজপত্র, ময়লা-আবর্জনায় দেয়া আগুন-ই কাল হল শিশু ফারজানার জীবনের জন্য। প্রধান শিক্ষক সালমা আক্তারসহ পরিবারের সদস্যরা ফারজানকে বাচাতে ঢাকা বার্ন ইউনিটে পৌছেও শেষরক্ষা হল না। শিক্ষকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে খেলতে গিয়ে আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয় শিশু ফারজানা।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের একটি পুরাতন ভবনের একপাশে কুড়ানো ওই ময়লা-আবর্জনায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছিল বলে জানা যায়। এসময় ওই আগুনেই শিশুটি অগ্নিদগ্ধ হয়।
স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য কর্মী ফয়সাল জানান, শিশুটির শরীরে আগুন জ্বলতে দেখে তিনি দ্রুত শিশুটিকে নিয়ে পুকুরে ঝাপ দেন। তাৎক্ষণিক ফারজানাকে নিয়ে যাওয়া হয় পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত ঢাকা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন।
প্রধান শিক্ষক সালমা আক্তার সহ স্বজনেরা ফারজানাকে বার্ন ইউনিটে পৌছুলেও বাচানো যায়নি তাকে। সোমবার মধ্যরাতে ঢাকা শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনন্সিটিউটের জরুরী বিভাগে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে ফারজানার।
শিশু ফারজানা পাথরঘাটার পুর্ব লাকুরতলা প্রাইমারী স্কুলের ২য় শ্রেনীর ছাত্রী ও লাকুরতলা গ্রামের ফারুকের দ্বিতীয় কন্যা।
চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে ফারজানার মা কলি বেগম সেখানে অবস্থান করছেন। শিশু ফারজানা তার বাবার সাথে দাদা বাড়িতে থাকে এবং ওই বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করে আসছিল সে ।
শিক্ষক সালমা আক্তার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ফারজানা দ্বিতীয় শ্রেণী শিক্ষার্থী। ছুটিশেষে ফারজানা বাড়িতে না গিয়ে স্কুল মাঠে খেলা করছিল। বারোটার ক্লাস শুরু হলে আমরা সকলে ক্লাসে প্রবেশ করি। পরে ডাক চিৎকার শুনে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিচে নেমে ফারজানায় গায়ে আগুন জ্বলতে দেখি।
উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টি এম শাহ্ আলম বলেন, অগ্নি দূর্ঘটনার পর শিশু শিক্ষার্থীর যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে প্রধান শিক্ষক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। আমিও তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাই। পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবিরও বার্ন ইউনিটে যান। তবে শিশুর শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় চিকিৎসক তাকে আর বাঁচাতে পারেনি।
এবিষয়ে এখন পর্যন্ত ফারজানার পরিবার কোনো ধরনের অভিযোগ দেননি বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ শাহআলম হাওলাদার।
এবিষয়ে কলি বেগমের চাচা ও ফারজানার এক নানা কামাল হোসেন সোনা মিয়া মুঠোফোনে বলেন, স্কুল ছুটির পরে ঘটনাটি ঘটেছে। কেউ দেখেনি কিভাবে আগুন লাগছে। আমরা কাকে এঘটনায় অহেতুক জড়াবো?
(এটি/এসপি/জানুয়ারি ১৭, ২০২৩)