আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে...। হ্যাঁ, এখন শিউলি বিছানো পথ। গাছ ভর্তি প্রিয় ফুলে। হাল্কাপাতলা গড়ন। এইটুকুন দেখতে, কিন্তু এর আশ্চর্য মিষ্টি ঘ্রাণ!

এই শরতে, কতশত ফুল ফুটে আছে। তবে শিউলির সত্যি কোন তুলনা হয় না।

সৌন্দর্যপ্রেমীদের ফুলটি দারুণ আকৃষ্ট করে রেখেছে। একে বলা হয় স্বর্গের শোভা। এ সুগন্ধি ফুল রাতে ফোটে আর সূর্যের স্পর্শ পাওয়ামাত্র অশ্র“বিন্দুর মতো ঝরে যায়।

পৌরাণিক কাহিনী মতে, শিউলি বেদনার প্রতীক। ব্যর্থ প্রেমের আলেখ্য। কোন সে ব্যর্থ প্রেম? বেদনার কেন? উত্তর আছে পুরাণে। গল্পটা এক রাজকন্যার। রাজকন্যার নাম পারিজাতিকা। তাঁর রূপে মুগ্ধ সবাই। আর তিনি মুগ্ধ সূর্যতে! সূর্যের প্রেমে পাগলপ্রায়। কিন্তু ভালবাসা থেকে গেল অধরাই। মন ভেঙ্গে খান খান হলো রাজকন্যার। দুঃখ সইতে না পেরে অবশেষে আত্মহত্যা করলেন তিনি। হিন্দু শাস্ত্র মেনে তাঁকে দাহ করা হয়। কিন্তু এই মৃত্যুতে শেষ হয় না সব! রাজকন্যার দেহভস্ম থেকে জন্ম নেয় একটি গাছ। সেই গাছে ফুল ফোটে। রাজকন্যার নামে রাখা ফুলের নাম-পারিজাতিকা। পারিজাত, পারিজাতা, পারিজাতাকা নামেও পরিচিত।

প্রচলিত অন্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছে শেফালি, শেফালিকা, নাইট ফ্লাওয়ার জেসমিন, হারসিঙ্গার, কোরাল জেসমিন, রাগাপুষ্প, খারাপাত্রাকা ও প্রজক্তা। তবে যে নামটি না বললেই নয় সেটি শিউলি। এই নামে ফুলটি এখন সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘নিক্টান্থেস আরবর-ট্রিসটিস।’ নামটিকে ভাঙলেও বেদনার সুর বেজে ওঠে।

কবি ও সাহিত্যিক শিকদার রেজাউল করিম জানান, লাতিন শব্দ ‘নিক্টান্থেস’ অর্থ সন্ধ্যায় ফোটা। ‘আরবর-ট্রিসটিস’ হচ্ছে বিষন্ন গাছ। চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য নিয়ে সন্ধ্যায় ফোটা এবং সকাল হতেই ঝরে যায় বলে এমন নামকরণ। একই কারণে শিউলিকে বলা হয় ‘ট্রি অব সরো।’ প্রিয় ফুলের ছয়টি শুভ্র সাদা পাপড়ি। বৃন্তটি দেখতে কমলা রঙের টিউবের মতো। গাছ সাদামাটা ধরনের। নরম ধূসর ছালবিশিষ্ট। শিউলি ফুলের গাছটি সাধারনত ১০ মিটারের মতো উঁচু হয়। গাছের পাতা ৬ থেকে ৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও সমান্তরাল প্রান্তের বিপরীতমুখী সাজানো থাকে।

দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে শুরু করে ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে শিউলি ফুটে। শুধু তাই নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গ ও থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের রাষ্ট্রীয় ফুল। বাংলাদেশের গ্রাম-শহর সবখানেই রয়েছে শিউলি গাছ। অনেকের বাসার সামনে-ছাদে শিউলি গাছ দেখা যায়।

কাজী নজরুল ইসলাম হয়তো মালা গাথা, শিউলী কুড়ানো দেখেই লিখেছিলেন- শিউলি তলায় ভোরবেলায় কুসুম কুড়ায় পল্লী-বালা...।

তবে শুধু খোঁপায় মালা হয়ে থাকা নয়, শিউলির রয়েছে বহুবিদ গুণাগুণও। যেমন-হলুদ রং তৈরিতে এর ব্যবহার জরুরী। বোঁটা শুকিয়ে গুঁড়ো করে হাল্কা গরম পানিতে মেশালেও তৈরি হয় চমৎকার রং। এছাড়া বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতেও শিউলির বীজ, পাতা ও ফুল ব্যবহার করা হয়।

(টিবি/এএস/অক্টোবর ১৯, ২০১৪)