মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে সূর্যের হাসি ক্লিনিকে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মের পরদিনই নিপা বেগম (২৪) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের দাবি চিকিৎসকের অবহেলায় তাঁর মৃত্যু হয়। এঘটনায় উত্তেজিত স্বজনরা ওই হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুরও করেছেন।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে শহরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বড়হাট এলাকার সূর্যের হাসি ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই গৃহবধু মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের হিলালপুর গ্রামের ইছাক মিয়ার মেয়ে ও কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের সিদ্ধেস্বরপুর গ্রামের ওমান প্রবাসী শামিম মিয়ার স্ত্রী। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,নিপা বেগম সন্তান সম্ভাবা হওয়ায় প্রসবব্যাথা নিয়ে সোমবার বিকেল ৫টার দিকে সূর্যের হাসি ক্লিনিকে ভর্তি হন। ভর্তির পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই হাসপাতালের দ্বায়িত্বরত গাইনী চিকিৎসকের অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। অস্ত্রপাচারের পর অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থেকে রুগীকে নিয়ে যাওয়া নির্ধারিত কক্ষে। তখনো অবস্থা ছিলো অনেকটা স্বাভাবিক। পরদিন মঙ্গলবার দুপুরের দিকে শরীরে তীব্র ব্যথা শুরু হলে পড়ে যান বেড থেকে। এক পর্যায়ে মুখ দিয়ে ফেনা বের হওয়া শুরু হলে তাৎক্ষণিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে সিলেটে রেফার্ড করেন। এর পর পথেই মৃত্যু হয় ওই গৃহবধুর। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হন স্বজনরা। এসময় তারা ভুল চিকিৎসার অভিযোগে উত্তেজিত হয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। খবর পেয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মশিউর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসময় হাসপাতালের অন্যান্য কক্ষে অবস্থান করা রুগীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ভয়ে পালিয়ে যান হাসপাতালের দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তারাও।

ঘটনার পর থেকে ওই হাসপাতালের কারো দেখা না পেলেও কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দেখা মিলে শামিমা আক্তার নামে এক সেবিকার। তিনি জানান,রাতে অপারেশনের পর রোগীর রক্ত চেক করা হয়েছে এবং সকালের নাস্তাও তিনি সম্পন্ন করেছেন। তখনো তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তবে দুপুরের দিকে বøাড প্রেশার বেড়ে গেলে রোগীকে রেফার্ড করা হয়। বøাড প্রেসার বেড়ে গেলেই কী রোগী রেফার্ড করতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,এব্যাপারে তাঁর কিছু জানা নেই কারণ অপারেশনের সময় তিনি সেখানে ছিলেন না।

নিহত নিপা বেগমের স্বামী ওমান প্রবাসী শামিম মিয়া জানান, আমাদের রক্তের জন্য বলা হলে আমরা রক্ত প্রস্তুত রাখি। পরবর্তীতে অপারেশনের সময় বারবার বলা হলেও তারা রক্তের বিষয়ে কোন কর্ণপাত করেননি। মঙ্গলবার সকালে তীব্র ব্যথা শুরু হলে বেড থেকে পড়ে যান আমার স্ত্রী। এর পর মুখ দিয়ে ফেঁনা বেড় হওয়া শুরু হলে কর্তৃপক্ষ সিলেট রেফার্ড করেন। আমরা দ্রæত এম্বুল্যান্সে করে দুপুর ১২টার দিকে সিলেটের নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা বলেন,রোগী তো আগেই মারা গেছেন অপনার কেন নিয়ে এসেছেন। তিনি দাবি করে বলেন,রক্ত শুন্যতা আর চিকিৎসা অবহেলায় তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এঘটনার সঠিক তদন্তও চান তিনি। এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

মৌলভীবাজার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মশিউর রহমান জানান, এ বিষয়ে নিহতের স্বামী অভিযোগ দিয়েছেন, তবে বিষয়টি সিভিল সার্জন তদন্ত করে দেখবেন। এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা: চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ ছুটিতে থাকায় কথা হয় দ্বায়িত্বে থাকা ডা: বর্ণালী দাস এর সাথে,তিনি জানান,বিষয়টি জানা নেই তবে দ্রæত খোঁজ নিয়ে সিভিল সার্জন মহোদয়কে জানাচ্ছি।

(একে/এএস/জানুয়ারি ১৮, ২০২৩)