মোহাম্মদ ইলিয়াছ


ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পর এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের ইশতেহারে বিষয়টি গুরুত্ব দেবে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে সেই আভাস মিলেছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্তম্ভ হবে চারটি। যথা: স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়াই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে ছাত্রসমাজ।

স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তরুণদের উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও গবেষণায় গুরুত্ব দিতে পারে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্তম্ভ চারটি বাস্তবায়নে সরকারের সহযোগী হিসেবে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সম্মুখে থেকে কাজ করতে হবে। ঐতিহাসিক জায়গায় ছাত্রলীগের গৌরবময় অতীত এমনটি সাক্ষ্য দেয়। সে ক্ষেত্রে সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সহজ হবে।

বাংলাদেশ ভূখণ্ডের জন্মের সঙ্গে মিশে আছে ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষক সমাজের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ৬ দফা ও ১১ দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনসহ প্রতিটি ঐতিহাসিক বিজয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি ও আন্দোলন সফল করায় তৎকালীন শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।­­­ বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অনিবার্য ধারায় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ বাংলাদেশ ছাত্রসমাজ।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। নূরে আলম সিদ্দিকী, তোফায়েল আহমেদসহ তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।

জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ ও যুক্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের মধ্য দিয়ে লাল-সবুজের পতাকা আমরা পেয়েছি, যাতে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ একটি দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশ অনেক দূর পিছিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন থেমে থাকেনি। ছাত্রলীগ প্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে রাজপথে মিছিল করে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে ছাত্রলীগ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা প্রশংসনীয়। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুদ্ধাপরাধমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।

পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে, সময়ের প্রয়োজনে জন্ম নিয়েছে অনেক সংগঠন। অতঃপর এগিয়ে নিয়ে গেছে সময়কে। মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, “The Students are the future leaders of the country who could fulfill country’s hopes being capable.” উপমহাদেশীয় রাজনীতির অঙ্গনের একটা বড় জায়গা দখল করে আছে ছাত্ররা। এ অঞ্চলের বড় বড় আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রামগুলো পরিচালনা করেছে মূলত ছাত্ররাই। যখনই কোনো অন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে; তখনই দেশ ও জাতির স্বার্থে ছাত্ররাই প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ গঠনের পেছনে সর্বাধিক ভূমিকা রেখেছে এ দেশের ছাত্ররাই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতিবাদ ভাষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, সর্বোপরি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ। ইতিহাস বলে, দেশের সব আন্দোলন সংগ্রামে সময়ের প্রয়োজনে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। অধিকার আদায়ে রাজপথে সোচ্চার থেকেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বছরের পর বছর লড়াই-সংগ্রামের আগুনে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির পিতা, বাঙালি জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া সংগঠন, তার জীবন ও যৌবনের উত্তাপে শুদ্ধ সংগঠন, তার সোনার বাংলা বিনির্মাণের কর্মী গড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুণাবলির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতিক্রম করেছে পথচলার ৭৫ বছর। জন্মলগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের ছয় দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

পরিশেষে বলতে চাই, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরের লক্ষে ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মী রাজপথে সাহসী ভূমিকা রেখে চলেছেন, যা প্রশংসনীয়। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু হবে। সেখানে নাগরিকরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবেন। এর মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতি পরিচালিত হবে। সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যেই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে।

বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে তরুণ প্রজন্মকে অগ্রসৈনিক হিসেবে ২০৪১ সালের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত হতে হবে। সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এমনটি বিশ্বাস রাখি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ছাত্রলীগ ইতিহাসে সমৃদ্ধ রবে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে তার গৌরবময় অবদানে। জাতির পিতার আদর্শে বলিয়ান হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে ছাত্র সমাজের যে ভূমিকা তা আগামীতে আরও বাড়বে। ৭১-এর শহীদদের রক্তের সঙ্গে যারা বেঈমানি করছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করবে ছাত্রলীগ।”

আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। এ জন্য প্রয়োজন স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া পূরণসহ স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গঠনেও অবদান রাখবে ছাত্রসমাজ। স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের দোসর হয়ে তাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে, শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে, যারা রাজনীতি করার লাইসেন্স নিয়ে সন্ত্রাসী, খুনি, দুর্নীতিবাজ, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে। বাংলার মাটিতে তাদের জায়গা হবে না। আমরা নিশ্চিত করতে পারি, গণশত্রুদের মুখোশ যদি আমরা উন্মোচন করতে পারি এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ছাত্র সমাজকে সংঘবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিজয় নিশ্চিত করতে পারব।”

বর্তমান প্রজন্ম প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের জেনারেশন। তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে চাই। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে ছাত্রলীগ কাজ করে যাবে।”

সৃষ্টির শুরু থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলার ছাত্র সমাজকে নিয়ে কাজ করেছে যাচ্ছে এবং সকল যৌক্তিক আন্দোলন সংগ্রামে সফলতা লাভ করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সিটিজেন গড়ার ক্ষেত্রে যে দক্ষ ছাত্রসমাজ এবং ছাত্রবান্ধব শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার সে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ার ক্ষেত্রে এবং শেখ হাসিনার এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতীতের ন্যায় তার গৌরবোজ্জ্বল ধারা অব্যাহত রাখবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সর্ব প্রধান অগ্রসৈনিক হিসেবে কাজ করবে ছাত্রসমাজ।

পরিশেষে বলতে চাই, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরের লক্ষে ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মী রাজপথে সাহসী ভূমিকা রেখে চলেছেন, যা প্রশংসনীয়। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু হবে। সেখানে নাগরিকরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবেন। এর মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতি পরিচালিত হবে। সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যেই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে।

বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে তরুণ প্রজন্মকে অগ্রসৈনিক হিসেবে ২০৪১ সালের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত হতে হবে। সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ তরুণ ছাত্রসমাজ এমনটি বিশ্বাস রাখি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ছাত্রসমাজ ইতিহাসে সমৃদ্ধ রবে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে তার গৌরবময় অবদানে।

লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।