অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের শৈলকূপায় ঋণগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আর এই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে সুদি মহাজনদের চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকে। সুদি মহাজনদের ঋনের ফাঁদে শুধু নিম্নবিত্ত নয়,নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরাও আটকা পড়ে যাচ্ছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঋনের টাকা শোধ করতে না পেরে সুদি মহাজনদের চাপে উপজেলার দহকুলা গ্রামের ফার্মেসী ব্যবসায়ী ইতাহার আলী,গাড়াগঞ্জের ব্যবসায়ী আরজু মিয়া,ফুলহরি গ্রামের বিদ্যুৎ চৌধুরী ও মঙ্গল কুণ্ডু,চর মালিথিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বিষ্ণুপদ দাস ও মালিথিয়া গ্রামের তন্ময় মন্ডল আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এছাড়াও নাম না জানা অনেকেই আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে।

নিহতদের পরিবার সুত্রে জানা যায়,সুদি মহাজনেরা টাকা দেওয়ার সময় খুব ভাল ব্যবহার করে। পরবর্তীতে তারা কৌশলে আসল আর সুদ একসাথে মিলিয়ে টাকা ধার হিসাবে ষ্ট্যাম্পে লিখে নেয়। কখনো কখনো ব্যাংকের ব্ল্যাঙ্ক চেকও নিয়ে থাকে। ফলে সুদি মহাজনদের বিরুদ্ধে কিছু করার থাকে না। পরে ঋনের টাকা শোধ করতে না পারলে মামলা করে। এতে করে লোক লজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।

স্থানীয়দের দাবি, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র সমবায় সমিতি গড়ে তুলে সুদের রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে অসাধু ব্যক্তি ও কতিপয় প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে তথা সুদি মহাজনদের দৌরাত্ম্যও চোখে পড়ার মতো। এসব বিষয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তা না করা হলে এভাবেই একের পর প্রাণ ঝরে যাবে সুদ ও ঋণের বেড়াজালে।

ঝিনাইদহ সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন জানান, শৈলকূপা জনপদে নাম সর্বস্ব কিছু এনজিও এবং সুদি মহাজনেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরা এক লাখ টাকার বিপরীতে অনেক সময় সুদ হিসাবে সপ্তাহে ৮ থেকে ১০হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। এতে করে অনেকে তাদের আসল টাকা তো দুরে থাক সুদের টাকায় পরিশোধ করতে পারে না। সুদি মহাজনেরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথাও বলতে পারে না। তাদের চাপে এক পর্যায়ে বাপদাদার ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় নতুবা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। প্রশাসনের উচিত সুদি মহাজনদের লাগাম টেনে ধরা।

শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান,সুদি মহাজনদের পর্যায়ক্রমে তালিকা করা হচ্ছে এবং এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(একে/এএস/জানুয়ারি ২৩, ২০২৩)